Ajker Patrika

ইটভাটার অনুমতি পেতে অভিনব কৌশল

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১৩: ৪৭
ইটভাটার অনুমতি পেতে অভিনব কৌশল

কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ সড়ক ধরে ২৮ কিলোমিটার দূরে উখিয়া উপজেলার কোটবাজার স্টেশন। সেখান থেকে পূর্ব দিকে ফসলভরা মাঠের ভেতর দিয়ে গেছে তিনটি পাকা সড়ক। একটির নাম তুমব্রু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক। এটি উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়ন ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমানা। দুই ইউনিয়নের পাহাড় ও সমতলের এই গ্রামের নাম ভালুকিয়া। এই গ্রামের দিকে যেতে যেতে প্রফুল্ল মনে কিছুটা ভাটা পড়বে। কারণ, সেদিকে ধীরে ধীরে প্রকৃতির রূপ বদলেছে। এখন এই গ্রামে ভালুক কিংবা হাতির ভয় নেই। আছে পাহাড় কাটা, বন নিধন, অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ইয়াবা পাচার।

এ গ্রামেই চোখে পড়ে উঁচু পাহাড় লাগোয়া এইচকেবি নামের একটি ইটভাটা। এই ভাটায় আবার দুই ধরনের চিমনি। দুই জোড়া ড্রাম (বাংলা) চিমনি ও একটি জিগজ্যাগ। রহস্যঘেরা এই ভাটার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ভাটার অর্ধেকের বেশি পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে, বাকি অংশ উখিয়ার রত্নাপালংয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ড্রাম চিমনি দিয়ে ভাটাটি স্থাপন করা হয়। এই ভাটা পাহাড় কেটে মাটি এনে ও বনের গাছ পুড়ে চালানো হচ্ছে। গত ১৪ মার্চ তিন পার্বত্য জেলার ইটভাটা উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। ভাটার মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য ভাটাটি কক্সবাজারে দেখিয়ে মাস দুয়েক আগে জিগজ্যাগ চিমনি তৈরি করে অনুমোদনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এইচকেবি ভাটার মালিক হায়দার আলী ভাটাটি দুই উপজেলায় পড়ার সত্যতা স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জিগজ্যাগ চিমনিটি উখিয়ায় পড়েছে। এ জন্য কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি।’ নাইক্ষ্যংছড়িতে পড়া ড্রাম চিমনিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পাহাড়সংলগ্ন এলাকায় পরিবেশ ছাড়পত্র কীভাবে পাবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করেই তো অনুমোদন দেবে।

এই ভাটার মতো নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও বাইশারী এলাকায় আরও অন্তত ১০টি ড্রাম চিমনির ভাটা রয়েছে। বছরের পর বছর এই ভাটাগুলো পাহাড়ের মাটি ও বনের গাছ পুড়ে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক ভাটার মালিক বলেন, ‘ভাটাগুলো উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তাঁরা সবাইকে ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করছেন।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও ও পেকুয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১২০টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের ৫৪টি ও নাইক্ষ্যংছড়ির ১১টি ভাটার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব ভাটার ৪২টি পড়েছে সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের জায়গায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, লোকবলসংকটের কারণে দুর্গম পাহাড়গুলোতে নিয়মিত অভিযান ও তদারক করা সম্ভব হয় না। গত ৮ মার্চ চকরিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন ফাঁসিয়াখালী বনে স্থাপিত জেএলবি নামের ভাটাসহ টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। এ নিয়ে মামলা হয়েছে অন্তত ৪০টি। গত বছর মামলা হয়েছিল ৫৫টি।

২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা (৫০টির অধিক বাড়ি), কৃষিজমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু ভাটাগুলো জনবসতি, বনাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশেই স্থাপন করা হয়েছে। এসব ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। এতে পরিবেশদূষণ ও প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শফিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভালুকিয়ায় এইচকেবি ভাটার জন্য বন বিভাগের কোনো অনাপত্তি নেওয়া হয়নি। বনাঞ্চলের পাশের ভাটার অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের কাছাকাছি স্থাপিত ভাটাগুলো উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান,পার্বত্য এলাকায় ইটভাটার কোনো অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। এইচকেবি ভাটার অনুমোদন চাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত