Ajker Patrika

দাম বেড়েছে কয়েক গুণ

কামরুল হাসান জনি, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৫২
দাম বেড়েছে কয়েক গুণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজারে রমজানের শুরুতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা গেছে। রমজানে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে বেড়েছে মাছ-মাংসের দাম। এ ছাড়া আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এ সময় এসে বেড়েছে ইফতার ও সাহ্‌রিতে ব্যবহৃত পণ্যের দাম।

এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সংযমের মাস রমজানে পণ্যের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। মাটিরাঙ্গা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার মাটিরাঙ্গা বাজারে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে ছোলা, চাল, ডাল ও মসলার দাম বেড়েছে। তবে নতুন করে বাড়েনি পেঁয়াজের দাম। রোজায় সবজির বাজারে বেগুন, লেবু, শসার চাহিদা বাড়ায় এসব কাঁচামালের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।

বাজার ঘুরে জানা যায়, রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেগুনের কেজি বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহেও এই বেগুনের কেজি ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। হালিপ্রতি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। কিছুদিন আগে শসা ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। সবজি হলেও ইফতারে ব্যবহৃত হওয়া টমেটো কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা ও গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

সবজির দাম বাড়লেও ৩০ টাকায় নেমেছে পেঁয়াজ। খুচরা পর্যায়ে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুড়িকাটা পেঁয়াজের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। আর ভালো মানের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি।

এদিকে বাজারে চিনির দাম আগের মতো ৮০ টাকা কেজি হলেও বেড়েছে ছোলা, চাল ও মসলার দাম। কেজি প্রতি ছোলা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, দেশি আদা ১০০ থেকে ১২০, চায়না আদা ৯০, চায়না রসুন ১২০, দেশি রসুন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডালের বাজারের মধ্যে দেশি মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, ইন্ডিয়ান মসুরের ডাল ৯৫ থেকে ১২০, বুটের ডাল ৯০, কাঁচা মুগডাল ১৪০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া মিনিকেট নামের চাল ৬৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫, আটা ৪২, ময়দা ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করেছেন ৭৬০ থেকে ৭৮০ টাকা।

গরুর মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহের ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। এ ছাড়া লেয়ার ২৬৫, কক মুরগি ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বড় দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি ৫০০ টাকা, মাঝারি ৪৫০ ও ছোট ৪০০ টাকায়।

বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী শাহিন আলম বলেন, ‘আমরা বেশি দামে পণ্যসামগ্রী কিনি, এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের কী করার আছে? আমাদের তো লোকসান দেওয়া সম্ভব না।’

অতিরিক্ত দামে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ক্রেতা শহীদউল্যাহ বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগেও লেবু আর বেগুন কিনে নিয়ে গেলাম। আজকে এগুলোর দাম দ্বিগুণের বেশি। রমজানে যেসব খাবারের চাহিদা থাকে, সেসব জিনিসের দাম বাড়িয়ে ফেলছে। হঠাৎ করে কেন সব জিনিসের দাম দ্বিগুণ হবে!’

আরেক ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা রমজানকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। লেবু, বেগুন ও শসার দাম নাগালের বাইরে। ব্যবসায়ীরা জানেন, রমজানে এই কাঁচামালগুলো ক্রেতারা দাম দিয়ে হলেও কিনবেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চাকমা বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, যা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। রমজানের প্রথম থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও বিপাকে পড়েছেন।’

ইউএনও তৃলা দেব বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ অন্যান্য পণ্য সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন তা তদারক করছেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত