Ajker Patrika

প্রতি দলিলে ১২০০ টাকা ঘুষ!

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩৮
Thumbnail image

বদরগঞ্জের সাবরেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান কাজীর বিরুদ্ধে প্রতি দলিল সম্পাদনে ১ হাজার ২০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা না দিলে তিনি নানাভাবে হয়রানি করেন।

সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মিজানুর রহমান সরাসরি দলিল গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ নেন না। তাঁর নামে দলিল লেখকেরা দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে ওই টাকা নেন। আবার সাবরেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের কাছ থেকে সেই টাকা তোলার জন্য নকল নবিশ আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আনোয়ার দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দলিল লেখকদের কাছে ঘুরে ঘুরে টাকা তোলেন।

শাহাপুর গ্রামের কৃষক আয়নাল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে সাবরেজিস্ট্রার সরাসরি ঘুষ নেন না। দলিল লেখার সময় দলিল লেখক সাবরেজিস্ট্রারের নামে ১ হাজার ২০০ টাকা নেন। টাকা না দিলে কোনো দলিল লেখক দলিল লিখেন না। সম্প্রতি চারটা দলিল করতে আমাকে অনেক টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।’

হাসিনুর জামান নামে এক দলিল গ্রহীতা বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি অফিসার সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করেন। আর সাবরেজিস্ট্রার দলিল করলে টাকা পান, এ কারণে তিনি রাত ৮টা পর্যন্ত অফিস করেন।’

নাম প্রকাশ না করে এক দলিল লেখক জানান, সাবরেজিস্ট্রার সপ্তাহে তিন দিন মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দলিল সম্পাদন করেন। এই তিন দিনে দলিল করা হয় ৩০০ থেকে ৩৫০টি। এতে সপ্তাহে তিন লাখেরও বেশি টাকা ঘুষ পান সাবরেজিস্ট্রার। তিনি নকল নবিশ আনোয়ারের মাধ্যমে ওই টাকা নেন।

দলিল লেখক সমিতির সাবেক এক নেতা বলেন, ‘কাগজপত্র সব ঠিক থাকার পরও দলিল লেখককে অন্যের মাধ্যমে টাকা দিতে হয় সাবরেজিস্ট্রারকে। টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করেন তিনি। দলিল সম্পাদন শেষে একজন মোহবার লিখে রাখেন দলিল লেখকদের কে কয়টা দলিল করেছেন। পরে সেই তালিকা হাতে নিয়ে কালেকশনে নামেন নকল নবিশ আনোয়ার। তিনি কখনো বালাম বই লিখেন না।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নকল নবিশ আনোয়ার একটি তালিকা হাতে নিয়ে দলিল লেখকদের কাছে ঘুরে ঘুরে টাকা তুলছেন। এ প্রতিবেদক এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে গেলে তিনি সটকে পড়েন। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, ‘আমি কোনো কথা বলব না। যদি কিছু জানার থাকে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে পারেন।’

গতকাল মঙ্গলবার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাবরেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি দলিল সম্পাদনের নামে কোনো টাকা নেই না।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আর তিনি ফোন ধরেননি।

এ নিয়ে জানতে চাইলে রংপর জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম প্রামানিক বলেন, ‘বদরগঞ্জ অফিসের কিছু অভিযোগের তদন্ত চলছে।’ তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং বলেন, ‘অফিসের কারা আপনাকে তথ্য দিচ্ছে তা দেখব!’

ঘুষ সম্পর্কিত আরও পড়ুন: 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত