Ajker Patrika

বাউত উৎসবে মুখর রহুলবিল

মো. মনিরুজ্জামান ফারুক ভাঙ্গুড়া (পাবনা) 
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮: ৪০
বাউত উৎসবে মুখর রহুলবিল

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রহুলবিল। গতকাল শনিবার ছিল এই বিলে মাছ ধরার উৎসব। তাই কাকডাকা ভোর থেকে ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহরসহ আশপাশের উপজেলার হাজারো শৌখিন মৎস্যশিকারি এসে জড়ো হন বিলপাড়ে। শীতের সকালে একে একে নামেন পানিতে। শুরু হয় মাছ ধরা। চলে দুপুর পর্যন্ত। এ সময় রুই, কাতলা, শোল, গজার, বোয়াল, মিনার কার্প, টাকি প্রভৃতি মাছ ধরতে পেরে অনেকে খুশি। আবার অনেকে মাছ শিকার করতে না পেরে মন খারাপ করে খালি হাতে বাড়ি ফেরেন।

চলনবিল ও নদ-নদীবেষ্টিত এই উপজেলার মানুষ কর্দমাক্ত পানিতে নেমে মহা ধুমধামে মাছ শিকার করেন। যাঁরা মাছ ধরেন, তাঁদের বলা হয় ‘বাউত’। তাই স্থানীয় ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় ‘বাউত উৎসব’। প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে মাছ শিকারের এই উৎসব চলে আসছে।

গতকাল আবারও শুরু হয় বাউত উৎসব। চলে দুপুর পর্যন্ত। মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসা নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন। বিলের আশপাশে নেমেছিল হাজারো মানুষের ঢল। পুরো বিল এলাকা পরিণত হয় শৌখিন মৎস্যশিকারিদের মিলনমেলায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বছরের নির্ধারিত একটি দিনে ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট বিলে মাছ শিকার করা এই অঞ্চলের একটি পুরোনো প্রথা।শুধু জেলেরাই নন, শৌখিন মৎস্যশিকারিরা পলো, বাদাই, খেয়াজাল, ঠেলাজাল প্রভৃতি ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ ধরেন এই উৎসবে।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঝাঔল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মিনিট্রাক ভাড়া করে আমরা ২৭ জনের একটি দল এখানে এসেছি মাছ ধরতে। খরাজাল দিয়ে রুই-কাতলা ধরেছি। তবে আশানুরূপ মাছ ধরতে পারিনি।’

পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলার দত্তখারুয়া গ্রামের বেলাল হোসেন বলেন, তিনি চারটি শোল মাছ শিকার করতে পেরেছেন। বেশ আনন্দ লাগছে তাঁর। এখানে এত মানুষ একসঙ্গে মাছ ধরতে আসেন। এটা অনেক ভালো লাগে।

ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহুলবিলে মাছ ধরার খবর পেয়ে ভোরবেলায় পলো নিয়ে তাঁরা বিলে হাজির হন; কিন্তু মাছ না পেয়ে তাঁদের খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এভাবে শিকার করা মাছের বংশবিস্তারের জন্য ক্ষতিকর। তবু এলাকার মানুষ প্রতিবছর এভাবে মাছ শিকারের মাধ্যমে বাউত উৎসব উদ্‌যাপন করে থাকেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বাউত উৎসব এই এলাকার পুরোনো ঐতিহ্য। প্রতিবছর এই উৎসব হয়। এভাবে মাছ শিকার করায় যেন মাছের বংশবিস্তারে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত