Ajker Patrika

ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে চায় সরকার

রাহুল শর্মা, ঢাকা
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ২৩
ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে চায় সরকার

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়োগ দিতে চায় সরকার। এ জন্য পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ইউজিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য করার দাবি উঠেছিল। মূলত তাঁদের এই দাবি পূরণ করতেই ইউজিসিকে এমন চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে আনতে চাইলেও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সে সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছে ইউজিসি ও উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান আজকের পত্রিকা বলেন, ৫৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে, তাতে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচের কাউকে সিন্ডিকেট সদস্য রাখার সুযোগ নেই। ডিসিরা হলেন উপসচিব পদমর্যাদার। যদি তাঁদের সিন্ডিকেটে যুক্ত করতে হয়, তাহলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে।

দেশে বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৯টি। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজ আছে ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি ৩৭টি ও ৭৩টি বেসরকারি। ডিসি সম্মেলন-২০২২-এ অধিকাংশ জেলা প্রশাসক এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি তথা সিন্ডিকেটে যুক্ত করার দাবি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সম্মেলনে ডিসিরা যুক্তি দেখান বিভিন্ন জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা নিরসনে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেন না তাঁরা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথাও সম্মেলনে তুলে ধরেন তাঁরা। এসব তুলে ধরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যুক্ত করার দাবি জানান।

তবে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের সিন্ডিকেটে যুক্ত করার উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা। তাঁরা বলছেন, এর ফল ভালো হবে না। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোর সর্বনাশ হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক ছাড়া কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যুক্ত করার উদ্যোগ ভালো ফল বয়ে আনবে না।

তিনি আরও বলেন, কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে। সব জায়গায় আমলা বসাতে হবে কেন? এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বনাশ হয়ে যাবে।একই সুরে কথা বললেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের

(স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তাঁর ভাষ্য, ‘অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেও গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানে কেবল চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের যুক্ত করার দরকার ছিল, সেখানে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনকে করা হচ্ছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেডিকেল কলেজগুলো ধ্বংস ডেকে আনবে। চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য এটি খুবই খারাপ পদক্ষেপ।’

তবে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আইন সংশোধন করতে হবে বলে মনে করেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য ড. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে এবং কারা সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার যোগ্য, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লেখ রয়েছে। সরকার যদি এমন কিছু করতে চায় তাহলে আইন সংশোধন ছাড়া সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত