Ajker Patrika

মহান মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা নিয়ে এই সিনেমা

Thumbnail image

মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে সরকারি অনুদানে তৈরি হচ্ছে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’। হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ থেকে নির্মিত সিনেমায় অভিনয় করছেন নাজিয়া হক অর্ষা। এরই মধ্যে শুটিং করেছেন তিনি, সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন আসাদুজ্জামান নূরকে। কাজের ক্ষেত্রে কিছু নীতি মেনে চলেন অর্ষা। ক্যারিয়ার নিয়েও রয়েছে তাঁর নিজস্ব ভাবনা। অর্ষার সঙ্গে আরও নানা বিষয়ে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ

‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমায় কাজ করছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
কোনো কাজ প্রকাশের আগে সেটি নিয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করি না। আমার মনে হয়, বড় পর্দার কাজগুলোতে দর্শকদের অ্যাট্রাকশন থাকা দরকার। গল্পের ধারণা দিতে গেলে দেখা যায়, অনেক কিছু রিভিল হয়ে যায়। তাই এখনই সিনেমাটি নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। 

কিন্তু দর্শকদের তো আগ্রহ থাকে পছন্দের অভিনয়শিল্পী কী ধরনের কাজ করছেন বা তাঁর চরিত্রটি কী ধরনের, তা জানার?
তা থাকে। এই সিনেমার গল্প তৈরি হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গণহত্যাকে কেন্দ্র করে। হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ থেকে নির্মিত হচ্ছে সিনেমাটি। পরিচালনা করছেন রফিকুল আনোয়ার রাসেল। আমার চরিত্রের নাম সুপ্রিয়া। এর বেশি আপাতত বলা বারণ। 

সিনেমায় সহশিল্পী হিসেবে আসাদুজ্জামান নূরকে পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
এবারই প্রথম নূর আঙ্কেলের সঙ্গে কাজ করলাম। প্রথমে খুব নার্ভাস ছিলাম। কাজ শুরু করার পর সেই নার্ভাসনেসটা কমে গেছে। নূর আঙ্কেল আমাকে বুঝতেই দেননি, এটা তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। শুটিংয়ের সময় একবারও মনে হয়নি, এত বড় মাপের একজন শিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করছি। শটে যাওয়ার আগে তিনি আমার সঙ্গে রিহার্সাল করেছেন। যেটা আমার খুব কাজে লেগেছে। অনেক কিছু শেখার সৌভাগ্য হয়েছে।

সাধারণত, বাছাই করে কাজ করতে দেখা যায় আপনাকে। এ সিনেমায় হ্যাঁ বলার কারণ কী ছিল?
চরিত্রটি যে অনেক বিশেষ কিছু কিংবা এ ধরনের চরিত্রে আগে অভিনয় করিনি, এমন নয়। পরিচালক রফিকুল আনোয়ার রাসেলের সঙ্গে এটি আমার প্রথম কাজ। একটা বিশেষ কারণ হচ্ছে, নূর আঙ্কেলের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ। তাঁর মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার কিংবা স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ সব সময় হয় না। সেই সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাই তাঁর সঙ্গে কাজ করার লোভ থেকে কাজটি হাতছাড়া করতে চাইনি। 

সিনেমাটি সরকারি অনুদানে তৈরি হচ্ছে। অনুদানের সিনেমা ঠিকমতো নির্মাণ করা নিয়ে বিতর্ক আছে। এ বিষয়ে আপনার কী মন্তব্য?
অনুদানের সিনেমা মানেই যে বাজেট কম, টানাহ্যাঁচড়া করে বানানো হবে—এসব ঠিক না। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ সিনেমাটিই তার উদাহরণ। এটি মুক্তির পর বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

১৯৭১: সেই সব দিন এবং একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা—দুটি সিনেমা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের গল্প, সরকারি অনুদানের এবং দুজন নির্মাতারই বড় পর্দায় প্রথম কাজ। অনেক মিলের মধ্যে সিনেমা দুটির পার্থক্যের জায়গাটা কোথায় মনে হয়েছে?
১৯৭১: সেই সব দিন সিনেমায় গ্রামের পাশাপাশি শহরের যুদ্ধটাকে দেখানো হয়েছে। সে সময়ের সম্পর্কগুলো দেখানো হয়েছে। যুদ্ধের সময় একটি শিক্ষিত পরিবারে কী প্রভাব পড়েছিল, সেটা দেখানো হয়েছে। আর একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা সিনেমায় গণহত্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যেটা মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি স্তর। মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্তর আছে। সেগুলো থেকে আলাদা অনেক সিনেমা নির্মাণ সম্ভব। আমার মনে হয়, দুটি গল্প ও তার উপস্থাপন ভীষণ আলাদা।

নতুন কাজ নিয়ে আপনাকে খুব একটা আলোচনা করতে শোনা যায় না। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও নতুন কাজের তথ্য শেয়ার করতে চান না। কেন? 
কোনো শুটিংয়ের সময় আমি যদি সেই লুকের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে দিই, তাহলে লুক, সেট, কারা কাজ করছেন—সব প্রকাশ পেয়ে যায়। এমনটা হলে দর্শকের আগ্রহের জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। যেকোনো কাজের তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবেই প্রচার করা উচিত। শুটিংয়ের সময় যদি সব বলে দিই, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে আর বলার কিছু থাকে না। তা ছাড়া কাজটা সম্পর্কে দর্শকের আগ্রহ কমে গেলে তাঁরা দেখবেন কেন? হলিউডের দিকে যদি তাকান, দেখবেন পরিচালক প্যানেল থেকে যতটুকু বলার অনুমতি থাকে, ততটুকুই বলেন শিল্পীরা। তাঁরা টিজার, ট্রেলার রিলিজের পর সিনেমা নিয়ে কথা বলবেন বলে চুক্তিবদ্ধই থাকেন। এটা একটা প্রসেস, আন্তর্জাতিক ক্রাইটেরিয়া এবং এটাই হওয়া উচিত। 

নাজিয়া হক অর্ষাআমাদের দেশে কি এমন প্রসেসে কাজ হয়? 
অন্যদের বিষয়ে বলতে পারব না। এ বিষয়ে আমি বেশ সচেতন। যে কাজই আসুক না কেন, আমি চাই সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই আসুক। কাজের আগে আলোচনা করা, আমার চরিত্রটি কেমন, তা প্রকাশ করে দেওয়া—এটা আনুষ্ঠানিক কোনো প্রসেস হতে পারে না। আমি অফিশিয়ালি সবকিছু মেইনটেইন করতে পছন্দ করি। 

শুনেছি, আপনার মা অসুস্থ থাকায় মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। এর মাঝেই নাকি কাজ করছেন? 
আমি যখন শুটিংয়ে থাকি, তখন চরিত্রের মাঝেই থাকার চেষ্টা করি। ব্যক্তিগত জীবনটা দূরে রাখার চেষ্টা করি। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের আপ্‌স অ্যান্ড ডাউন থাকবেই। তাই অনেক দিন শুটিং থেকে দূরে ছিলাম। পরিবারকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, আবার কাজ শুরু করা দরকার। ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবন—দুটি বিষয় প্যারালাল। কোনোটাকেই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। সবকিছু চিন্তা করে সময় ভাগ করে নিজেকে ঢেলে দেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। 

শোবিজে এক যুগের বেশি হয়ে গেছে। এই সময়ে এসে কি মনে হয় সঠিক পথেই আছেন? 
এসব নিয়ে তো ভাবি না। প্রচণ্ড দূরদর্শিতা নিয়ে খুব কম মানুষ সফল হয়েছেন। যাঁরা হয়েছেন, তাঁরা এক্সট্রা অর্ডিনারি। বেশির ভাগ মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পাঁচ মিনিট পর কী হবে, সেটা কেউ বলতে পারবে না। অনেক দূর চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করায় আমি বিশ্বাসী নই। যেটা হচ্ছে, সেটা হওয়ার ছিল; যেটা হবার না, সেটা হবে না। আপনাকে কর্ম করে যেতে হবে। আমি কর্মে বিশ্বাসী। কাজগুলো সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত যা অর্জন বা যা করতে পারিনি, সেগুলো নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট নই, আবার অতিরিক্ত আনন্দিত নই। জীবনের জার্নিটা বহমান, এটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত