Ajker Patrika

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা: সমরাস্ত্র শিল্পের মুনাফা বেড়ে ৬৭৮ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১১
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান আছে। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান আছে। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ায় অস্ত্র বিক্রি ও সামরিক সেবা শিল্প খাতের শীর্ষ ১০০ কোম্পানি ২০২৪ সালে ৬৭৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ সোমবার এসআইপিআরআইয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র বিক্রি ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মূলত এ কারণেই বৈশ্বিক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর সামরিক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মুনাফা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই মুনাফা বৃদ্ধির বেশির ভাগই নিয়ে গেছে মার্কিন ও ইউরোপীয় কোম্পানি। তবে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের কিছু কোম্পানিও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো মুনাফা অর্জন করেছে। তবে এই অঞ্চলের বেশির ভাগই মুনাফাই আবার নিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে লকহিড মার্টিন, নরথ্রপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল ডায়নামিক্স শীর্ষে ছিল। শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় থাকা মার্কিন অস্ত্র কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তালিকাভুক্ত ৩৯টি মার্কিন কোম্পানির মধ্যে ৩০টিরই রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে এসআইপিআরআই বলছে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, কলাম্বিয়া ও ভার্জিনিয়া-ক্লাস সাবমেরিন এবং সেন্টিনেল আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক বিলম্ব ও বাজেট অতিরিক্ত ব্যয় চলমান। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক সামরিক প্রস্তুতকারকের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। কারণ, কোম্পানিটির অস্ত্র রাজস্ব ২০২৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

রাশিয়াকে বাদ দিয়ে, ইউরোপে শীর্ষ ১০০ তালিকায় ২৬টি অস্ত্র কোম্পানি ছিল এবং তাদের মধ্যে ২৩টি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি থেকে আয় বৃদ্ধি করেছে। তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৫১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইউক্রেনের জন্য গোলাবারুদ তৈরির মাধ্যমে রাজস্ব ১৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পর চেক প্রজাতন্ত্রের কোম্পানি চেকোস্লোভাক গ্রুপ ২০২৪ সালে শীর্ষ ১০০-এর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে।

পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার লাগাতার আক্রমণের মুখে থাকা ইউক্রেনের জেএসসি ইউক্রেনীয় ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি তাদের অস্ত্র রাজস্ব ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। ইউরোপীয় অস্ত্র কোম্পানিগুলো রাশিয়ার মোকাবিলায় নতুন উৎপাদন সক্ষমতায় বিনিয়োগ করছে বলে এসআইপিআরআই তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে। তবে সতর্ক করেছে, কাঁচামাল সংগ্রহ—বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে একটি ‘ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ’ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, চীনও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে।

রোস্টেক এবং ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশন হলো র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকা দুই রুশ অস্ত্র কোম্পানি। তারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখেও তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে।

গত বছর এশিয়া ও ওশেনিয়ার অস্ত্র প্রস্তুতকারীরা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ পতনের পরও ১৩০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব অর্জন করেছে। এই আঞ্চলিক পতন মূলত তালিকাভুক্ত আটটি চীনা অস্ত্র কোম্পানির ১০ শতাংশ সম্মিলিত রাজস্ব হ্রাসের কারণে হয়েছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল নোরিনকোর অস্ত্র রাজস্বের ৩১ শতাংশ কমে যাওয়া। কিন্তু জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র প্রস্তুতকারীদের বিক্রি ইউরোপীয় ও দেশীয় উভয় বাজারের শক্তিশালী চাহিদার কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে উত্তেজনা চলমান থাকা অবস্থায়।

তালিকায় থাকা পাঁচটি জাপানি কোম্পানি তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, আর চারটি দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রাজস্ব ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ অস্ত্র কোম্পানি হানহা গ্রুপ ২০২৪ সালে ৪২ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি এসেছে অস্ত্র রপ্তানি থেকে।

প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৯টি। ২০২৪ সালে এই ৯টি কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ৩১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে, যা আঞ্চলিকভাবে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। সুদানের বিধ্বংসী যুদ্ধে অস্ত্র জোগানোর আন্তর্জাতিক অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে আমিরাতভিত্তিক এজ গ্রুপের ২০২৩ সালের রাজস্ব তথ্যের অভাবে তাদের আঞ্চলিক হিসাব এজ-কে অন্তর্ভুক্ত করেনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।

গাজায় চলমান গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যে তালিকাভুক্ত তিনটি ইসরায়েলি অস্ত্র কোম্পানি তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, যেখানে প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অবরুদ্ধ উপত্যকার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এলবিট সিস্টেমস ৬ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে, এরপর ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ ৫ দশমিক ১৯ বিলিয়ন এবং রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

এসআইপিআরআই জানিয়েছে, ইসরায়েলি মানববিহীন আকাশযান ও অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বেড়েছে। তালিকায় থাকা পাঁচটি তুর্কি কোম্পানি—যা রেকর্ড—সম্মিলিতভাবে ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র রাজস্ব অর্জন করেছে, যা ১১ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। ড্রোন উৎপাদক বায়কারের ২০২৪ সালের ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রাজস্বের ৯৫ শতাংশই এসেছে বিদেশে রপ্তানি থেকে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত, তাইওয়ান, নরওয়ে, কানাডা, স্পেন, পোল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সামরিক কোম্পানিও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ