Ajker Patrika

হাজার টাকায়ও মিলছে না শ্রমিক

শহিদুল ইসলাম, বাসাইল
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৩: ০৮
হাজার টাকায়ও মিলছে না শ্রমিক

বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষকেরা বোরো ধান কাটা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। হাজার টাকায়ও মিলছে না একজন শ্রমিক। এদিকে পাকা ফসলের মাঠে ঢুকছে পানি। এতে মাঠেই ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধান ডুবে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

চলতি মৌসুমে ধানের ভালো ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। গত ২-৩ দিন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বেড়েছে। এতে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার শাখা ঝিনাই ও বংসাই নদীর পানি প্লাবিত হয়ে লাঙ্গুলিয়া হয়ে ঢুকছে কাউলজানী ও ফুলকি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে। এতে বিল এলাকার পাকা ইরি-বোরো ধানের জমি ডুবে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা।

এদিকে সময়মতো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ধান কাটার জন্য ভরা মৌসুমে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। শ্রমিকের অভাবে নিজেরাই পানিতে ডুবে থাকা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন কৃষকেরা।

উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকি, বালিয়া, করটিয়াপাড়া, নিড়াইল খাটড়া। কাউলজানী ইউনিয়নের বাদিয়াজান। সদর ইউনিয়নের রাশড়া, মিরিকপুর, হান্দুলী, জিকাতলী পাড়া, সৈয়দামপুর, পৌলী, যৌতুকী, মটেশ্বরসহ কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ পানিতে ডুবে আছে সোনালি ধান। সেই পানিতে ডুব দিয়ে ধান কাটছেন কৃষক ও শ্রমিক।

ফুলকি দক্ষিণপাড়ার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক, লালমিয়াসহ আরও কয়েকজন বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে গেছে, এ সময়ে বিলে পানি আসায় মহাবিপাকে পড়েছেন তাঁরা। তার ওপর আবার শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ১ হাজার টাকা দিনমজুরি দিয়েও মিলছে না একজন শ্রমিক। অনেকেই জমির ধান কেটে অর্ধেক ধান শ্রমিককে দিয়ে দিচ্ছেন।

ময়থা গ্রামের কৃষকেরা জানান, এমনিতেই ঝড়-বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এখন তাঁদের চোখের সামনে পাকা ও আধা পাকা ধান পানিতে ডুবে যাচ্ছে। শ্রমিকের অভাবে তাঁদের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কৃষক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘এ বছর ৩০০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ১ বিঘা জমিতে আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। আর ধান কাটতে ৮-৯ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এই ধান ডুবে গেলে আমরা কী খেয়ে বাঁচব!’

কলেজশিক্ষার্থী বিজয় সরকার বলেন, ‘১ হাজার ২০০ টাকা করে শ্রমিক, তাও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তাই ধান কাটতে নেমেছি।’

শ্রমিকেরা জানান, অসময়ে পানি না এলে ধীরস্থিরভাবে ফসল কাটা যেত। এখন সব ধান এক সঙ্গে কাটতে হচ্ছে, তাই শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। তা ছাড়া, সব জিনিসের দাম বেশি, তাই মজুরিও বেশি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। মজুরি বেশি না নিলে তাঁদের সংসার চলবে কী করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। ফলন ভালো হয়েছে তবুও কৃষকের মুখে হাঁসি নেই। ইতিমধ্যে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার ও বাসাইলের বিভিন্ন এলাকার জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। গত ২-৩ দিনে বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু জমির পাকা বোরো ধান ডুবে নষ্ট হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত