আজকের পত্রিকা ডেস্ক

প্রতিবেশী বড় দেশগুলোর তুলনায় আকারে ছোট হলেও, বাংলাদেশ এখন ধীরে ধীরে নিজেকে কৌশলগত অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলছে। মূলত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের মাধ্যমেই দেশটি নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। দেশটিই বাংলাদেশে বিনিয়োগে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। চীন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশে তারা দুটি নতুন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করবে। এসব অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগকারীরা মূলত টেক্সটাইল, সিরামিকস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে কাজ করবেন।
তবে শুধু চীন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত লক্ষ্য—বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং দুই দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আগ্রহ—এই সবকিছুরই মিলনস্থল।
বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই উৎস হিসেবে কোরিয়ার অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে। ২০২৩ সালের পর থেকে দেশটি প্রতি বছর এই অবস্থানে উন্নতি করছে। ক্রমবর্ধমান এই ধারা স্পষ্ট করে যে, বাংলাদেশ দিন দিন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রথম দিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করলেও, ইউনূসের সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ফের নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনে।
এর অন্যতম প্রমাণ, ২০২৫ সালে আয়োজিত বাংলাদেশের ইনভেস্টমেন্ট সামিট, যেখানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন—যার বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারী। যদি বাংলাদেশ এই সংস্কারপন্থী পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের কাছে এটি আরও বেশি মূল্যবান বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, তরুণ জনসংখ্যা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনা—এই সবই বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা এখন শুধু তৈরি পোশাক বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সীমাবদ্ধ থাকছেন না। এখন তারা আগ্রহী আধুনিক খাতেও—যেমন সেমিকন্ডাক্টর, ডিজিটাল ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি। এটি কোরিয়ার কোম্পানিগুলোর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের শিল্প খাতের পরিবর্তনশীল চাহিদা এবং ভোক্তা বাজারের বিকাশের সঙ্গে মিল রেখে চলছে।
২০২৫ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারী একটি প্রতিনিধি দল—যার মধ্যে এলজি’র কর্মকর্তারাও ছিলেন—চট্টগ্রামের কোরিয়ার এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) পরিদর্শন করেন। এই কেইপিজেড একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে টেক্সটাইল এবং গ্রিন এনার্জি (সবুজ জ্বালানি) উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। এই অঞ্চলে কোরিয়ার পোশাক নির্মাতা কোম্পানি ইয়াংওয়ান গ্রুপ নতুন করে বিনিয়োগ করে টেক্সটাইল ও সৌরশক্তিভিত্তিক প্রকল্প শুরু করেছে।
এর এক মাস আগেই, ২০২৫ সালের মার্চে কোরিয়ার বিখ্যাত অটোমোবাইল নির্মাতা হুন্দাই, বাংলাদেশের ডিএক্স গ্রুপের সঙ্গে এক অংশীদারত্ব ঘোষণা করে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজারে প্রবেশ করে। এই যৌথ উদ্যোগ স্মার্ট টিভি, রেফ্রিজারেটর ও অন্যান্য উপকরণ উৎপাদন করবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং এরই মধ্যে বাংলাদেশের ফেয়ার গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার) উৎপাদন করছে। এসব কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করে যে, দক্ষিণ কোরিয়া এখন বাংলাদেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি এবং নতুন শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।
দুই দেশের সরকারই বাংলাদেশে উদীয়মান স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে সহায়তা করে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস একটি ভার্চুয়াল ডেস্ক চালু করে, যার মাধ্যমে আইটিভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে টানা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশন এবং কোরিয়া প্রোডাকটিভিটি সেন্টার একত্রে একটি মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান। সরকারি পর্যায়ে আরও অনেক উদ্যোগ—যেমন স্বাস্থ্যসেবা খাতে সহযোগিতা, এবং দুই দেশের মধ্যে মান নির্ধারণে সমন্বিত নীতি তৈরি—প্রমাণ করে যে, দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই নীতিগুলোর বাস্তব সুফলও মিলছে। যেমন, কোরিয়ার উদ্যোক্তাদের গঠিত ফুড-টেক স্টার্টআপ, এমএফএম কোরিয়া বাংলাদেশি নারীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করছে। এই উদ্যোগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে খাদ্যপণ্য তৈরি করে। একইভাবে, বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের তৈরি ‘চারদিকে’ নামের একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম কোরিয়ার পণ্যের বাজার গড়ে তুলেছে।
শুধু স্টার্টআপ নয়, প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোও কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে এগোচ্ছে। যেমন, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে গ্লোবাল ব্র্যান্ড পিএলসি (একটি বাংলাদেশি আইটি পণ্য বিপণনকারী কোম্পানি) এবং কোরিয়ার ফিনটেক কোম্পানি হায়োসাং টিএনএস একযোগে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আধুনিকীকরণের উদ্যোগ ঘোষণা করে। এর আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান উরি ব্যাংক, বাংলাদেশের বিকাশ এবং ব্যাংককম্পেয়ারবিডির সঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত হয়।
বাংলাদেশ শুধু উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতিতে আটকে থাকতে চায় না। ডিজিটাল অর্থনীতি গঠনের লক্ষ্য এখন ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। এই রূপান্তর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করছে, বিশেষ করে ডিজিটাল পেমেন্ট, ই-কমার্স এবং স্মার্ট সিটি প্রকল্পের মাধ্যমে।
এর একটি বড় উদাহরণ মিরসরাই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই এলাকাকে বর্তমানে ‘ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে স্মার্ট শহরের কাঠামো তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে। দক্ষিণ কোরিয়া এই অঞ্চলটিকে ২০২৮ সালের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট শহরে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেছে। এ জন্য তারা উলসান ও শেনজেনের মতো উপকূলীয় শহর থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে—যেগুলো এখন বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
মিরসরাইয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কেবল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যই নয়, বরং প্রযুক্তি-নির্ভর স্টার্টআপ ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানির জন্যও সুবর্ণ সুযোগ। চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় এই অঞ্চলটি একটি স্বনির্ভর ডিজিটাল শহরে রূপান্তরিত হতে পারে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও ডিজিটাল সেবা একসঙ্গে বিকশিত হবে।
ক্রমবর্ধমান জটিল ও আন্তঃসংযুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান কৌশলগত অংশীদার। দেশটি বিপুল জনসংখ্যা, কৌশলগত অবস্থান এবং ডিজিটাল রূপান্তরের পরিষ্কার লক্ষ্য নিয়ে এশিয়ার পরবর্তী প্রবৃদ্ধির গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বাংলাদেশে আরও গভীর সম্পৃক্ততা এক অনন্য সুযোগ। এটি কোরিয়াকে তার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কৌশলকে বৈচিত্র্যময় করতে, উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশীয় দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। ঢাকা ও সিউলের এই উদীয়মান অংশীদারত্ব কেবল বাণিজ্যিক সম্পর্ক নয়—বরং এটি একটি যৌথ অগ্রযাত্রার দিকেই ইঙ্গিত দেয়, যেখানে দুই দেশই একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ভাগ্যগঠনের গল্প লিখতে চলেছে।
লেখক: হিউ হারসানো, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, ব্লকচেইন, ডিজিটাল মুদ্রা এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি নীতি ও কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রভাব গবেষক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আরও খবর পড়ুন:

প্রতিবেশী বড় দেশগুলোর তুলনায় আকারে ছোট হলেও, বাংলাদেশ এখন ধীরে ধীরে নিজেকে কৌশলগত অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলছে। মূলত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের মাধ্যমেই দেশটি নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। দেশটিই বাংলাদেশে বিনিয়োগে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। চীন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশে তারা দুটি নতুন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করবে। এসব অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগকারীরা মূলত টেক্সটাইল, সিরামিকস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে কাজ করবেন।
তবে শুধু চীন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত লক্ষ্য—বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং দুই দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আগ্রহ—এই সবকিছুরই মিলনস্থল।
বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই উৎস হিসেবে কোরিয়ার অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে। ২০২৩ সালের পর থেকে দেশটি প্রতি বছর এই অবস্থানে উন্নতি করছে। ক্রমবর্ধমান এই ধারা স্পষ্ট করে যে, বাংলাদেশ দিন দিন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রথম দিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করলেও, ইউনূসের সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ফের নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনে।
এর অন্যতম প্রমাণ, ২০২৫ সালে আয়োজিত বাংলাদেশের ইনভেস্টমেন্ট সামিট, যেখানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন—যার বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারী। যদি বাংলাদেশ এই সংস্কারপন্থী পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের কাছে এটি আরও বেশি মূল্যবান বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, তরুণ জনসংখ্যা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনা—এই সবই বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা এখন শুধু তৈরি পোশাক বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সীমাবদ্ধ থাকছেন না। এখন তারা আগ্রহী আধুনিক খাতেও—যেমন সেমিকন্ডাক্টর, ডিজিটাল ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি। এটি কোরিয়ার কোম্পানিগুলোর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের শিল্প খাতের পরিবর্তনশীল চাহিদা এবং ভোক্তা বাজারের বিকাশের সঙ্গে মিল রেখে চলছে।
২০২৫ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারী একটি প্রতিনিধি দল—যার মধ্যে এলজি’র কর্মকর্তারাও ছিলেন—চট্টগ্রামের কোরিয়ার এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) পরিদর্শন করেন। এই কেইপিজেড একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে টেক্সটাইল এবং গ্রিন এনার্জি (সবুজ জ্বালানি) উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। এই অঞ্চলে কোরিয়ার পোশাক নির্মাতা কোম্পানি ইয়াংওয়ান গ্রুপ নতুন করে বিনিয়োগ করে টেক্সটাইল ও সৌরশক্তিভিত্তিক প্রকল্প শুরু করেছে।
এর এক মাস আগেই, ২০২৫ সালের মার্চে কোরিয়ার বিখ্যাত অটোমোবাইল নির্মাতা হুন্দাই, বাংলাদেশের ডিএক্স গ্রুপের সঙ্গে এক অংশীদারত্ব ঘোষণা করে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজারে প্রবেশ করে। এই যৌথ উদ্যোগ স্মার্ট টিভি, রেফ্রিজারেটর ও অন্যান্য উপকরণ উৎপাদন করবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং এরই মধ্যে বাংলাদেশের ফেয়ার গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার) উৎপাদন করছে। এসব কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করে যে, দক্ষিণ কোরিয়া এখন বাংলাদেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি এবং নতুন শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।
দুই দেশের সরকারই বাংলাদেশে উদীয়মান স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে সহায়তা করে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস একটি ভার্চুয়াল ডেস্ক চালু করে, যার মাধ্যমে আইটিভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে টানা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশন এবং কোরিয়া প্রোডাকটিভিটি সেন্টার একত্রে একটি মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান। সরকারি পর্যায়ে আরও অনেক উদ্যোগ—যেমন স্বাস্থ্যসেবা খাতে সহযোগিতা, এবং দুই দেশের মধ্যে মান নির্ধারণে সমন্বিত নীতি তৈরি—প্রমাণ করে যে, দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই নীতিগুলোর বাস্তব সুফলও মিলছে। যেমন, কোরিয়ার উদ্যোক্তাদের গঠিত ফুড-টেক স্টার্টআপ, এমএফএম কোরিয়া বাংলাদেশি নারীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করছে। এই উদ্যোগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে খাদ্যপণ্য তৈরি করে। একইভাবে, বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের তৈরি ‘চারদিকে’ নামের একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম কোরিয়ার পণ্যের বাজার গড়ে তুলেছে।
শুধু স্টার্টআপ নয়, প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোও কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে এগোচ্ছে। যেমন, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে গ্লোবাল ব্র্যান্ড পিএলসি (একটি বাংলাদেশি আইটি পণ্য বিপণনকারী কোম্পানি) এবং কোরিয়ার ফিনটেক কোম্পানি হায়োসাং টিএনএস একযোগে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আধুনিকীকরণের উদ্যোগ ঘোষণা করে। এর আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান উরি ব্যাংক, বাংলাদেশের বিকাশ এবং ব্যাংককম্পেয়ারবিডির সঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত হয়।
বাংলাদেশ শুধু উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতিতে আটকে থাকতে চায় না। ডিজিটাল অর্থনীতি গঠনের লক্ষ্য এখন ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। এই রূপান্তর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করছে, বিশেষ করে ডিজিটাল পেমেন্ট, ই-কমার্স এবং স্মার্ট সিটি প্রকল্পের মাধ্যমে।
এর একটি বড় উদাহরণ মিরসরাই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই এলাকাকে বর্তমানে ‘ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে স্মার্ট শহরের কাঠামো তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে। দক্ষিণ কোরিয়া এই অঞ্চলটিকে ২০২৮ সালের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট শহরে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেছে। এ জন্য তারা উলসান ও শেনজেনের মতো উপকূলীয় শহর থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে—যেগুলো এখন বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
মিরসরাইয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কেবল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যই নয়, বরং প্রযুক্তি-নির্ভর স্টার্টআপ ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানির জন্যও সুবর্ণ সুযোগ। চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় এই অঞ্চলটি একটি স্বনির্ভর ডিজিটাল শহরে রূপান্তরিত হতে পারে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও ডিজিটাল সেবা একসঙ্গে বিকশিত হবে।
ক্রমবর্ধমান জটিল ও আন্তঃসংযুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান কৌশলগত অংশীদার। দেশটি বিপুল জনসংখ্যা, কৌশলগত অবস্থান এবং ডিজিটাল রূপান্তরের পরিষ্কার লক্ষ্য নিয়ে এশিয়ার পরবর্তী প্রবৃদ্ধির গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বাংলাদেশে আরও গভীর সম্পৃক্ততা এক অনন্য সুযোগ। এটি কোরিয়াকে তার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কৌশলকে বৈচিত্র্যময় করতে, উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশীয় দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। ঢাকা ও সিউলের এই উদীয়মান অংশীদারত্ব কেবল বাণিজ্যিক সম্পর্ক নয়—বরং এটি একটি যৌথ অগ্রযাত্রার দিকেই ইঙ্গিত দেয়, যেখানে দুই দেশই একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ভাগ্যগঠনের গল্প লিখতে চলেছে।
লেখক: হিউ হারসানো, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, ব্লকচেইন, ডিজিটাল মুদ্রা এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি নীতি ও কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রভাব গবেষক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আরও খবর পড়ুন:

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
১ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৩ দিন আগে
তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দে
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপের মুখে পড়েও ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্ররা কার্যকর সহযোগিতা থেকে বিরত আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনবিরোধী তথাকথিত ওই ‘স্বৈরশাসকদের জোট’ শান্তিকালে যতটা শক্তিশালী দেখায়, সংকটের সময় ততটাই দুর্বল। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েনের পরও মিত্র দেশগুলো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বাস্তব সহায়তার বদলে শুধু রাজনৈতিক সমর্থন বা শুভেচ্ছা বার্তাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাদুরোর জন্মদিনে নিকারাগুয়ার নেতা ড্যানিয়েল অর্টেগার পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দৃশ্যমান সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে গত তিন মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনী একের পর এক নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে—ওই নৌকাগুলো মাদক পরিবহন করছিল এবং এগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তবে সমালোচকেরা এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভেনেজুয়েলার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চুপ হয়ে থাকা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকছে।
এ বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা, ইরান ও নিকারাগুয়া নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সামরিকভাবে কিছু করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে না। আর অতীতে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলাকে সামরিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিলেও এখন তাদেরও সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, আর চীনের দুর্বল অর্থনীতি তাকে উদার হতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া উভয় দেশই বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমঝোতা চায়। ফলে ভেনেজুয়েলার জন্য দেশ দুটি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
এদিকে খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল বহনকারী দুই ট্যাংকার ভেনেজুয়েলায় হালকা ক্রুড ও ন্যাফথা সরবরাহ করেছে। এই দুটি ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দিয়ে মাদুরোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
একসময় মাদুরোর পূর্বসূরি ও ভেনেজুয়েলার শক্তিমান নেতা হুগো শাভেজ দেশের বিপুল তেলসম্পদকে কাজে লাগিয়ে চীন, কিউবা, ইরানসহ বহু দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। চীনের ব্যাংকগুলো ভেনেজুয়েলাকে অগণিত ঋণ দিয়েছিল, এর বিনিময়ে নিত তেল। কিউবা পাঠাত চিকিৎসক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ, আর দেশটিতে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ইরান। কিন্তু মাদুরোর আমলে অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় এসব সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
চীন এখনো ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ও তেলে ক্রেতা হলেও নতুন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত চীন এখন শুধু ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে পুরোনো ঋণ আদায় করছে। বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে ক্রেডিটর ট্র্যাপ’ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ঋণগ্রহীতার নয়, বরং ঋণদাতার অবস্থাই বেশি বিপদসংকুল।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবিরের ধারণা—মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে চীনের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে ভবিষ্যতে ভেনেজুয়েলার তেল সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকেই প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন বাস্তবতার মধ্যে চীন কত দিন চুপ থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপের মুখে পড়েও ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্ররা কার্যকর সহযোগিতা থেকে বিরত আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনবিরোধী তথাকথিত ওই ‘স্বৈরশাসকদের জোট’ শান্তিকালে যতটা শক্তিশালী দেখায়, সংকটের সময় ততটাই দুর্বল। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েনের পরও মিত্র দেশগুলো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বাস্তব সহায়তার বদলে শুধু রাজনৈতিক সমর্থন বা শুভেচ্ছা বার্তাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাদুরোর জন্মদিনে নিকারাগুয়ার নেতা ড্যানিয়েল অর্টেগার পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দৃশ্যমান সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে গত তিন মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনী একের পর এক নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে—ওই নৌকাগুলো মাদক পরিবহন করছিল এবং এগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তবে সমালোচকেরা এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভেনেজুয়েলার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চুপ হয়ে থাকা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকছে।
এ বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা, ইরান ও নিকারাগুয়া নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সামরিকভাবে কিছু করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে না। আর অতীতে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলাকে সামরিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিলেও এখন তাদেরও সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, আর চীনের দুর্বল অর্থনীতি তাকে উদার হতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া উভয় দেশই বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমঝোতা চায়। ফলে ভেনেজুয়েলার জন্য দেশ দুটি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
এদিকে খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল বহনকারী দুই ট্যাংকার ভেনেজুয়েলায় হালকা ক্রুড ও ন্যাফথা সরবরাহ করেছে। এই দুটি ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দিয়ে মাদুরোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
একসময় মাদুরোর পূর্বসূরি ও ভেনেজুয়েলার শক্তিমান নেতা হুগো শাভেজ দেশের বিপুল তেলসম্পদকে কাজে লাগিয়ে চীন, কিউবা, ইরানসহ বহু দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। চীনের ব্যাংকগুলো ভেনেজুয়েলাকে অগণিত ঋণ দিয়েছিল, এর বিনিময়ে নিত তেল। কিউবা পাঠাত চিকিৎসক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ, আর দেশটিতে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ইরান। কিন্তু মাদুরোর আমলে অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় এসব সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
চীন এখনো ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ও তেলে ক্রেতা হলেও নতুন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত চীন এখন শুধু ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে পুরোনো ঋণ আদায় করছে। বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে ক্রেডিটর ট্র্যাপ’ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ঋণগ্রহীতার নয়, বরং ঋণদাতার অবস্থাই বেশি বিপদসংকুল।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবিরের ধারণা—মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে চীনের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে ভবিষ্যতে ভেনেজুয়েলার তেল সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকেই প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন বাস্তবতার মধ্যে চীন কত দিন চুপ থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

তবে শুধু চীন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত লক্ষ্য—বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং দুই দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আগ্রহ—এই সবকিছুরই মিলনস্থল।
০৭ আগস্ট ২০২৫
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৩ দিন আগে
তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দে
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) নির্মিত এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে দেশীয় সরকারি নিরীক্ষা সংস্থাগুলোর তোলা প্রশ্নগুলো নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
দুবাইয়ে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার নামাংশ শিয়াল-এর মৃত্যু হয়। দুবাই, প্যারিস এবং ফার্নবরোর পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ার শোতে এই দুর্ঘটনা তেজসের সুনাম এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ তেজস কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল বলে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা নীরব হয়ে গেছে। তারা বিকল্প খুঁজছে বলেও খবর এসেছে। এমনিতেই এইচএএল রপ্তানি আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল; তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় সব সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল।
তেজস কর্মসূচি, ১৯৮১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পুরোনো সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বিমান প্রতিস্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়। বিমানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ধারাবাহিক উৎপাদন ও গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর এখন এই দীর্ঘদিনের ত্রুটিগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।
তদন্তে সামনে এসেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দশকের পর দশক ধরে তেজস কর্মসূচির একাধিক ত্রুটি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, এই দুর্ঘটনা সেসব উদ্বেগকে নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে এনেছে। এইচএএল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই ত্রুটিগুলোকে এত দিন অভ্যন্তরীণ, সামাল দেওয়ার মতো সমস্যা হিসেবে গণ্য করলেও এখন সেগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। একজন সাবেক এইচএএল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রজন্মের, যুদ্ধে পরীক্ষিত নয়—এমন একটি বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার দুর্বলতা সব মিলিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হলো, তা ‘গুরুতর এবং সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা কঠিন’।
সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মতো সংস্থাগুলো এলসিএর নকশা, উন্নয়ন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক উৎপাদন পর্যন্ত এর সমস্যাসংকুল পথ নিয়ে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের সিএজি নিরীক্ষায় তেজসের ‘নকশায় গুরুতর ত্রুটি’ এবং ‘প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট (ধাক্কা) সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন’ তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের পিএসি কমিটি সামগ্রিকভাবে এলসিএ কর্মসূচির ‘ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব’-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই প্রকল্পের তদারকি সংস্থাগুলোর ‘বিশৃঙ্খল মনোভাব’ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সমালোচনাও করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএএল, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে একটি ডেডিকেটেড এলসিএ লিয়াজোঁ গ্রুপের অনুপস্থিতির কারণে এমকে-১-এর সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়নি। লিয়াজোঁ গ্রুপ বা পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
এইচএএলের এই দুর্বলতার প্রমাণ মেলে এলসিএর অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্সেও। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিমানবাহিনীর প্রথম তেজস এমকে-১ স্কোয়াড্রন—নম্বর ৪৫ ফ্লাইং ড্যাগার্স—গঠন করা হয়েছিল পাঁচ বছর দেরিতে। এই ১৮টি বিমান ‘প্রাথমিক অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স-২’ (আইওসি-২ )সহ কমিশন করা হয়েছিল। বোঝা যায়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের বেশ চাপ ছিল। স্থানীয়ভাবে এটিকে ৫৩টি সনদে ‘ওয়েভার’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার ২০টি ছাড়পত্র স্থায়ী।
যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে আইওসি মানে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ হলেও তার যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে ফাইনাল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (এফওসি) দিয়ে বোঝানো হয় বিমানটির সম্পূর্ণ মিশন প্রস্তুতি, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সংযোজন এবং কার্যকারিতার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় এমকে-১ স্কোয়াড্রন (নম্বর ১৮ ফ্লাইং বুলেটস) এফওসি মানসম্পন্ন বিমান পেয়েছিল।
দুবাই দুর্ঘটনার আগে ২০২৪ সালের মার্চে জয়সালমিরে যে তেজস বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘তেল ব্যবস্থার ত্রুটি, যার ফলে ইঞ্জিন বিকল’—অর্থাৎ একটি উৎপাদনজনিত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন মান এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণে এইচএএলের দুর্বলতাকে বারবার সামনে এনেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এইচএএলের উৎপাদন গতি নিয়ে বিমানবাহিনী অসন্তুষ্ট। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং প্রকাশ্যে এইচএএলের ধীরগতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এইচএএলের ওপর ‘আস্থাশীল নন’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি মূলত দুটি সংস্থার ‘ভিন্ন ভাষায় কথা বলার’ মধ্যেই নিহিত: বিমানবাহিনী কাজ করে অপারেশনাল মোডে—যা মিশন প্রস্তুতি, সময়সীমা এবং ফ্লাইট নিরাপত্তার মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এইচএএল চলে ‘ফাইল মোডে’, অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্রের টেবিল পরিবর্তনে সময়ক্ষেপণ হয়। এই সাংস্কৃতিক অমিল বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং জরুরি অপারেশনাল উদ্বেগগুলোকে দ্রুত মোকাবিলা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়াও এইচএএলের বৃহত্তম গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বোর্ডে বিমানবাহিনীর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে সংস্থাটির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরাসরি অপারেশনাল মতামত দেওয়ার মতো কোনো প্রতিনিধি এইচএএল পায়নি।
দুবাইয়ের দুর্ঘটনা এইচএএলের ২০০৮-০৯ সালের প্রথম রপ্তানি উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ইকুয়েডরের বিমানবাহিনীর কাছে বিক্রি করা সাতটি ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ফলে ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল হয়। ইকুয়েডর অভিযোগ করেছিল, বিক্রয়-পরবর্তী সহায়তার অভাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি ছিল দুর্ঘটনার কারণ। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক বিমান শিল্প মহলে এইচএএলের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং গ্রাহক প্রতিক্রিয়ায় ঘাটতিই তুলে ধরে।
দুবাইয়ের এই দুর্ঘটনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো এইচএএলের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তেজসের বিষয়ে সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন কেবল মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারবে না। ভারতকে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।

২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) নির্মিত এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে দেশীয় সরকারি নিরীক্ষা সংস্থাগুলোর তোলা প্রশ্নগুলো নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
দুবাইয়ে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার নামাংশ শিয়াল-এর মৃত্যু হয়। দুবাই, প্যারিস এবং ফার্নবরোর পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ার শোতে এই দুর্ঘটনা তেজসের সুনাম এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ তেজস কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল বলে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা নীরব হয়ে গেছে। তারা বিকল্প খুঁজছে বলেও খবর এসেছে। এমনিতেই এইচএএল রপ্তানি আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল; তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় সব সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল।
তেজস কর্মসূচি, ১৯৮১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পুরোনো সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বিমান প্রতিস্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়। বিমানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ধারাবাহিক উৎপাদন ও গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর এখন এই দীর্ঘদিনের ত্রুটিগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।
তদন্তে সামনে এসেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দশকের পর দশক ধরে তেজস কর্মসূচির একাধিক ত্রুটি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, এই দুর্ঘটনা সেসব উদ্বেগকে নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে এনেছে। এইচএএল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই ত্রুটিগুলোকে এত দিন অভ্যন্তরীণ, সামাল দেওয়ার মতো সমস্যা হিসেবে গণ্য করলেও এখন সেগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। একজন সাবেক এইচএএল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রজন্মের, যুদ্ধে পরীক্ষিত নয়—এমন একটি বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার দুর্বলতা সব মিলিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হলো, তা ‘গুরুতর এবং সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা কঠিন’।
সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মতো সংস্থাগুলো এলসিএর নকশা, উন্নয়ন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক উৎপাদন পর্যন্ত এর সমস্যাসংকুল পথ নিয়ে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের সিএজি নিরীক্ষায় তেজসের ‘নকশায় গুরুতর ত্রুটি’ এবং ‘প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট (ধাক্কা) সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন’ তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের পিএসি কমিটি সামগ্রিকভাবে এলসিএ কর্মসূচির ‘ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব’-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই প্রকল্পের তদারকি সংস্থাগুলোর ‘বিশৃঙ্খল মনোভাব’ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সমালোচনাও করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএএল, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে একটি ডেডিকেটেড এলসিএ লিয়াজোঁ গ্রুপের অনুপস্থিতির কারণে এমকে-১-এর সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়নি। লিয়াজোঁ গ্রুপ বা পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
এইচএএলের এই দুর্বলতার প্রমাণ মেলে এলসিএর অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্সেও। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিমানবাহিনীর প্রথম তেজস এমকে-১ স্কোয়াড্রন—নম্বর ৪৫ ফ্লাইং ড্যাগার্স—গঠন করা হয়েছিল পাঁচ বছর দেরিতে। এই ১৮টি বিমান ‘প্রাথমিক অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স-২’ (আইওসি-২ )সহ কমিশন করা হয়েছিল। বোঝা যায়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের বেশ চাপ ছিল। স্থানীয়ভাবে এটিকে ৫৩টি সনদে ‘ওয়েভার’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার ২০টি ছাড়পত্র স্থায়ী।
যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে আইওসি মানে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ হলেও তার যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে ফাইনাল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (এফওসি) দিয়ে বোঝানো হয় বিমানটির সম্পূর্ণ মিশন প্রস্তুতি, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সংযোজন এবং কার্যকারিতার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় এমকে-১ স্কোয়াড্রন (নম্বর ১৮ ফ্লাইং বুলেটস) এফওসি মানসম্পন্ন বিমান পেয়েছিল।
দুবাই দুর্ঘটনার আগে ২০২৪ সালের মার্চে জয়সালমিরে যে তেজস বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘তেল ব্যবস্থার ত্রুটি, যার ফলে ইঞ্জিন বিকল’—অর্থাৎ একটি উৎপাদনজনিত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন মান এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণে এইচএএলের দুর্বলতাকে বারবার সামনে এনেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এইচএএলের উৎপাদন গতি নিয়ে বিমানবাহিনী অসন্তুষ্ট। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং প্রকাশ্যে এইচএএলের ধীরগতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এইচএএলের ওপর ‘আস্থাশীল নন’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি মূলত দুটি সংস্থার ‘ভিন্ন ভাষায় কথা বলার’ মধ্যেই নিহিত: বিমানবাহিনী কাজ করে অপারেশনাল মোডে—যা মিশন প্রস্তুতি, সময়সীমা এবং ফ্লাইট নিরাপত্তার মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এইচএএল চলে ‘ফাইল মোডে’, অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্রের টেবিল পরিবর্তনে সময়ক্ষেপণ হয়। এই সাংস্কৃতিক অমিল বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং জরুরি অপারেশনাল উদ্বেগগুলোকে দ্রুত মোকাবিলা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়াও এইচএএলের বৃহত্তম গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বোর্ডে বিমানবাহিনীর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে সংস্থাটির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরাসরি অপারেশনাল মতামত দেওয়ার মতো কোনো প্রতিনিধি এইচএএল পায়নি।
দুবাইয়ের দুর্ঘটনা এইচএএলের ২০০৮-০৯ সালের প্রথম রপ্তানি উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ইকুয়েডরের বিমানবাহিনীর কাছে বিক্রি করা সাতটি ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ফলে ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল হয়। ইকুয়েডর অভিযোগ করেছিল, বিক্রয়-পরবর্তী সহায়তার অভাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি ছিল দুর্ঘটনার কারণ। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক বিমান শিল্প মহলে এইচএএলের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং গ্রাহক প্রতিক্রিয়ায় ঘাটতিই তুলে ধরে।
দুবাইয়ের এই দুর্ঘটনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো এইচএএলের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তেজসের বিষয়ে সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন কেবল মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারবে না। ভারতকে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।

তবে শুধু চীন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত লক্ষ্য—বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং দুই দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আগ্রহ—এই সবকিছুরই মিলনস্থল।
০৭ আগস্ট ২০২৫
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
১ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৩ দিন আগে
তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দে
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। তবে দিল্লি এখনো কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি।
সর্বশেষ গত বুধবার দিল্লি জানিয়েছে, তারা হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘পরীক্ষা’ করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ‘হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেটেড’ নামে একটি ফটো স্টোরিতে শেখ হাসিনার বিগত ১৭ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তার করা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা এক কথায় জটিল। একসময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেতা, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। পরবর্তী সময় তিনি রূপ নেন একজন কর্তৃত্ববাদী নেতায়, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনাকে এ শাস্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, এই অপরাধে হাসিনার ফাঁসি হওয়া উচিত।










বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। তবে দিল্লি এখনো কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি।
সর্বশেষ গত বুধবার দিল্লি জানিয়েছে, তারা হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘পরীক্ষা’ করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ‘হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেটেড’ নামে একটি ফটো স্টোরিতে শেখ হাসিনার বিগত ১৭ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তার করা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা এক কথায় জটিল। একসময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেতা, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। পরবর্তী সময় তিনি রূপ নেন একজন কর্তৃত্ববাদী নেতায়, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনাকে এ শাস্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, এই অপরাধে হাসিনার ফাঁসি হওয়া উচিত।










তবে শুধু চীন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত লক্ষ্য—বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং দুই দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আগ্রহ—এই সবকিছুরই মিলনস্থল।
০৭ আগস্ট ২০২৫
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
১ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
২ দিন আগে
তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দে
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাব উত্থাপনের মাঝে ট্রাম্প দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন, যারা এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। তাঁরা হলেন—পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
ওই অনুষ্ঠানে স্বল্প সময়ের জন্য নাম দুটি উচ্চারিত হয়েছিল, কিন্তু সেটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দেন। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, শাহবাজ শরিফ সরকারপ্রধান হলেও প্রকৃত ক্ষমতা মুনিরের হাতেই বাঁধা।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান বারবার বেসামরিক ও সামরিক শাসনের দোলাচলে দুলেছে। দেশটিতে সর্বশেষ অভ্যুত্থান হয় ১৯৯৯ সালে। সে সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে (শাহবাজের বড় ভাই) ক্ষমতাচ্যুত করে তখতে আসীন হন। ২০০৮ সালে পাকিস্তান আবার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এরপর কয়েক দফা বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে, সামরিক চাপের ভেতরেও তারা কিছু নীতিনির্ধারণী স্বাধীনতা পেয়েছিল, দেশীয় এজেন্ডার একটা অংশ ঠিক করতে পেরেছিল, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিল। সেই দিনগুলো এখন অতীত। চোখে পড়ার মতো কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই এখন দেশ চালাচ্ছে জেনারেলরা, আর বেসামরিক নেতৃত্ব শুধু বাহারি পোস্টার।
একে বলা যায় ‘মুনির মডেল’ নামে। গণতন্ত্রের আবরণে সামরিক নিয়ন্ত্রণ। ২০০৮ সালে সরাসরি সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর থেকে এটাই পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর সবচেয়ে তীক্ষ্ণ পুনর্গঠন। এই ব্যবস্থায় সেনাবাহিনী আর আড়ালে থেকে সুতো টানে না, বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাশ কাটিয়ে বা কখনো সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শাসন করে। নীতি প্রণয়ন থেকে কূটনীতি, অর্থনীতির দিকনির্দেশনা—সবকিছুতেই তাদের হাতের ছোঁয়া স্পষ্ট। নিরাপত্তা আর গোয়েন্দা বিষয় তো তাদের ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের ক্ষেত্র হিসেবে আছেই।
ক্ষমতার এই সংহতি এখন শুধু অলিখিত প্রথায় সীমাবদ্ধ নেই, আইনেও গাঁথা হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন করে মুনিরকে দেশের সব বাহিনীর শীর্ষে বসিয়েছে। তাঁকে দেওয়া হয়েছে আজীবন আইনি দায়মুক্তি আর নবায়নযোগ্য ৫ বছরের মেয়াদ। অর্থাৎ, সেনাপ্রধানের চারপাশে বিস্তৃত এক নতুন কমান্ড কাঠামো আইনগত রূপ পেয়েছ, আর তিনি চাইলে মোট ১০ বছর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ বছরের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন হাইব্রিড। সামরিক ও বেসামরিক সরকার ‘ক্ষমতার কাঠামোর যৌথ মালিক।’ কোনো লজ্জা ছাড়াই তিনি যোগ করেন, ‘এই হাইব্রিড ব্যবস্থাটা দারুণ কাজ করছে।’
সেনাপ্রধানের সমর্থকেরা অবশ্য বিগত এক বছরের ‘দারুণ কাজের’ ফিরিস্তি তুলে ধরবেন। মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তান নতুন আইএমএফ ঋণ পেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ চালু হয়েছে, যেখান থেকে নতুন বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এসেছে। সামরিক নেতৃত্বে গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল এখন বিদেশি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার মূল রাষ্ট্রীয় প্ল্যাটফর্ম—বিশেষ করে জ্বালানি, কৃষি ও খনিজ খাতে।
সমর্থকদের মতে, এমন কেন্দ্রীভূত ও সামরিক-নির্ভর শাসন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর এক ধরনের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু, এখন যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কার্যত সেনাবাহিনীর হাতে, তখন সেনা কর্মকর্তাদেরও আর আড়ালে থাকার জায়গা নেই। দেশের সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার দায়ও এখন তাঁদের কাঁধেই পড়বে।
রাষ্ট্র গলঃধকরণ
২০২২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তখন প্রায় সবারই ধারণা ছিল, তাঁর পতনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা আছে। এরপর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা পুরোপুরি সামরিক সমর্থনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। বেসামরিক সরকারের পার্লামেন্টারি আবরণ ছিল, কিন্তু দেশের কঠিনতম কাজগুলো সামলাচ্ছিল সেনাবাহিনীই। ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, রাজনৈতিক অস্থিরতা দমন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নজরদারি, বিদেশনীতি পরিচালনা—সবই ছিল জেনারেলদের হাতে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সেই বাস্তবতাকেই আবারও পুনর্নিশ্চিত করে। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞায় ইমরান খানের দল দলীয়ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারেনি; নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবেই অংশ নিতে হয়। তবু তারা সর্বাধিক আসন পায়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়তে পারেনি। শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ আবারও দুর্বল জোট সরকারের নেতৃত্বে ফিরে আসে। তারা পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে। জাতীয় পরিষদের এই অঙ্ক তাদের বৈধতা দিতে পারে বটে, কিন্তু ক্ষমতার প্রকৃত ভিত্তি ছিল সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, আদালত ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা—সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক মাঠ কারা সাজাবে, কোন জোট সরকারে আসবে এবং কত দূর শাসন করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতেই ছিল।
এই পথ বেছে নিতে বেসামরিক রাজনীতিবিদদের খুব একটা দ্বিধা ছিল না। শাহবাজের মন্ত্রিসভার এক সদস্য ২০২৩ সালে বলেছিলেন, ‘ইমরান খানকে সেনাবাহিনী ছাড়া আমরা সরাতে পারব না।’ ২০২৩-এর আগস্টে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাওয়া কিছু রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি থেকে অর্জিত আয়ের তথ্য তিনি গোপন করেছিলেন, যা পাকিস্তানি আইনে দণ্ডনীয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে। তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাঁর মোকাবিলা বেসামরিক রাজনীতির সামর্থ্যের বাইরে বলে অনেকেই মনে করেন। নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তাদের সুযোগ করে দেয় ইমরানের রাজনৈতিক আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, তাঁর দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনকে নিজেদের মতো রূপ দিতে। ইমরানবিরোধীদের সঙ্গে জেনারেলদের শুরুতে কৌশলগত যে জোট হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কাঠামোগত ক্ষমতা হস্তান্তরে রূপ নেয়।
দুই বছর কেটে গেছে। ইমরান খান এখনো কারাগারে, জনসমক্ষে কার্যত অদৃশ্য। এমন সব মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে যেগুলোকে অধিকাংশ পাকিস্তানি ন্যায্য মনে করেন না। ২০২২ সালে তাঁকে সরিয়ে রাজনৈতিক সংকট থামানোর যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, সেটি এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু সেই দুর্বল মুহূর্তে বেসামরিক রাজনীতিবিদেরা যে ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। বরং আরও বিস্তৃত হয়েছে। শুরু হয়েছিল একজন মানুষকে কেন্দ্র করে, শেষে এসে রাষ্ট্রটাই গিলে ফেলা হলো।
ফিল্ড মার্শালের সুখের সময়
ঘটনাটি ঘটে ২০২৫ সালের মে মাসে, ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ ছিল ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরে একটি হামলা। এই হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের ওপর দায় চাপায়। শুরু হয় যুদ্ধ। কয়েক দিনের লড়াইয়ের পর দুই পক্ষই সরে আসে, যুদ্ধ থেমে যায়। পাকিস্তান বিজয় দাবি করে এবং দেশটির সাধারণ মানুষও তা বিশ্বাস করে। ভারত ও তার জনগণও তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিজয় মনে করে। তবে মাঠের কাহিনির চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যুদ্ধবিরতি কৌশল। প্রকাশ্যে আসে যে, শাহবাজ শরিফ ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে কার্যত পাশ কাটিয়ে যুদ্ধ থামানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মুনিরের সঙ্গে কাজ করেছে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ও বিদেশিদের কাছে একটি পুরোনো একটি সত্য আবারও প্রমাণিত হয় যে, যুদ্ধ ও শান্তির চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে।
পরবর্তী মাসগুলোতে এই যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া পাকিস্তানের ক্ষমতা ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি হয়ে দাঁড়ায়। জুনে ট্রাম্প মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় কোনো বেসামরিক নেতা তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন না। ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের কোনো বেসামরিক নেতাকে আতিথেয়তা না দিয়ে একা কেবল সেনাপ্রধানকে গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর নিজস্ব বিবরণ অনুযায়ী—বৈঠকের বিষয়বস্তু কেবল নিরাপত্তা নয়, সেখানে ছিল বাণিজ্য, শক্তি, প্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিরল খনিজসম্পদের আলোচনা। এসব বিষয় একসময় বেসামরিক সরকারের দায়িত্ব থাকলেও, তা এখন সরাসরি জেনারেলের ডেস্কে চলে আসে।
চলতি বছরের গ্রীষ্ম শেষের দিকে, মুনিরের নেতৃত্বে নতুন অর্থনৈতিক কূটনীতি শুরু হয়। জুলাইয়ে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেন, যেখানে পাকিস্তান এই অঞ্চলে সবচেয়ে কম, মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্কে সুবিধা পায়। এ ছাড়া, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি, খনি ও জ্বালানি প্রকল্পের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে।
এসব বিষয় স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এবং কৌশলগত শিল্পের ওপর কেন্দ্রীয় নজরদারির গঠন করা হয়। এই সংস্থায় সামরিক–বেসামরিক যৌথ নেতৃত্ব আছে। প্রধানমন্ত্রী এই সংস্থার চেয়ারম্যান হলেও সেনাপ্রধান সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা অ্যাপেক্স কমিটির সদস্য এবং একজন কর্মরত জেনারেল জাতীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এই নতুন চ্যানেলের মাধ্যমে বহু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন নামে সেনা পরিচালিত একটি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরিভিত্তিক ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালসের সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল খনিজ রপ্তানির চুক্তি করে। ইসলামাবাদে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মুনির নিজেই এই চুক্তি তদারকি করেছেন।
এরপর হোয়াইট হাউসে আবারও বৈঠকে বসেন মুনির। গত ২৬ সেপ্টেম্বর অবশ্য মুনির ও শরিফ একসঙ্গে ওয়াশিংটনে যান। এটি ছিল ট্রাম্পের সঙ্গে মুনিরের দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। সেনাপ্রধান ট্রাম্পের সামনে পাকিস্তানের বিরল খনিজ ও রত্ন উপস্থাপন করছেন—এমন একটি ছবি সে সময় ব্যাপক প্রচার করা হয়। এটি হয়তো বিক্রেতার একটি প্রচারণামূলক ক্যাম্পেইন, কিন্তু তা এক ধরনের নীতিমালার ঘোষণাও বটে। সেটা হলো—পাকিস্তানের নতুন কূটনীতিতে সেনাবাহিনী হলো গ্যারান্টর, আলোচক এবং চূড়ান্ত সমঝোতার কারিগর।
অতীতের সঙ্গে তুলনা ইঙ্গিতপূর্ণ। ২০১৯ সালে ইমরান খান যখন হোয়াইট হাউসে যান, তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া তাঁর সঙ্গে গেলেও তিনি সেখানে কেবলই আলঙ্কারিকভাবে উপস্থিত ছিলেন এবং শুধুমাত্র কিছু সরকারি ছবিতে বাজওয়াকে দেখা গেছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে মুনির আর পেছনে থাকা নীরব পর্যবেক্ষক নন। তিনি নীতিনির্ধারণের প্রধান অংশ। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ—পাকিস্তানে এখন এমন এক ক্ষমতা ব্যবস্থা বিরাজ করছে, যেখানে ক্ষমতার আসল ঠিকানা লুকানোর চেষ্টা বন্ধ হয়ে গেছে।
ওভাল অফিসে সেই বৈঠকের তিন দিন পর ট্রাম্প তাঁর গাজা পরিকল্পনা প্রচারের সময় শরিফ ও মুনিরের নাম উল্লেখ করেন। এই উল্লেখ ইসলামাবাদকে সন্তুষ্ট করেছে। এটি পাকিস্তান সরকারকে ভৌগোলিক ও কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টার সমর্থন বলেই মনে হয়েছে। বিশেষ করে, এমন সময়ে যখন ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্র–ভারতের সম্পর্কের অস্থির মুহূর্তে ইসলামাবাদ তার দীর্ঘমেয়াদি মিত্র উপসাগরীয় দেশগুলোর শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে অনন্য অবস্থান ব্যবহার করতে পারে যা ওয়াশিংটনকে আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায়, উপসাগরীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে এবং যেসব খেলোয়াড়কে সরাসরি প্রভাবিত করা যায় না তাদের সঙ্গে চ্যানেল রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানকে গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, যা পাকিস্তানি কূটনীতিতে সেনাবাহিনীর এগিয়ে আসার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এই পরিবর্তন অতীতের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ নয়, বরং পরিচিত ধারা নতুন সময়ের সাপেক্ষে আপডেট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে পাকিস্তানি সামরিক শক্তিধরদের বেছে নিয়েছেন। ১৯৬০-এর দশকে যখন ওয়াশিংটন এশিয়ায় নির্ভরযোগ্য স্নায়ুযুদ্ধের পার্টনার খুঁজছিল তখন আইয়ুব খান; ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সোভিয়েতবিরোধী জিহাদ চলাকালে জিয়াউল হক এবং ৯ / ১১-এর পরে পারভেজ মোশাররফ যুক্তরাষ্ট্রের আস্থায় ছিলেন।
তবে বর্তমান সময়ের ভিন্নতা হলো, মুনির এই প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছেছেন কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই। সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক শাসন কাঠামোর ভেতরে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে। বিনিয়োগ সংস্থা পরিচালনা, বৈদেশিক নীতি গঠন, কমান্ড ক্ষমতার পুনর্গঠন এবং সেনাপ্রধানকে বেসামরিক ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিদেশের অনেকের কাছে পাকিস্তানের ইউনিফর্ম পরা নেতৃত্বের স্পষ্টতা গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর জন্যও এই হাইব্রিড শাসন গ্রহণ করা যৌক্তিক। মুনির সাধারণ কোনো সেনাপ্রধান নন। এই বছরের শুরুতে তাঁকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে (প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথম), সেনাপ্রধান হিসেবে মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে, সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে এবং এখন অর্থনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি সাম্প্রতিক স্মৃতির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেনা কর্মকর্তা।
তাঁর উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিরূপ বিষয় হলো—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের চোখে সেনাবাহিনী বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিল। ইমরান খানের অপসারণ ও পরবর্তী অস্থিরতা লাখ লাখ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিনের পৃষ্ঠপোষকতা থাকা সত্ত্বেও দেশের ক্ষতিকর বল মনে করতে শুরু করেছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে খানের সমর্থকেরা সেনা স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, যার মধ্যে লাহোরে করপস কমান্ডারের বাসভবনও ছিল, যা পাকিস্তানে অনন্য ঘটনা। জেনারেলরা মনে করেন, ছায়ায় থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। বরং প্রকাশ্যভাবে নেতৃত্ব দাবি করা ভালো, খলনায়ক সাজার নাটক আর নয়, বরং স্থিতিশীলতার শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করা ভালো এবং প্রয়োজন।
তাদের হিসাব স্পষ্ট—ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘর্ষের পর জনপ্রিয়তা বাড়ার পর, জেনারেলরা বুঝেছেন যে, অর্থনৈতিক কূটনীতি, বিনিয়োগ চুক্তি এবং অন্যান্য উদ্যোগ যদি জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জন করতে চায়, তবে তা খোলামেলাভাবে করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, সেনাবাহিনী এখন কেবল ক্ষমতা একত্রিত করছে না, বরং নিজেকে দেশের অপরিহার্য জীবনরেখা হিসেবে বাজারে উপস্থাপন করছে।
অদৃশ্য নয়, দৃশ্যমান হাত
পাকিস্তান আগেও সামরিক শাসন দেখেছে, কিন্তু আজকের পরিস্থিতি শুধুমাত্র আইয়ুব, জিয়াউল বা মোশাররফের যুগের পুনরাবৃত্তি নয়। এখানে কোনো অভ্যুত্থান হয়নি, সংবিধান স্থগিত হয়নি, পার্লামেন্টও বাতিল হয়নি। যে বিষয়টি এই মুহূর্তকে আলাদা এবং তাৎপর্যপূর্ণ করছে তা হলো—সেনাবাহিনী এখন গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই কাজ করছে, বাইরে থেকে নয়। জেনারেলরা কার্যত রাজনৈতিক ব্যবস্থা দখল করেছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সেটিকে নতুন কোনো ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেনি। এটি প্রাতিষ্ঠানিক সীমারেখাকে আরও অস্পষ্ট করে তুলেছে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনকে বছরের পর বছর প্রভাবিত করবে।
এই পরিবর্তনে অনেক কিছুই অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয়েছে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্ষমতা কাঠামোর মূল খেলোয়াড়দের মনোভাব বদলে দেয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করে এবং দেশ যে আন্তর্জাতিক পরিবেশে চলাফেরা করে সেটাকেও বদলে দেয়। এর একটি প্রভাব হলো—এই পুরো পরিবর্তন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এবং বেসামরিক জনজীবনে সামরিক আধিপত্যকে স্বাভাবিক করে তোলে। রাজনৈতিক দলগুলো এখানে আর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে না থেকে স্রেফ প্রশাসনিক সংযোজন হিসেবে পরিণত হয়। পার্লামেন্ট হয়ে যায় নাট্যমঞ্চ এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন অন্য কোথাও নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রশাসক। এটি হলো রাজনীতিবিদদের সেই চুক্তির মূল্য, যা ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে করা হয়েছিল।
তবে ক্ষমতা কাঠামোতে সেনাবাহিনীর দৃশ্যমান অবস্থান নতুন ধরনের জবাবদিহি তৈরি করে। যখন সেনাবাহিনী খোলাখুলি নীতি নির্ধারণ করে, তখন তার ফলাফলও গ্রহণ করতে হয়। বৃদ্ধি থমকে গেলে, বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লে—জেনারেলরা অযোগ্য মন্ত্রিপরিষদকে দোষ দিতে পারবে না। প্রদর্শিত ক্ষমতা সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার জন্যও জবাবদিহি করতে বাধ্য। এই ডাইনামিকস এরই মধ্যে স্পষ্ট। সামরিক নেতৃত্ব বারবার জনমত জরিপের কথা উল্লেখ করছে, প্রেস ব্রিফিংয়ে তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে উকালতি করছে এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অর্জনের ক্রেডিট চাইছে। এটি দেখায় যে, জেনারেলরা এখন নতুনভাবে সচেতন যে, অর্জন ব্যর্থ হলে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
বেসামরিক ক্ষমতাকাঠামোর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইপাস করার বিষয়টি সেনাবাহিনীকে দ্বিধার সম্মুখীন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের কথা বলা যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত শিল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলো সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাখা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়গুলোকে দুর্বল করতে পারে, বেসামরিক বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করতে পারে এবং পার্লামেন্টারি তদারকি, গণমাধ্যমের সমালোচনা ও বিরোধীদের নজরদারি কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এসব বিষয়ই মূলত গণতন্ত্রে সরকারকে আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয়।
যখন একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা কতিপয় এলিট জেনারেলর মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়, তখন তা ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের অতীত সামরিক সরকারের উদাহরণ এটি স্পষ্ট দেখিয়েছ। সামরিক শাসন প্রায়ই সাময়িক স্থিতিশীলতা দেয়, কিন্তু বৃদ্ধি থেমে গেলে বা সংকট এলে, প্রাতিষ্ঠানিক বাফারের অভাব দ্রুত পতন ত্বরান্বিত করে।
ইমরান খানের দুই বছরের কারাবাস সামরিক বাহিনীর দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যে দেশকে খোলেআম শাসন করছে—সেটা নিশ্চিত করার জন্য হয় নির্বাচন বা ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে, নতুবা তাঁকে চিরতরে রাজনৈতিক অঙ্গনে থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দুই পথই বিপজ্জনক। পুনর্বাসন নতুন শৃঙ্খলাকে অস্থির করতে পারে, অপরদিকে অবিরাম দমন সেনাবাহিনীর শাসনের বৈধতা দ্রুত ক্ষয় করে দিতে পারে।
যদিও কিছু দেশ—যেমন যুক্তরাষ্ট্র—সামরিক নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কারণ, সেনাপ্রধানের দৃশ্যমান ভূমিকায় কার্যত নেতা হিসেবে থাকা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির পরিসর ছোট করে আনতে পারে পারে। এর ফলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিরাপত্তা কেন্দ্রিক হয়ে যাবে, যা মূলত বেসামরিক প্রশাসনের বিপরীতে সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ফলে সংলাপ কঠিন হবে এবং উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যে—যেখানে পাকিস্তান সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—সামরিক নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান অন্যান্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশে আরও গভীরভাবে যুক্ত হবে, যার ফলে ইরানের সঙ্গে নীতিগত বিচ্যুতি এবং পাকিস্তানের অযাচিত সংঘর্ষে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
পর্দা সরে গেছে, মঞ্চ আলোকিত
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানের ডিপ স্টেট জেনারেলদের দায়িত্বহীনভাবে ক্ষমতায় থাকতে দিয়েছে, আর ব্যর্থতার বোঝা তুলে দিয়েছে সাধারণ নাগরিকদের কাঁধে। মুনির মডেল সেই চুক্তি উল্টে দিয়েছে। সেনা শক্তিকে প্রকাশ্য এনে সেনাবাহিনী কার্যকারিতা ও দ্রুততার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই চুক্তি উর্দি ও প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার ফারাকটুকুও মুছে দিয়েছে। এটি কোনো ক্রমবর্ধমান অভ্যুত্থান নয়। এটি আরও সূক্ষ্ম কিছু: কৌশলগত সংহতি। সেনারা তাদের প্রাধান্যকে গোপন না করেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
হাস্যকর হলে সত্যি যে, এখন শাহবাজ শরিফ সেই ব্যবস্থারই প্রধান, যা তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফ এক সময় প্রতিরোধ করেছিলেন। বড় ভাই যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি জেনারেলদের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তখনকার সেনাপ্রধান জাহাঙ্গীর করমাত তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মতো একটি সংবিধানগত কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন—যেখানে শাসনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হতো। নওয়াজ সেটিকে বেসামরিক শাসনে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই নওয়াজ করমাতকে পদত্যাগ করতে বলেন। সেই প্রথম পাকিস্তানের রাজনৈতিক যুদ্ধে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী জিতেছিলেন, জেনারেল নয়। শাহবাজের অধীনে পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টে গেছে।
এই শাসনকে বিভিন্ন চটকদার কিন্তু শালীন ভাষা বাদ দিলে, এই হাইব্রিড মডেল হলো—পুরোনো সত্যকে নতুন আঙ্গিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা—সেনারা শাসন চালায় এবং বেসামরিক প্রশাসন তা মেনে চলে। এখন পার্থক্য শুধু এটুকুই যে পর্দা সরে গেছে, মঞ্চ পুরোপুরি আলোকিত—যেন সবাই তা দেখতে পারে।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাব উত্থাপনের মাঝে ট্রাম্প দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন, যারা এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। তাঁরা হলেন—পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
ওই অনুষ্ঠানে স্বল্প সময়ের জন্য নাম দুটি উচ্চারিত হয়েছিল, কিন্তু সেটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দেন। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, শাহবাজ শরিফ সরকারপ্রধান হলেও প্রকৃত ক্ষমতা মুনিরের হাতেই বাঁধা।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান বারবার বেসামরিক ও সামরিক শাসনের দোলাচলে দুলেছে। দেশটিতে সর্বশেষ অভ্যুত্থান হয় ১৯৯৯ সালে। সে সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে (শাহবাজের বড় ভাই) ক্ষমতাচ্যুত করে তখতে আসীন হন। ২০০৮ সালে পাকিস্তান আবার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এরপর কয়েক দফা বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে, সামরিক চাপের ভেতরেও তারা কিছু নীতিনির্ধারণী স্বাধীনতা পেয়েছিল, দেশীয় এজেন্ডার একটা অংশ ঠিক করতে পেরেছিল, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিল। সেই দিনগুলো এখন অতীত। চোখে পড়ার মতো কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই এখন দেশ চালাচ্ছে জেনারেলরা, আর বেসামরিক নেতৃত্ব শুধু বাহারি পোস্টার।
একে বলা যায় ‘মুনির মডেল’ নামে। গণতন্ত্রের আবরণে সামরিক নিয়ন্ত্রণ। ২০০৮ সালে সরাসরি সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর থেকে এটাই পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর সবচেয়ে তীক্ষ্ণ পুনর্গঠন। এই ব্যবস্থায় সেনাবাহিনী আর আড়ালে থেকে সুতো টানে না, বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাশ কাটিয়ে বা কখনো সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শাসন করে। নীতি প্রণয়ন থেকে কূটনীতি, অর্থনীতির দিকনির্দেশনা—সবকিছুতেই তাদের হাতের ছোঁয়া স্পষ্ট। নিরাপত্তা আর গোয়েন্দা বিষয় তো তাদের ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের ক্ষেত্র হিসেবে আছেই।
ক্ষমতার এই সংহতি এখন শুধু অলিখিত প্রথায় সীমাবদ্ধ নেই, আইনেও গাঁথা হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন করে মুনিরকে দেশের সব বাহিনীর শীর্ষে বসিয়েছে। তাঁকে দেওয়া হয়েছে আজীবন আইনি দায়মুক্তি আর নবায়নযোগ্য ৫ বছরের মেয়াদ। অর্থাৎ, সেনাপ্রধানের চারপাশে বিস্তৃত এক নতুন কমান্ড কাঠামো আইনগত রূপ পেয়েছ, আর তিনি চাইলে মোট ১০ বছর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ বছরের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন হাইব্রিড। সামরিক ও বেসামরিক সরকার ‘ক্ষমতার কাঠামোর যৌথ মালিক।’ কোনো লজ্জা ছাড়াই তিনি যোগ করেন, ‘এই হাইব্রিড ব্যবস্থাটা দারুণ কাজ করছে।’
সেনাপ্রধানের সমর্থকেরা অবশ্য বিগত এক বছরের ‘দারুণ কাজের’ ফিরিস্তি তুলে ধরবেন। মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তান নতুন আইএমএফ ঋণ পেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ চালু হয়েছে, যেখান থেকে নতুন বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এসেছে। সামরিক নেতৃত্বে গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল এখন বিদেশি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার মূল রাষ্ট্রীয় প্ল্যাটফর্ম—বিশেষ করে জ্বালানি, কৃষি ও খনিজ খাতে।
সমর্থকদের মতে, এমন কেন্দ্রীভূত ও সামরিক-নির্ভর শাসন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর এক ধরনের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু, এখন যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কার্যত সেনাবাহিনীর হাতে, তখন সেনা কর্মকর্তাদেরও আর আড়ালে থাকার জায়গা নেই। দেশের সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার দায়ও এখন তাঁদের কাঁধেই পড়বে।
রাষ্ট্র গলঃধকরণ
২০২২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তখন প্রায় সবারই ধারণা ছিল, তাঁর পতনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা আছে। এরপর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা পুরোপুরি সামরিক সমর্থনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। বেসামরিক সরকারের পার্লামেন্টারি আবরণ ছিল, কিন্তু দেশের কঠিনতম কাজগুলো সামলাচ্ছিল সেনাবাহিনীই। ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, রাজনৈতিক অস্থিরতা দমন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নজরদারি, বিদেশনীতি পরিচালনা—সবই ছিল জেনারেলদের হাতে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সেই বাস্তবতাকেই আবারও পুনর্নিশ্চিত করে। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞায় ইমরান খানের দল দলীয়ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারেনি; নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবেই অংশ নিতে হয়। তবু তারা সর্বাধিক আসন পায়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়তে পারেনি। শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ আবারও দুর্বল জোট সরকারের নেতৃত্বে ফিরে আসে। তারা পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে। জাতীয় পরিষদের এই অঙ্ক তাদের বৈধতা দিতে পারে বটে, কিন্তু ক্ষমতার প্রকৃত ভিত্তি ছিল সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, আদালত ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা—সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক মাঠ কারা সাজাবে, কোন জোট সরকারে আসবে এবং কত দূর শাসন করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতেই ছিল।
এই পথ বেছে নিতে বেসামরিক রাজনীতিবিদদের খুব একটা দ্বিধা ছিল না। শাহবাজের মন্ত্রিসভার এক সদস্য ২০২৩ সালে বলেছিলেন, ‘ইমরান খানকে সেনাবাহিনী ছাড়া আমরা সরাতে পারব না।’ ২০২৩-এর আগস্টে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাওয়া কিছু রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি থেকে অর্জিত আয়ের তথ্য তিনি গোপন করেছিলেন, যা পাকিস্তানি আইনে দণ্ডনীয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে। তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাঁর মোকাবিলা বেসামরিক রাজনীতির সামর্থ্যের বাইরে বলে অনেকেই মনে করেন। নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তাদের সুযোগ করে দেয় ইমরানের রাজনৈতিক আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, তাঁর দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনকে নিজেদের মতো রূপ দিতে। ইমরানবিরোধীদের সঙ্গে জেনারেলদের শুরুতে কৌশলগত যে জোট হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কাঠামোগত ক্ষমতা হস্তান্তরে রূপ নেয়।
দুই বছর কেটে গেছে। ইমরান খান এখনো কারাগারে, জনসমক্ষে কার্যত অদৃশ্য। এমন সব মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে যেগুলোকে অধিকাংশ পাকিস্তানি ন্যায্য মনে করেন না। ২০২২ সালে তাঁকে সরিয়ে রাজনৈতিক সংকট থামানোর যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, সেটি এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু সেই দুর্বল মুহূর্তে বেসামরিক রাজনীতিবিদেরা যে ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। বরং আরও বিস্তৃত হয়েছে। শুরু হয়েছিল একজন মানুষকে কেন্দ্র করে, শেষে এসে রাষ্ট্রটাই গিলে ফেলা হলো।
ফিল্ড মার্শালের সুখের সময়
ঘটনাটি ঘটে ২০২৫ সালের মে মাসে, ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ ছিল ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরে একটি হামলা। এই হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের ওপর দায় চাপায়। শুরু হয় যুদ্ধ। কয়েক দিনের লড়াইয়ের পর দুই পক্ষই সরে আসে, যুদ্ধ থেমে যায়। পাকিস্তান বিজয় দাবি করে এবং দেশটির সাধারণ মানুষও তা বিশ্বাস করে। ভারত ও তার জনগণও তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিজয় মনে করে। তবে মাঠের কাহিনির চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যুদ্ধবিরতি কৌশল। প্রকাশ্যে আসে যে, শাহবাজ শরিফ ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে কার্যত পাশ কাটিয়ে যুদ্ধ থামানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মুনিরের সঙ্গে কাজ করেছে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ও বিদেশিদের কাছে একটি পুরোনো একটি সত্য আবারও প্রমাণিত হয় যে, যুদ্ধ ও শান্তির চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে।
পরবর্তী মাসগুলোতে এই যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া পাকিস্তানের ক্ষমতা ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি হয়ে দাঁড়ায়। জুনে ট্রাম্প মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় কোনো বেসামরিক নেতা তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন না। ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের কোনো বেসামরিক নেতাকে আতিথেয়তা না দিয়ে একা কেবল সেনাপ্রধানকে গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর নিজস্ব বিবরণ অনুযায়ী—বৈঠকের বিষয়বস্তু কেবল নিরাপত্তা নয়, সেখানে ছিল বাণিজ্য, শক্তি, প্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিরল খনিজসম্পদের আলোচনা। এসব বিষয় একসময় বেসামরিক সরকারের দায়িত্ব থাকলেও, তা এখন সরাসরি জেনারেলের ডেস্কে চলে আসে।
চলতি বছরের গ্রীষ্ম শেষের দিকে, মুনিরের নেতৃত্বে নতুন অর্থনৈতিক কূটনীতি শুরু হয়। জুলাইয়ে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেন, যেখানে পাকিস্তান এই অঞ্চলে সবচেয়ে কম, মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্কে সুবিধা পায়। এ ছাড়া, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি, খনি ও জ্বালানি প্রকল্পের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে।
এসব বিষয় স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এবং কৌশলগত শিল্পের ওপর কেন্দ্রীয় নজরদারির গঠন করা হয়। এই সংস্থায় সামরিক–বেসামরিক যৌথ নেতৃত্ব আছে। প্রধানমন্ত্রী এই সংস্থার চেয়ারম্যান হলেও সেনাপ্রধান সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা অ্যাপেক্স কমিটির সদস্য এবং একজন কর্মরত জেনারেল জাতীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এই নতুন চ্যানেলের মাধ্যমে বহু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন নামে সেনা পরিচালিত একটি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরিভিত্তিক ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালসের সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল খনিজ রপ্তানির চুক্তি করে। ইসলামাবাদে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মুনির নিজেই এই চুক্তি তদারকি করেছেন।
এরপর হোয়াইট হাউসে আবারও বৈঠকে বসেন মুনির। গত ২৬ সেপ্টেম্বর অবশ্য মুনির ও শরিফ একসঙ্গে ওয়াশিংটনে যান। এটি ছিল ট্রাম্পের সঙ্গে মুনিরের দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। সেনাপ্রধান ট্রাম্পের সামনে পাকিস্তানের বিরল খনিজ ও রত্ন উপস্থাপন করছেন—এমন একটি ছবি সে সময় ব্যাপক প্রচার করা হয়। এটি হয়তো বিক্রেতার একটি প্রচারণামূলক ক্যাম্পেইন, কিন্তু তা এক ধরনের নীতিমালার ঘোষণাও বটে। সেটা হলো—পাকিস্তানের নতুন কূটনীতিতে সেনাবাহিনী হলো গ্যারান্টর, আলোচক এবং চূড়ান্ত সমঝোতার কারিগর।
অতীতের সঙ্গে তুলনা ইঙ্গিতপূর্ণ। ২০১৯ সালে ইমরান খান যখন হোয়াইট হাউসে যান, তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া তাঁর সঙ্গে গেলেও তিনি সেখানে কেবলই আলঙ্কারিকভাবে উপস্থিত ছিলেন এবং শুধুমাত্র কিছু সরকারি ছবিতে বাজওয়াকে দেখা গেছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে মুনির আর পেছনে থাকা নীরব পর্যবেক্ষক নন। তিনি নীতিনির্ধারণের প্রধান অংশ। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ—পাকিস্তানে এখন এমন এক ক্ষমতা ব্যবস্থা বিরাজ করছে, যেখানে ক্ষমতার আসল ঠিকানা লুকানোর চেষ্টা বন্ধ হয়ে গেছে।
ওভাল অফিসে সেই বৈঠকের তিন দিন পর ট্রাম্প তাঁর গাজা পরিকল্পনা প্রচারের সময় শরিফ ও মুনিরের নাম উল্লেখ করেন। এই উল্লেখ ইসলামাবাদকে সন্তুষ্ট করেছে। এটি পাকিস্তান সরকারকে ভৌগোলিক ও কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টার সমর্থন বলেই মনে হয়েছে। বিশেষ করে, এমন সময়ে যখন ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্র–ভারতের সম্পর্কের অস্থির মুহূর্তে ইসলামাবাদ তার দীর্ঘমেয়াদি মিত্র উপসাগরীয় দেশগুলোর শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে অনন্য অবস্থান ব্যবহার করতে পারে যা ওয়াশিংটনকে আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায়, উপসাগরীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে এবং যেসব খেলোয়াড়কে সরাসরি প্রভাবিত করা যায় না তাদের সঙ্গে চ্যানেল রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানকে গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, যা পাকিস্তানি কূটনীতিতে সেনাবাহিনীর এগিয়ে আসার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এই পরিবর্তন অতীতের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ নয়, বরং পরিচিত ধারা নতুন সময়ের সাপেক্ষে আপডেট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে পাকিস্তানি সামরিক শক্তিধরদের বেছে নিয়েছেন। ১৯৬০-এর দশকে যখন ওয়াশিংটন এশিয়ায় নির্ভরযোগ্য স্নায়ুযুদ্ধের পার্টনার খুঁজছিল তখন আইয়ুব খান; ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সোভিয়েতবিরোধী জিহাদ চলাকালে জিয়াউল হক এবং ৯ / ১১-এর পরে পারভেজ মোশাররফ যুক্তরাষ্ট্রের আস্থায় ছিলেন।
তবে বর্তমান সময়ের ভিন্নতা হলো, মুনির এই প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছেছেন কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই। সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক শাসন কাঠামোর ভেতরে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে। বিনিয়োগ সংস্থা পরিচালনা, বৈদেশিক নীতি গঠন, কমান্ড ক্ষমতার পুনর্গঠন এবং সেনাপ্রধানকে বেসামরিক ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিদেশের অনেকের কাছে পাকিস্তানের ইউনিফর্ম পরা নেতৃত্বের স্পষ্টতা গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর জন্যও এই হাইব্রিড শাসন গ্রহণ করা যৌক্তিক। মুনির সাধারণ কোনো সেনাপ্রধান নন। এই বছরের শুরুতে তাঁকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে (প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথম), সেনাপ্রধান হিসেবে মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে, সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে এবং এখন অর্থনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি সাম্প্রতিক স্মৃতির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেনা কর্মকর্তা।
তাঁর উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিরূপ বিষয় হলো—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের চোখে সেনাবাহিনী বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিল। ইমরান খানের অপসারণ ও পরবর্তী অস্থিরতা লাখ লাখ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিনের পৃষ্ঠপোষকতা থাকা সত্ত্বেও দেশের ক্ষতিকর বল মনে করতে শুরু করেছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে খানের সমর্থকেরা সেনা স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, যার মধ্যে লাহোরে করপস কমান্ডারের বাসভবনও ছিল, যা পাকিস্তানে অনন্য ঘটনা। জেনারেলরা মনে করেন, ছায়ায় থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। বরং প্রকাশ্যভাবে নেতৃত্ব দাবি করা ভালো, খলনায়ক সাজার নাটক আর নয়, বরং স্থিতিশীলতার শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করা ভালো এবং প্রয়োজন।
তাদের হিসাব স্পষ্ট—ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘর্ষের পর জনপ্রিয়তা বাড়ার পর, জেনারেলরা বুঝেছেন যে, অর্থনৈতিক কূটনীতি, বিনিয়োগ চুক্তি এবং অন্যান্য উদ্যোগ যদি জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জন করতে চায়, তবে তা খোলামেলাভাবে করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, সেনাবাহিনী এখন কেবল ক্ষমতা একত্রিত করছে না, বরং নিজেকে দেশের অপরিহার্য জীবনরেখা হিসেবে বাজারে উপস্থাপন করছে।
অদৃশ্য নয়, দৃশ্যমান হাত
পাকিস্তান আগেও সামরিক শাসন দেখেছে, কিন্তু আজকের পরিস্থিতি শুধুমাত্র আইয়ুব, জিয়াউল বা মোশাররফের যুগের পুনরাবৃত্তি নয়। এখানে কোনো অভ্যুত্থান হয়নি, সংবিধান স্থগিত হয়নি, পার্লামেন্টও বাতিল হয়নি। যে বিষয়টি এই মুহূর্তকে আলাদা এবং তাৎপর্যপূর্ণ করছে তা হলো—সেনাবাহিনী এখন গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই কাজ করছে, বাইরে থেকে নয়। জেনারেলরা কার্যত রাজনৈতিক ব্যবস্থা দখল করেছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সেটিকে নতুন কোনো ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেনি। এটি প্রাতিষ্ঠানিক সীমারেখাকে আরও অস্পষ্ট করে তুলেছে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনকে বছরের পর বছর প্রভাবিত করবে।
এই পরিবর্তনে অনেক কিছুই অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয়েছে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্ষমতা কাঠামোর মূল খেলোয়াড়দের মনোভাব বদলে দেয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করে এবং দেশ যে আন্তর্জাতিক পরিবেশে চলাফেরা করে সেটাকেও বদলে দেয়। এর একটি প্রভাব হলো—এই পুরো পরিবর্তন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এবং বেসামরিক জনজীবনে সামরিক আধিপত্যকে স্বাভাবিক করে তোলে। রাজনৈতিক দলগুলো এখানে আর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে না থেকে স্রেফ প্রশাসনিক সংযোজন হিসেবে পরিণত হয়। পার্লামেন্ট হয়ে যায় নাট্যমঞ্চ এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন অন্য কোথাও নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রশাসক। এটি হলো রাজনীতিবিদদের সেই চুক্তির মূল্য, যা ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে করা হয়েছিল।
তবে ক্ষমতা কাঠামোতে সেনাবাহিনীর দৃশ্যমান অবস্থান নতুন ধরনের জবাবদিহি তৈরি করে। যখন সেনাবাহিনী খোলাখুলি নীতি নির্ধারণ করে, তখন তার ফলাফলও গ্রহণ করতে হয়। বৃদ্ধি থমকে গেলে, বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লে—জেনারেলরা অযোগ্য মন্ত্রিপরিষদকে দোষ দিতে পারবে না। প্রদর্শিত ক্ষমতা সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার জন্যও জবাবদিহি করতে বাধ্য। এই ডাইনামিকস এরই মধ্যে স্পষ্ট। সামরিক নেতৃত্ব বারবার জনমত জরিপের কথা উল্লেখ করছে, প্রেস ব্রিফিংয়ে তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে উকালতি করছে এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অর্জনের ক্রেডিট চাইছে। এটি দেখায় যে, জেনারেলরা এখন নতুনভাবে সচেতন যে, অর্জন ব্যর্থ হলে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
বেসামরিক ক্ষমতাকাঠামোর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইপাস করার বিষয়টি সেনাবাহিনীকে দ্বিধার সম্মুখীন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের কথা বলা যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত শিল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলো সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাখা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়গুলোকে দুর্বল করতে পারে, বেসামরিক বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করতে পারে এবং পার্লামেন্টারি তদারকি, গণমাধ্যমের সমালোচনা ও বিরোধীদের নজরদারি কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এসব বিষয়ই মূলত গণতন্ত্রে সরকারকে আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয়।
যখন একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা কতিপয় এলিট জেনারেলর মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়, তখন তা ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের অতীত সামরিক সরকারের উদাহরণ এটি স্পষ্ট দেখিয়েছ। সামরিক শাসন প্রায়ই সাময়িক স্থিতিশীলতা দেয়, কিন্তু বৃদ্ধি থেমে গেলে বা সংকট এলে, প্রাতিষ্ঠানিক বাফারের অভাব দ্রুত পতন ত্বরান্বিত করে।
ইমরান খানের দুই বছরের কারাবাস সামরিক বাহিনীর দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যে দেশকে খোলেআম শাসন করছে—সেটা নিশ্চিত করার জন্য হয় নির্বাচন বা ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে, নতুবা তাঁকে চিরতরে রাজনৈতিক অঙ্গনে থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দুই পথই বিপজ্জনক। পুনর্বাসন নতুন শৃঙ্খলাকে অস্থির করতে পারে, অপরদিকে অবিরাম দমন সেনাবাহিনীর শাসনের বৈধতা দ্রুত ক্ষয় করে দিতে পারে।
যদিও কিছু দেশ—যেমন যুক্তরাষ্ট্র—সামরিক নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কারণ, সেনাপ্রধানের দৃশ্যমান ভূমিকায় কার্যত নেতা হিসেবে থাকা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির পরিসর ছোট করে আনতে পারে পারে। এর ফলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিরাপত্তা কেন্দ্রিক হয়ে যাবে, যা মূলত বেসামরিক প্রশাসনের বিপরীতে সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ফলে সংলাপ কঠিন হবে এবং উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যে—যেখানে পাকিস্তান সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—সামরিক নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান অন্যান্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশে আরও গভীরভাবে যুক্ত হবে, যার ফলে ইরানের সঙ্গে নীতিগত বিচ্যুতি এবং পাকিস্তানের অযাচিত সংঘর্ষে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
পর্দা সরে গেছে, মঞ্চ আলোকিত
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানের ডিপ স্টেট জেনারেলদের দায়িত্বহীনভাবে ক্ষমতায় থাকতে দিয়েছে, আর ব্যর্থতার বোঝা তুলে দিয়েছে সাধারণ নাগরিকদের কাঁধে। মুনির মডেল সেই চুক্তি উল্টে দিয়েছে। সেনা শক্তিকে প্রকাশ্য এনে সেনাবাহিনী কার্যকারিতা ও দ্রুততার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই চুক্তি উর্দি ও প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার ফারাকটুকুও মুছে দিয়েছে। এটি কোনো ক্রমবর্ধমান অভ্যুত্থান নয়। এটি আরও সূক্ষ্ম কিছু: কৌশলগত সংহতি। সেনারা তাদের প্রাধান্যকে গোপন না করেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
হাস্যকর হলে সত্যি যে, এখন শাহবাজ শরিফ সেই ব্যবস্থারই প্রধান, যা তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফ এক সময় প্রতিরোধ করেছিলেন। বড় ভাই যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি জেনারেলদের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তখনকার সেনাপ্রধান জাহাঙ্গীর করমাত তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মতো একটি সংবিধানগত কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন—যেখানে শাসনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হতো। নওয়াজ সেটিকে বেসামরিক শাসনে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই নওয়াজ করমাতকে পদত্যাগ করতে বলেন। সেই প্রথম পাকিস্তানের রাজনৈতিক যুদ্ধে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী জিতেছিলেন, জেনারেল নয়। শাহবাজের অধীনে পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টে গেছে।
এই শাসনকে বিভিন্ন চটকদার কিন্তু শালীন ভাষা বাদ দিলে, এই হাইব্রিড মডেল হলো—পুরোনো সত্যকে নতুন আঙ্গিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা—সেনারা শাসন চালায় এবং বেসামরিক প্রশাসন তা মেনে চলে। এখন পার্থক্য শুধু এটুকুই যে পর্দা সরে গেছে, মঞ্চ পুরোপুরি আলোকিত—যেন সবাই তা দেখতে পারে।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

তবে শুধু চীন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত লক্ষ্য—বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং দুই দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আগ্রহ—এই সবকিছুরই মিলনস্থল।
০৭ আগস্ট ২০২৫
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
১ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৩ দিন আগে