Ajker Patrika

অনেক সরকারি স্কুলে হচ্ছে না বার্ষিক পরীক্ষা, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫৫
বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এতে দেশের অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না।

আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়ার কথা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। আর আজ থেকে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকেরা।

সরকারি মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত

সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। তবে ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চার দফা দাবিতে আজ থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে অনেক স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার ও রোববার রাজধানীর আব্দুল গণি রোডের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয় চত্বরে ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) ’ ব্যানারে চার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর শিক্ষকেরা এই কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চার দাবি হলো—সহকারী শিক্ষক পদ নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ও দ্রুত সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করে গেজেট প্রকাশ, বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন, বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া এবং ২০১৫ সালের পূর্বের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২-৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল।

বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে সারা দেশে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমিতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক আনিস রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ গত রাতেই পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে নোটিশ জারি করেছে।’

চট্টগ্রামের পটিয়ার আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্কুলটি সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ মাহফুজুল আলম।

আর রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক ও বাসমাশিসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুস সালাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে।’

এ ছাড়া ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, রাজধানীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলসহ বেশ কিছু সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার স্থগিত রেখে শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক, নির্বাচনী ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা-২০২৫ নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

আজ অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক শাখা) অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর, এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে মাউশির পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে।

আদেশে আরও বলা হয়, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার যেকোনো ধরনের শৈথিল্য বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের একাংশ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

নোয়াখালী সদর উপজেলার ত্রিপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালনের তথ্য দিয়েছেন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।

তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস অনুযায়ী তিন দফা দাবির মধ্যে ১১ তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি ও অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।’

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক ও পরিষদের আরেক আহ্বায়ক মো. আবুল কাসেম।

এ ছাড়া সুনামগঞ্জে জামালগঞ্জ উপজেলার ২০ নং শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্ব চওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বাজারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পূর্ব কুলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে।

তবে গ্রেড ও পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা নিরসনের তিন দাবি পূরণে ২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে ‘তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি’ পালন করে রোববার থেকে ক্লাসে ফিরেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ অনুসারীরা; তাঁরা বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন।

এ মোর্চাভুক্ত সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের’ সভাপতি শাহীনুর আল আমিন বলেন, ‘আমরা তিন দিন লাগাতার কর্মবিরতি পালন শেষে রোববার থেকে ক্লাসে ফিরেছি। সোমবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু, আমরা বাচ্চাদের জিম্মি করে কোনো কর্মসূচি নেব না।’

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাঘাসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন বলেছেন স্কুলটির এই সহকারী শিক্ষক।

এদিকে ঠিকমতো বার্ষিক পরীক্ষা না নিলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

আদেশে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষা গ্রহণে কোনো প্রকার ‘শৈথিল্য বা অনিয়ম’ পরিলক্ষিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা কার্যক্রম বিনা ব্যর্থতায় নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ