Ajker Patrika

পুরোনো সংযোগে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

এম মেহেদী হাসিন, রংপুর
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৩০
পুরোনো সংযোগে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে বাড়ছে শর্ট সার্কিট থেকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সর্বশেষ এক মাসে দুই দফা অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে হাসপাতালটিতে। বিদ্যুতের পুরোনো লাইনগুলো অপরিকল্পিতভাবে যুক্ত করা বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামের চাপ নিতে পারছে না। এ কারণে প্রায়ই বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

১৯৭৬ সালে চার তলা ভবনে যাত্রা শুরু করে ৫০০ শয্যার রমেক হাসপাতাল। পরে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় একে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়। সেই সঙ্গে ভবন করা হয় পাঁচ তলা। বর্তমানে প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন হাসপাতালটিতে। এখানে বিদ্যুতের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও পুরোনো সংযোগেই চলছে কার্যক্রম। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ভারী চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করায় বাড়তি চাপ পড়ছে সংযোগগুলোর ওপর।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, দিন দিন হাসপাতালের পরিধি বৃদ্ধি, ভারী যন্ত্রপাতি স্থাপন ও এসির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো বিদ্যুতের সংযোগ চাপ নিতে পারছে না। এতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিকল হয়ে পড়ছে কোটি টাকা মূল্যের সরঞ্জাম। বিদ্যুৎ সংযোগ সংস্কারে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে পত্র পাঠালেও পর্যাপ্ত টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে তিন বছরে হাসপাতালে ছোটবড় অন্তত ১০টি অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব ঘটেছে বিদ্যুতের নড়বড়ে সংযোগের কারণে। সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে হাসপাতালের নিচ তলায় পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে বিদ্যুতের মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে (এমডিবি) আগুন লাগে। গণপূর্ত বিভাগ ধারণা করছে, সংযোগের ওপর বাড়তি চাপের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বর্তমানে এখানে তিন শতাধিক কক্ষে এসি ব্যবহার হচ্ছে, যা গণপূর্ত বিভাগের অনুমোদিত নয়। এমনকি এসব এসির ৯০ শতাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেনি। বিভিন্ন সময়ে নানা ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে এসিগুলো চিকিৎসকদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকেরা এগুলো কক্ষে লাগিয়েছেন।

গণপূর্ত বিভাগ জানায়, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ভারী ভারী যন্ত্রপাতি, এক্স-রে মেশিন বসানো হয়েছে। এসব বসাতে গণপূর্তের অনুমোদন নিতে এবং তাদের মাধ্যমে স্থাপন করতে হয়। কিন্তু সেটা করা হয় না। এ কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অগ্নিসংযোগ ঘটছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয় ২০১৪ সালে। মেশিন দুটি ২০২০ সালে অচল হয়ে যায়। এ ছাড়া আরও পাঁচটি সাধারণ এক্স-রে মেশিন বিকল রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর এবং গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, বিদ্যুতের সংযোগ সংস্কারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৩১ টাকার একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এখনো সেটি পাস হয়ে আসেনি। এর আগের দুই অর্থবছরে সংস্কারের জন্য যে অর্থ পাওয়া গেছে তা ছিল চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের কম।

রংপুর গণপূর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোছা. রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘বিদ্যুতের সংযোগগুলো পুরোনো হওয়ায় ওভার লোড নিতে পারছে না। সে কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে। এ ছাড়া যেসব এসি এবং ভারী যন্ত্র বসানো হয় তা অনেক সময় আমাদের জানার বাইরে। এসব সংযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের জানালে আমরা সেটা বলতে পারতাম কোথায় কীভাবে লাগাতে হবে, কোনো সংযোগ সেটার লোড নিতে পারবে কি পারবে না।’

রাজিয়া সুলতানা জানান, হাসপাতালের বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামতের জন্য অর্থ চেয়ে যে প্রস্তাব পাঠানো হয় তার পুরোটা পাওয়া যায় না। এ কারণে পুরো সংস্কারও সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সংস্কার প্রয়োজন। প্রতি বছর কিছু কিছু হয়, কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হচ্ছে না। এগুলোর দায়িত্বে আছে গণপূর্ত। আমি তাদের অনুরোধ করব, হাসপাতালের যে বৈদ্যুতিক সাপ্লাই সিস্টেম রয়েছে, সেগুলো পুরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটা রিপোর্ট দিতে। একই সঙ্গে কত এসি কে ব্যবহার করছে, সেগুলো সার্ভে করে রিপোর্ট দিতে। লোডে একটু ভারসাম্যহীনতা থাকতে পারে, সেটাও তারা বের করবে। এ জন্য তাদের সঙ্গে আমি বসব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত