Ajker Patrika

বিনা মূল্যের চালে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১১: ১০
বিনা মূল্যের চালে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

মেঘনা নদীতে গত শনিবার বিকেলে ১০-১৫টি নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরছিলেন। এ সময় পাড়ে বসে থাকা কয়েকজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, ‘এখন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তবু কেন নদীতে মাছ ধরা হয়। কারণ চেয়ারম্যানরা চাল দিতে জনপ্রতি ২ হাজার করে টাকা চান। এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই আমরা কোনো সহায়তা পাই না।’

সেখানে উপস্থিত মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা বেগম ও শামসুদ্দিনের স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, এখন মাছ ধরা বন্ধ। তাই তাঁদের স্বামীরা অন্য কাজে বাড়ির বাইরে। কিন্তু তাঁরা কোনো সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। চাল দিতে চেয়ারম্যান ২ হাজার টাকা করে চান। টাকা দিতে না পারায় জেলে সহায়তার চালের তালিকায় তাঁদের নাম আসেনি।

চর মার্টিন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুলাল মাঝির ছেলে মো. মুক্তার হোসেন জানান, তিনি ১৭ বছর জেলে পেশায় আছেন। কিন্তু এখনো তাঁর নামে জেলে কার্ড নেই। তিনি সরকারি কোনো সহায়তা পান না।

উপজেলার চর কালকিনি ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল পালোয়ান জানান, ‘চাল পাওয়ার জন্য ২ হাজার টাকা টাকা না দিলে আমাদের জেলে কার্ড বালিশের নিচে থাকে। সরকারি সুবিধা আর মেলে না।’

মোহাম্মদ বশির মাঝি নামের এক ব্যক্তি জানান, ২ হাজার টাকা না দেওয়ায় সাইফুল্লাহ চেয়ারম্যান তাঁকে কার্ড দেননি।

কমলনগরের চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর ফলকন, চর লরেন্স, পাটোয়ারীহাট, সাহেবেরহাট, তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ২০-৩০ জন জেলের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই সহায়তা নিতে ২ হাজার টাকা হারে দিয়েছেন বলে জানান। তাঁরা জানান, টাকা ছাড়া জেলেদের সহায়তা দেওয়া হয় না। ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত তাঁদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার অভিযোগ করে বলেন, জেলে কার্ড তালিকায় মুদি দোকানি, ব্যবসায়ী, প্রবাসীর নাম রয়েছে। অথচ অনেক প্রকৃত জেলের নাম আসেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জানান, কমলনগরে চরকাদিরা ইউনিয়ন ছাড়া সব ইউনিয়নের কম-বেশি জেলে কার্ডের চাল দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, চৌকিদার, দফাদার এবং তাঁদের নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে এই টাকা নেওয়া হয়।

তবে সাহেবেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের দাবি করেন, একটি কুচক্রী মহল তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

চর কালকিনি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করে প্রতিবেদককে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন।

চর মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। তবে তিনি এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান জানান, চাল দেওয়ার নামে কেউ জেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ সময়ের তিন মাসে একজন নিবন্ধিত জেলে বিনা মূল্যে ৪০ কেজি করে চার ধাপে ১৬০ কেজি চাল পাওয়ার কথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত