Ajker Patrika

জলেশ্বরীর জাদুকরের জন্মদিন

নওশাদ জামিল, ঢাকা
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮: ২২
Thumbnail image

ষাটের দশকে অসংখ্য মানুষের মুখে মুখে ঘুরত কিছু জনপ্রিয় গান। ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া, রাস্তা দিয়া হাঁইটা চলে রাস্তা হারাইয়া’—এই গানগুলো কার লেখা তা অনেকের অজানা নয়। গানগুলো লিখেছিলেন বহুমাত্রিক লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তিনি যখন যে মাধ্যমে কাজ করেছেন, তখন সে মাধ্যমে যেন সোনা ফলিয়েছেন। মানুষকে উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব সৃষ্টিকর্ম। তাঁকে অনেকে বলেন ‘জলেশ্বরীর জাদুকর’। বাংলা সাহিত্যের সেই জাদুকর ঘুমিয়ে আছেন তাঁর প্রিয় কুড়িগ্রামে, জন্মভূমিতে। আজ মঙ্গলবার তাঁর ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে জন্মভূমিতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হবে।

সৈয়দ শামসুল হককে কেন ‘জলেশ্বরীর জাদুকর’ বলা হয়? তাঁর কথাসাহিত্য যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানেন, তিনি ‘জলেশ্বরী’ নামের কাল্পনিক এক ভূখণ্ড নিয়ে একের পর এক সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন। লিখেছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটকসহ নানা কিছু। ধারণা করা হয়, কুড়িগ্রাম অঞ্চলকে মাথায় রেখেই কল্পনার জলেশ্বরী সাজিয়েছিলেন তিনি। কুড়িগ্রামসহ রংপুরের আঞ্চলিক ভাষাকেই তিনি তাঁর রচনায় স্বমহিমায় তুলে ধরেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসংখ্য মানুষকে শাণিত করেছিলেন।

এ বহুমাত্রিক লেখক দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান। পরে তাঁকে তাঁর জন্মভূমি কুড়িগ্রামে সমাধিস্থ করা হয়।

 সৃষ্টিমুখর এক জীবন কাটিয়ে গেছেন সৈয়দ শামসুল হক। যেন দুই হাতে লিখেছেন, কাজ করেছেন। তিনি ৩০টির মতো চিত্রনাট্য রচনা করেন। সৈয়দ হকের লেখা ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’, ‘রাজা এল শহরে’, ‘শীত বিকেল’, ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র দর্শকপ্রিয় হয়। সৈয়দ হক চলচ্চিত্রের জন্য অনেক গানও রচনা করেন। একের পর এক কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখেছেন। চমকে দিয়েছেন বাংলাভাষী পাঠককে। কবিতা আর উপন্যাসের মতো বাংলা মঞ্চনাটকেও শক্তিমান এক পুরুষ হিসেবে নিজের লেখনীর প্রমাণ দিয়েছেন সৈয়দ হক। তাঁর লেখা নাটকগুলোর মধ্যে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ এবং ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ সমকালীন অভিপ্রায়ের এক দৃপ্ত প্রকাশ।

বাংলাদেশের অগণিত পাঠক আর দর্শকের ভালোবাসার পাশাপাশি অনেক পুরস্কার নিজের অর্জনের খাতায় জমা করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার প্রভৃতি।

আজ সৈয়দ শামসুল হকের জন্মবার্ষিকীতে বাংলা একাডেমিতে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত হবে অনুষ্ঠান। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে থাকবে দিনব্যাপী সৈয়দ হক মেলা। মেলায় থাকবে স্বরচিত সাহিত্য পাঠ, সৈয়দ হকের লেখা থেকে আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনসহ দিনব্যাপী বইমেলা।

জানা যায়, সৈয়দ হকের স্মৃতি ধরে রাখতে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে তাঁর সমাধি চত্বরে কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে অজ্ঞাত কারণে সেই কমপ্লেক্স এখনো নির্মাণ হয়নি। আক্ষেপ প্রকাশ করে সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিণী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘শুধু আমার পরিবার নয়, গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন হলো সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে যে সহযোগিতা চাওয়া হবে, আমরা তা দেব। আমরা চাই এমন কমপ্লেক্স হোক, যেখানে কুড়িগ্রাম ও দেশের নানা শ্রেণির শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের মিলনমেলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত