Ajker Patrika

আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেন রেজা কিবরিয়া, প্রার্থী হচ্ছেন কোন আসনে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৫
সোমবার বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোদ দেন রেজ কিবরিয়া। ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল
সোমবার বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোদ দেন রেজ কিবরিয়া। ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন ড. রেজা কিবরিয়া। আজ সোমবার বেলা ১১টার পর বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার কথা জানান।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজা কিবরিয়াকে দলে স্বাগত জানান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

অবশ্য গত নভেম্বরের শুরুর দিকেই বিএনপিতে যোগ দেওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান বলে জানিয়েছিলেন।

যোগ দিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বিএনপিতে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত। আমি আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেছি।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে, রেজা কিবরিয়া এসে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। আমি আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানাই। তাঁকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একই আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করেছিলেন।

এদিকে হবিগঞ্জ-১ আসনটি এখন পর্যন্ত ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। দলটি এখনো এ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

রেজা কিবরিয়া বিভিন্ন সময়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ ও এর বিভক্ত দল আমজনতার দলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির রাজনীতি: তফসিল হলে ফিরবেন তারেক

  • তারেকের ফেরার সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত।
  • কোনো পরিবারকে বিশেষ বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার সুযোগ নেই।
  • দল থেকে তারেক রহমানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৭
তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচিত দুটি প্রশ্ন হলো—ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল কবে ঘোষণা করা হবে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। এ অবস্থায় তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জানতে চাইলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তারেক রহমান ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানায়, গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর নিজের নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি তারেক রহমান। তবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানও তাঁর সঙ্গে দেশে ফিরবেন। এর কারণ, তারেককে কেন্দ্র করেই তাঁর স্ত্রী-কন্যা যুক্তরাজ্যে আছেন।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন। তবে সরকারিভাবে তাঁকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরাও বিশেষ নিরাপত্তা পেতেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় প্রণীত আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এখন এই সরকারের সময় বিশেষ কোনো পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ কারণে সরকারও বিশেষ কোনো পরিবারের সদস্যদের সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে চাইছে না।

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, দল থেকে তারেক রহমানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি দেশে ফেরার আগে এই নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত থাকবে। এই বাহিনীই তারেক রহমানকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে রাখবে। তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও এরই মধ্যে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনারও উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।

দেশে ফিরে তারেক রহমান কোথায় উঠবেন এবং কোথায় অফিস করবেন তাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। দলীয় সূত্র বলছে, গুলশান-২-এর ‘ফিরোজা’ ভবনের পাশের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন তারেক রহমান। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার খালেদা জিয়াকে এই বাড়ি বরাদ্দ দেয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাড়িটির নামজারি শেষ করে কাগজপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে হস্তান্তর করেছে। পরে বাড়িটির সংস্কার করে সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সকে বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই অবস্থার মধ্যে আসলে তাঁর ফেরার কোনো আপডেট আমাদের কাছে নেই। যথাসময়ে, মানে উপযুক্ত মনে হলে উনি আসবেন।’

গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটময় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মায়ের এমন দুঃসময়েও কেন তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সমানে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নানা মহলের নানা লোকেও তারেক রহমানকে অভয় দিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনার মধ্যে গত শনিবার মায়ের চিকিৎসার প্রসঙ্গ তুলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তারেক রহমান বলেন, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’

তারেক রহমানের এই স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যায় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের দাবি, ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান দেশ, দল ও দেশের মানুষের কথা বুঝিয়েছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেছিলেন, তিনি ভোটে অংশ নেবেন। এখনো তিনি সেই অবস্থানেই আছেন। তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরে তিনি নিজের নির্বাচনী আসনে গিয়ে সমাবেশ করবেন। ওই সমাবেশে দল ও নিজের জন্য ভোট চাইবেন তিনি।

তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে এক দিনে তাঁকে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বা প্রশাসনিক বাধা নেই। তিনি দেশে ফিরতে চাইলে তাঁকে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে, এমনকি এক দিনের ব‍্যবধানে ট্রাভেল পাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো বিধিনিষেধ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

দলীয় সূত্র বলছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বিএনপি। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর দেশে ফেরার দিন-তারিখ ঘোষণা করা হবে।

সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ জরুরি অবস্থার সময় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান। টানা ১৭ বছর লন্ডন থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসা

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে

  • অবস্থার অবনতি না হলেও খুব একটা উন্নতিও হয়নি খালেদা জিয়ার।
  • লন্ডনের হাসপাতালে কথা বলেছেন ছেলে তারেক রহমান।
  • ওই হাসপাতালেই আগের দফায় চিকিৎসা নেন তিনি।
  • কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার চেষ্টা।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে দেশের বাইরে নিয়ে যেখানে চিকিৎসা করানো হয়েছিল, সেই লন্ডনের হাসপাতালেই তাঁকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়েছে। এখন বাকি বিষয় নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ওপর। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলেই তাঁকে দেশের বাইরে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে তাঁর কিডনির সমস্যাও দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের বিরতির পর তিনি শনিবার দু-একটি কথা বলেন বলে জানা গেছে।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গতকাল রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আর অবনতি না হলেও খুব একটা উন্নতিও হয়নি। তার আগের দিন চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘সংকটময়’ বলে জানিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তখন আরও বলেছিলেন, ওই মুহূর্তে তাঁর শারীরিক অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো স্থিতিশীল নয়।

দলীয় এবং খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র বলেছে, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও প্রয়োজন অনুযায়ী তা যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে না। এ কারণেই তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের নাম আলোচনায় এলেও যুক্তরাজ্যের পক্ষেই সংশ্লিষ্টদের মত বেশি। খালেদা জিয়া লন্ডনের যে হাসপাতালে এর আগে চিকিৎসা নিয়েছেন, এবারও সেখানেই তাঁকে ভর্তি করানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমান ওই হাসপাতালে গিয়ে এরই মধ্যে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্ত এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে লন্ডনের হাসপাতালটির চিকিৎসকের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান।

বিএনপির চেয়ারপারসনকে লন্ডনে পাঠাতে কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র। কাতারের আমিরের সৌজন্যে ওই সর্বাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই খালেদা জিয়াকে এর আগেরবার লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল।

প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘বিদেশে নেওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রয়েছে; যেমন ভিসা, যেসব দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বিষয় নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে মোটামুটি কাজ এগিয়ে আছে। অর্থাৎ যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।’

খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন রোগশোকের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি দিতে বারবার আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। আইনকানুনসহ নানা যুক্তি দেখিয়ে আবেদন নাকচ করা হয়। অবশেষে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে কারামুক্তির পর বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পান বিএনপির চেয়ারপারসন। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চেপে যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। লন্ডনের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পরও কয়েকবার অসুস্থতার কারণে হাসপাতাল-বাড়ি করতে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।

‘মশাল রোড শো’ স্থগিত

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে বিজয়ের মাসের শুরুর দিন আজকের পূর্বঘোষিত ‘মশাল রোড শো’ কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, ‘আমি আজকে সর্বশেষ যতটুকু শুনেছি, তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে এবং বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড এখনো কোনো পরামর্শ দেয়নি। এই অবস্থায় আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’

দোয়া-প্রার্থনা অব্যাহত

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দেশব্যাপী দোয়া ও প্রার্থনা অব্যাহত রয়েছে। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মন্দির এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছেন।

গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এই মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অনেকে অংশ নেন। মির্জা আব্বাস এ সময় বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী মারাত্মক অসুস্থ। অথচ, এই সময়ে তারেক রহমান আসতে পারছেন না। এ যে কত যন্ত্রণার, তা সন্তান ছাড়া কেউ বুঝবে না।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল তাঁর ফেসবুকে খালেদা জিয়ার একটি ছবি পোস্ট করে তাঁর জন্য দোয়া চেয়েছেন।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য একটি বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মসজিদে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদসহ অনেকে এই দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।

গতকাল রাতে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে জামায়াত সেক্রেটারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: সংগৃহীত
খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: সংগৃহীত

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাতে ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামানকে সঙ্গে করে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তিনি।

জামায়াতের প্রচার বিভাগ থেকে জানানো হয়, মিয়া গোলাম পরওয়ার বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং তাঁর চলমান চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করেন।

হাসপাতালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলকে স্বাগত জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপা ও জেপির নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট, মুখপাত্র হাওলাদার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে এক মতবিনিময় সভায় এ জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে এক মতবিনিময় সভায় এ জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ছবি: সংগৃহীত

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (একাংশ) ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতৃত্বে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামে একটি জোট গঠন করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত এ জোটে জাপা-জেপি ছাড়া আরও ১৪টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে এক মতবিনিময় সভায় এ জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (একাংশ) মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এ ছাড়া আত্মপ্রকাশের আগে জোটের অন্তর্ভুক্ত সব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

আরও উপস্থিত ছিলেন জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (মতিন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম, মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশিদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক, বাংলাদেশ ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের অহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, বাংলাদেশ সর্বজনীন দলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ মনির, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, পিচ অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান হাজী এস এম এ জলিল, ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব জহিরুল ইসলাম, এস এম আশিক বিল্লাহ চেয়ারম্যান ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণতান্ত্রিক জোট বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমরা মনে করছি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশ নির্বাচনের দিকে যাবে। কিন্তু সবার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারপরও আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যানের আরও বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের কাছে একটি তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনীতি উপহার দিতে চাই। দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে আমাদের ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে। আমাদের জোটের মূল মন্ত্র হবে—বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান। এই জোটটি শুধু নির্বাচনী জোট হবে না, আমরা ভবিষ্যতে এই জোট নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি নির্মূল করব। বিকশিত করব সুস্থধারার রাজনীতি।’

নতুন জোটের মুখপাত্র এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ও আগামী দিনে দেশে সুস্থধারার রাজনীতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে লক্ষ্যে আজ (রোববার) আমরা মতবিনিময় সভা করেছি। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ১৬টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বৃহত্তর জোট গঠন করার লক্ষ্যে ঐকমত্য হয়েছেন।’

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা আশা করছি, চলতি সপ্তাহে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই জোট আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। আমরা আশা করি, যদি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, তাহলে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণ করব। তবে এখন পর্যন্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনের মতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত