Ajker Patrika

ইসলামপুরে কুকুর আতঙ্ক

ইসলামপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৯
ইসলামপুরে কুকুর আতঙ্ক

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় মানুষের মধ্যে কুকুর আতঙ্ক বিরাজ করছে। বেশি আতঙ্কে আছে শিশুরা। বিভিন্ন বাজার ও রাস্তায় মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলও কামড়াচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুর। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপজেলার পলবান্ধা ইউনিয়নে। গত এক সপ্তাহে ওই ইউনিয়নে কুকুরের কামড়ে ১০ জন আহত হয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রায়ই কুকুরে কামড়ানো ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে আসেন। যাঁরা আসছেন তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার পলবান্ধা ইউনিয়নে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। গত তিন দিনে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে দুই শিশুসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

গত বুধবার সকালে কুকুরের কামড়ে আহত হন সিরাজাবাদ মুন্সিপাড়া এলাকায় বুলি বেওয়া (৬৫)। এ ছাড়া আগের দিন মঙ্গলবার উত্তর বাহাদুরপুর গ্রামের নোকমানের ছেলে মনসুর আলী (৪৫) এবং একই গ্রামের পলাশ মিয়ার ৫ বছর বয়সী ছেলে ফাহিম মিয়াসহ আরও অনেকেই কুকুরের কামড়ে আহত হন। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলায় কুকুর কামড়ানো রোগীদের সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় একমাত্র উপজেলা হাসপাতালে। এ ছাড়া বেসরকারি ক্লিনিকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কুকুরে কামড়ানো রোগীরা প্রায়ই এই হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে আসেন। কুকুর কামড়ালে মূলত দুই ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। একটি পুশ করা হয় চামড়ার নিচে। আরেকটি পুশ করা হয় মাংসে। এই হাসপাতালে চামড়ার নিচে ভ্যাকসিন পুশ করা হয়। এটি নিতে হয় চারবার।

উপজেলার সিরাজাবাদ গ্রামে বাসিন্দা সোহাগ ডিহিদার বলেন, ‘এলাকায় একাধিক ব্যক্তি কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। অপরিচিত লোকজন এলাকায় প্রবেশ করলেই কামড়াচ্ছে।’

গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ তালহা বিশ্বাস বলেন, ‘এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত বেড়ে গেছে। প্রায়ই শিশুদের তাড়া করছে কুকুর।’

গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর বাজারের ব্যবসায়ী উমর ফারুক বলেন, ‘বাজার এলাকা ৭ থেকে ১০টি কুকুরের দখলে থাকে। প্রায় সময় কুকুরগুলো মানুষকে দেখে ঘিরে ধরে। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মাঝে মধ্যে লোকজনকে কামড় দিতেও শোনা যায়।’

পলবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কমল বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকেই কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে অন্তত ১০ জনকে কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

স্বেচ্ছাসেবী দরিয়াবাদ সেবা সংঘের সভাপতি মো. সাজু মিয়া বলেন, ‘কুকুর মানুষকে গণহারে কামড়াচ্ছে। এর দায় কোনো ভাবেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।’

হাসপাতাল গেইটে ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আইনের দোহাই দিয়ে পাগলা কুকুর নিধন না করায় কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে পাগলা কুকুর নিধনে অভিযান চালানো প্রয়োজন।’

পৌর মেয়র আব্দুল কাদের বলেন, ‘উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনার কারণে গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার এ এ এম আবু তাহের বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই কুকুরে কামড়ানো আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। আমরা গুরুত্বসহকারে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলে, ‘এ উপজেলায় কুকুরে কামড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত