Ajker Patrika

দখলের আয়োজন থামেনি

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ১১
Thumbnail image

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বারবার অভিযান হয়, কিন্তু কোনোভাবেই উদ্ধার হয় না বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল। এক পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়, অন্য পাশে আবার সেগুলোর পরিত্যক্ত অংশ দিয়ে নদী ভরাট করা হয়। সর্বশেষ টানা ছয় দিন কামরাঙ্গীরচর মৌজায় যে অভিযান হয়েছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি হয়েছে। তা ছাড়া উচ্ছেদ শেষে নদীতীরে এখনো ৩৯টি স্থাপনা রয়ে গেছে।

ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত সাত কিলোমিটারকে বলা হয় আদি বুড়িগঙ্গা। দুই দশক আগেও এখান দিয়ে নৌকা চলাচল করত। এটি এখন টিকে আছে নালার মতো শীর্ণ অবস্থায়। উচ্চ আদালত ২০২০ সালের মার্চে আদি বুড়িগঙ্গাসহ বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। এরপর বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও সেটি আবার দখলের কবলে পড়ে। সর্বশেষ গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ছয় দিনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), ঢাকা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। অভিযানে ছোট-বড় ২১৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযান পরিচালনার সময় সরেজমিন দেখা যায়, বেড়িবাঁধ রাস্তার ধার ঘেঁষে মদিনা ট্রেডার্স ও লালবাগ র‍্যাব ক্যাম্পের উল্টো পাশের নদীর ধারে নানা আবর্জনা ও মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট অংশে আবার অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ। কিছু অংশে ইতিমধ্যেই বসে গেছে ছোট ছোট দোকান। এমনকি নতুন করে উঠছে ইমারত।

স্থানীয় বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন, ‘কয়েক মাস আগে ভরাট অংশের কিছু জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল। অভিযানের কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল এই কয়েক দিন। তা ছাড়া এখন নতুন করে আবার অনেকে মাটি ফেলছে।’এদিকে বাস্তুহারা লীগ ও বেশ কয়েকটি মসজিদের নামে দখল করা জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে অভিযানে। তবে সেগুলোর কাছাকাছি জান্নাতুল মাওয়া জামে মসজিদসহ মোট পাঁচটি মসজিদ ভাঙা হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মসজিদ কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত মোজাম্মেল নামের এক ব্যক্তি। যিনি মসজিদের পেছনে বেশ কিছু জায়গা দখল করে রিকশার গ্যারেজ গড়ে তুলেছেন। কাওসার ইসলাম নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘অবৈধভাবে জায়গা দখলে রাখতে মসজিদের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তিনি আসলে রিকশার গ্যারেজ করেছেন।’
এসব স্থাপনার পাশাপাশি সেখানে রয়ে গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মার্কেট ও ৭ তলা কোয়ার্টার ভবন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন লালবাগ থানা ভবনসহ কয়েকটি সরকারি স্থাপনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আদি চ্যানেলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছি। ভরাটের বিষয়ে আমরা জানি না। এগুলো সিটি করপোরেশনের বিষয়। ৩৯টি স্থাপনার বিষয়ে ডিসি অফিসে সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করি কোনো অবৈধ স্থাপনাই থাকবে না। ধীরে ধীরে সব স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে।’  ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদী ভরাটের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে অভিযানে উচ্ছেদের শিকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, তাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিয়মিত কর দিয়ে এসেছি আমরা। আমাদের জমি সরকার নিয়ে গেছে। এখন আমরা কই গিয়ে দাঁড়াব? আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।’  সার্বিক বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মেনে উচ্ছেদ করেছি। বাকি কিছু জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত