Ajker Patrika

আ.লীগের কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থী

মেহেরপুর প্রতিনিধি
আ.লীগের কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থী

মেহেরপুর সদর উপজেলার চার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলটির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বারবার সভা করে তাঁদের সরে দাঁড়ানোর জন্য বলা হলেও কেউ কথা শুনছেন না। ইতিমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে না পেয়ে এক প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন।

আগামী ১৫ জুন এসব ইউপিতে ভোটগ্রহণ। গত ২৬ মে শ্যামপুর ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রব বিশ্বাস মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তাঁর দাবি, বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িতে তিনি অসহায়। এমনকি দলের নেতা-কর্মীদেরও পাশে পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়েই শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

শুধু শ্যামপুরেই নয় বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি পিরোজপুর, বারাদি ও আমঝুপিতে। ভোটাররা মনে করছেন, বিদ্রোহীরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনকে ঘিরে সাজসাজ রব। প্রচারে মুখরিত গ্রামগুলো। ইতিমধ্যে কয়েকটি গ্রামে ঘটেছে সংঘর্ষেরও ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর ও পোস্টার ছেঁড়ার।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বারাদিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মোমিনুল ইসলাম (নৌকা প্রতীক), বিদ্রোহী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আরমান আলী (ঘোড়া) ও সাবেক জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক  সালে আল আজিজ টনিক (আনারস)।

পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম (আনারস)। নৌকা প্রতীক নিয়ে আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দীন চুন্নু। সেখানে বিদ্রোহী হয়েছেন আসিফ আজিম (আনারস প্রতীক)।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ভোট তাঁদের কাছে একটু আলাদা। কারণ বিএনপির দলীয় প্রতীকে কোনো প্রার্থী নেই। তা-ও কোনো কোনো ইউনিয়নে বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী রয়েছে। তাই ভোটের হিসাবনিকাশ এবার একটু আলাদা হতে পারে। এ ছাড়া নৌকা প্রতীক পেয়েও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভোটের মাঠে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্দুর রব বিশ্বাস দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের কান্ডারি হিসাবনিকাশ পরিচিত ছিলেন। এ কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার অনেকেই মানতে পারছেন না।

প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচারণাও চোখে পড়ার মতো। ভোটাররা মনে করছেন বিদ্রোহীরা ভোটের হিসাবনিকাশ পাল্টে দিতে পারে না। এ ছাড়াও সম্প্রতি নির্বাচন কমিশানের বক্তব্যও ভোটে আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে। কারণ প্রতিটি প্রার্থী ও ভোটাররা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি দলীয় সভা করেছি। যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই সরে দাঁড়াননি। তাদের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানে হবে। গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী এসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেসব সভায় সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর অবস্থা ভালো।’

খালেক আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে অবশ্যই দলীয় প্রতীকের বাইরে নির্বাচন করা প্রয়োজন। দল কেন্দ্রীয়ভাবে সেটিও ভাবছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় দলীয় প্রতীক বাদে নির্বাচন করা হয়েছে।’

নৌকার প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী আব্দুর রব বিশ্বাসের সঙ্গে ছিলেন। তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেষ বয়সে যাতে মান-সম্মানের হানি না হয়, তাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নৌকার প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন মানে দলে সংকট দেখা দিয়েছে, বিষয়টি এমন না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত