Ajker Patrika

লোভে আইন ভাঙছেন রেস্তোরাঁর মালিকেরা

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ২৪
লোভে আইন ভাঙছেন রেস্তোরাঁর মালিকেরা

লোভে পড়ে রাজধানীর অধিকাংশ রেস্তোরাঁর মালিক তামাক আইন ভাঙছেন বলে অভিযোগ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভয়েসেস ফর ইন্টারেকটিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস)। নানা কূটকৌশলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে কিশোর এবং যুবকদের ওই সব পণ্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে গত বুধবার এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ করে ভয়েস।

এতে বলা হয়, রাজধানীর রেস্তোরাঁয় ‘আলোকিত রঙিন সজ্জিত বাক্স’ বিজ্ঞাপনের উপকরণ হিসেবে প্রদর্শিত হতে দেখা যায়। বাক্সে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) খালি প্যাকেট ও লোগো থাকে। এসব আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন কিশোর ও তরুণদের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ রেস্তোরাঁয় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকায় এবং ২৭ শতাংশ রেস্তোরাঁর প্রবেশপথ ও রেস্তোরাঁর খাবার টেবিলের আশপাশে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপনসামগ্রী থাকে। এ জন্য রেস্তোরাঁর মালিকেরা এককালীন অর্থ পান। অর্থের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন চার লাখ টাকা। এসব সুবিধা নিতে তামাক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ৬০ শতাংশ রেস্তোরাঁর লিখিত এবং ৪০ শতাংশের অলিখিত চুক্তি রয়েছে।

ভয়েসের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, পণ্যের প্রচার-প্রসার বাড়াতে নানা মোড়কের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কৌশলও গ্রহণ করেছে কোম্পানিগুলো। যেমন পণ্য বিক্রির জন্য এলাকাভিত্তিক ম্যানেজারদের লক্ষ্যমাত্রা প্রদান, যার ভিত্তিতে তাদের বেতন-ভাতার মূল্যায়ন করা হয়। তা ছাড়া এজেন্ট ও খুচরা বিক্রেতাদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়।

ভয়েসের অভিযোগ, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রেস্তোরাঁগুলো দেশের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ ভাঙছে। কারণ, আইন অনুসারে, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা ব্যবহার উৎসাহিত করতে কোনো দান, পুরস্কার গ্রহণ বা কোনো অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না।

এ অবস্থায় তামাকের ব্যবহার মোকাবিলায় আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু কিছু আইন বাস্তবায়িত হলেও অনেক আইন কার্যকর হয়নি। আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের কাজ করতে হবে।’

তামাক আইন লঙ্ঘন বিষয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তামাক আইন লঙ্ঘন করে রেস্তোরাঁয় বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রচারণায় আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে। তামাক কোম্পানি ও রেস্তোরাঁগুলো আইন ভাঙলে তাদের বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আইনে কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটা সংশোধন করা জরুরি।’

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হাসেম আলী খোন্দকার বলেন, ‘তামাক আইনের বিভিন্ন দুর্বলতার বিষয় সামনে এসেছে। এসব সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর যেসব তামাক কোম্পানি ও রেস্তোরাঁ আইন ভাঙছে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

নিজেদের গবেষণার ধরন সম্পর্কে ভয়েসের প্রকল্প সমন্বয়ক ও গবেষণা টিমের প্রধান জায়েদ সিদ্দিকী বলেন, ‘এ গবেষণার জন্য ঢাকা শহরের সাড়ে চার শ রেস্তোরাঁ পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে রাজধানীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। উচ্চবিত্তদের এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, বারিধারা এলাকা এক ভাগ। আর মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তদের এলাকা হিসেবে পরিচিত মিরপুর, গাবতলী, বছিলা, মুগদা, বাসাবো নিয়ে আরেক ভাগ করা হয়।’

তথ্যমতে, করোনায় বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৫৪ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২৮ হাজারের বেশি। অন্যদিকে তামাক ব্যবহারে বিশ্বে বছরে ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের মধ্যে বাংলাদেশে মারা যায় দেড় লাখের বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত