Ajker Patrika

আচার বিক্রি করে লাখোপতি রুনা

রিক্তা রিচি, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২২, ১২: ৪৮
আচার বিক্রি করে লাখোপতি রুনা

‘কুড়িতে বুড়ি’ কিংবা ‘বিয়ের পরে বাচ্চা নিয়ে জীবন কাটাও’ এসব গল্প ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে আমাদের দেশে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট ছড়িয়ে যাওয়ার পর নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার হার দিন দিন বাড়ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্প একসময় ছিল শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি ও ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করার প্রায় পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা সফল নারীদের দেখা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেশ দক্ষতার সঙ্গে তাঁরা করে চলেছেন নিজেদের পছন্দের কাজ। ঢাকার বাইরের তেমনই একজন সফল উদ্যোক্তা রুনা আহ্‌মাদ।

নোনা ইলিশ, নাগা মরিচ, রসুন, কালিজিরা, করমচা, আপেল, গরুর মাংসের আচারসহ প্রায় ৩০ রকমের মুখরোচক আচার তৈরি ও বিক্রি করছেন রুনা আহ্‌মাদ। সংসার ও সন্তান সামলে অনলাইনে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। তাঁর এ পথে এসেছে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই। তবুও হার না মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বসে রুনা আহ্‌মাদ প্রায় ৩০ রকমের আচার তৈরি ও বিক্রির কাজ করে চলেছেন। এ ছাড়া তিনি তৈরি করেন ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, শনপাপড়িসহ মজাদার দেশীয় অনেক খাবার।

আচার-১উদ্যোক্তা হওয়ার আগে একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করতেন রুনা আহ্‌মাদ। একসময় তাঁর জন্য সংসার, সন্তান ও চাকরি একসঙ্গে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু মনের ভেতর ‘নিজে কিছু একটা’ করার ভাবনা তিনি ছাড়েননি। সেই ভাবনাকে নিজের মধ্যে শুধু লালনই করেননি। বড় করেও তোলেন ধীরে ধীরে। প্রায় চার বছর আগে তিনি ‘হোমমেড দেশি পণ্য’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে নিজের তৈরি করা আচারের প্রচারণা শুরু করেন। তবে শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত আরও কিছু সমস্যার কারণে তা স্থগিত রাখতে হয় কিছুদিন। করোনাকালে যখন সবাই ঘরবন্দী ছিল, তখন রুনা আহ্‌মাদ পুনরায় কাজে মনোযোগী হন। ২০২০ সালের ৮ মে থেকে আবার কাজ শুরু করেন তিনি। শুরুর দিকে পুঁজি ছিল মাত্র ৮০০ টাকা। এই ৮০০ টাকার সঙ্গে  মেধা, শ্রম ও মনোবল বাড়তি বিনিয়োগ ছিল বলে মনে করেন রুনা। 
ফেসবুকের ই-কমার্স গ্রুপ ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স’-এর একজন সক্রিয় সদস্য রুনা আহ্‌মাদ। এখানে যুক্ত হওয়ার পর নিজেকে আরও ঝালিয়ে নিতে অনলাইন আড্ডা, ওয়ার্কশপ ও মাস্টার ক্লাসের মতো অনলাইন ইভেন্টগুলোতে সক্রিয় অংশ নিতেন তিনি। কয়েক মাসেই তাঁর জীবন পাল্টে যায়। মাত্র তিন মাসে তিনি অনলাইনে আচার বিক্রি করে আয় করেন এক লাখ টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

‘নারীদের জীবন শুধু ঘর-সংসার করে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। তাঁদের আরও কিছু করার আছে। ঘরের বাইরে গিয়েই শুধু কাজ করা যায়, এ ধারণাটাও ঠিক নয়। ঘরে থেকেও নিজেকে স্বাবলম্বী করার সুযোগ আছে।’ 

রুনা আহ্‌মাদ, ই-কমার্স এক্সপ্রেস, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা

রুনা আহ্‌মাদ জানান, প্রতিবন্ধকতা বলতে যা বোঝায়, পরিবার থেকে তেমন প্রতিবন্ধকতা আসেনি। তাঁর স্বামী আহ্‌মাদ স্বাধীন সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন সব সময়। তবে শুরুতে প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে কিছু কটাক্ষ ও অসহযোগিতামূলক আচরণ পেয়েছেন রুনা। কিন্তু কাজের প্রতি তাঁর মনোযোগ ও ভালোবাসা দেখে সবাই ধীরে ধীরে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।

আচার-৩২০২০ সালে নিজের পাশাপাশি অন্য নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য ই-কমার্স এক্সপ্রেস বাংলাদেশ নামে একটা ই-কমার্স গ্রুপ তৈরি করেন রুনা আহ্‌মাদ। সেখানে এখন প্রায় ৩ হাজার ৬০০ নারী উদ্যোক্তা নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রুনা আহ্‌মাদ। তাঁর লক্ষ্য ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটা এক লাখে পরিণত করা।

রুনা আহ্‌মাদ মনে করেন, প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সবকিছুই অনেক সহজ। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা, শ্রম ও মেধার প্রয়োগ। তাহলেই নারীরা একটি স্বকীয় পরিচিতি ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাবেন। সেই সঙ্গে দেশ ও সমাজের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক পথ তৈরিতে তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করতে পারবেন। ইতিমধ্যে রুনা আহ্‌মাদ তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ‘উই’ গ্রুপ থেকে লাখোপতি নারী উদ্যোক্তার সম্মাননা। পেয়েছেন ‘নারায়ণগঞ্জ ফুড ফেস্টিভ্যাল-২১’-এর সেরা আচার প্রস্তুতকারক সম্মাননা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত