Ajker Patrika

কর্মজীবীদের যে নির্দেশনা দেয় ইসলাম

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
কর্মজীবীদের যে নির্দেশনা দেয় ইসলাম

জীবিকার তাগিদে মানুষ বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। পৃথিবীতে যত সফল মানুষ আছেন, তাঁরা সবাই দায়িত্ব পালনে তৎপর ছিলেন। এমনকি নবী-রাসুলগণও পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। সঠিক দায়িত্ব পালন মানুষকে সম্মানিত করে এবং সমাজের উচ্চাসনে বসায়। তাই সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।

দায়িত্ব বড় আমানত: দায়িত্ব আল্লাহর দেওয়া বড় নিয়ামত ও আমানত। এই নিয়ামতের শুকরিয়া করা এবং আমানতের হক আদায় করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আমানতগুলো হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে আদেশ দিচ্ছেন।…’ (সুরা নিসা: ৫৮) 

দায়িত্বে অবহেলা মুনাফেকি: দায়িত্বে অবহেলা করা আমানতের খেয়ানত। খেয়ানত করা মুনাফিকি। একজন দায়িত্বশীল কখনো মুনাফিক হতে পারে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি। এক. মিথ্যা বলা, দুই. ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং তিন. আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার ইমান নেই।’ (আহমদ) 

কাজের চুক্তি ও দায়িত্ব: কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়ার সময় তাকে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। দায়িত্ব পালনের সময় সেসব শর্ত পূরণ করা একজন আদর্শ দায়িত্বশীলের জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা: ১)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে ওয়াদা রক্ষা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (আহমদ)। 

দায়িত্ব জীবনের পরীক্ষা: দায়িত্ব একধরনের পরীক্ষা। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি কোনো দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত হয়, তখন সে তরবারি ছাড়াই কোরবানি হয়।’ (আহমদ)। হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, ‘দায়িত্ব দিয়ে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। যদি কেউ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তবে সে কর্মক্ষেত্র ও সমাজে যেমন নিন্দিত হয়, তেমনি আল্লাহর কাছেও জবাবদিহির মুখোমুখি হবে। তখন মনে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার চেয়ে না নেওয়াই ভালো ছিল। তাই হাদিসে দায়িত্ব গ্রহণকে তরবারি ছাড়া জবাইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। 

দায়িত্ব পালন ও দেশপ্রেম: প্রকৃত দেশপ্রেম প্রকাশিত হয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মাধ্যমে। কেউ কেউ ফটোসেশন, মিছিল-মিটিংয়ের সামনে অবস্থান করে দেশপ্রেম প্রকাশ করতে চায়। সেটি প্রকৃত দেশপ্রেম নয়; বরং যার যা দায়িত্ব তা যদি যৌক্তিক ও সঠিকভাবে পালন করা হয়, তবে দেশের উন্নতি এক ধাপ ত্বরান্বিত হবে। 

পরকালের জবাবদিহি: দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে আখিরাতে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘ওহে! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নেতা একজন দায়িত্বশীল, তাঁকে তাঁর অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ পরিবারের অভিভাবক। তাকে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল। তাকে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। চাকর তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, তাকে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি) 

দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি: দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব দিই, তখন সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও ছোট জিনিস খেয়ানত করে, তবে কেয়ামতের দিন সে খেয়ানতের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠবে।’ (মুসলিম) 

সঠিক দায়িত্ব পালন ইবাদত: কর্ম শুধু জীবিকা লাভের মাধ্যম নয়, এটি সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। চাকরিকালে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবসেবার নিয়ত থাকলে তা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ মারা গেলে তিন ধরনের আমল ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত