Ajker Patrika

নতুন আলু তোলায় ব্যস্ত চাষি খেতেই হচ্ছে কেনাবেচা

ইসমাইল হোসেন কিরন, হাতিয়া (নোয়াখালী)
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৩৬
নতুন আলু তোলায় ব্যস্ত চাষি খেতেই হচ্ছে কেনাবেচা

দিগন্তবিস্তৃত জমি থেকে ৮-১০ জন আলু তুলে খেতের পাশে স্তূপ করে রাখছেন। কয়েকজন ব্যাপারী বস্তা ও দাঁড়িপাল্লা নিয়ে এর আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। দরদামে মিললে এখান থেকেই আলু কিনবেন তাঁরা, না হলে অধিক মূল্যের আশায় বাড়িতে নিয়ে সংরক্ষণ করে রেখে দেবেন চাষি। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড়দেইল গ্রামের উত্তর-দক্ষিণে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বর্তমান চিত্র এটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের বাইরের এই গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে আলু চাষ করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চাষিরা আলু তোলার কাজ করছেন। নারী-পুরুষ, শিশু—সবাই এই কাজে হাত লাগাচ্ছেন।

গ্রামের একটি খেতে গিয়ে দেখা যায়, জমির এক কোণে আলুর স্তূপ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পাশে ৮-১০ জন নারী-পুরুষ আলু তোলার কাজ করছেন। প্রশ্ন করলে এক যুবক এসে বলেন, এই স্তূপের মালিক তাঁরা। রোদে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় ঢেকে রেখেছেন। সারা দিন তুলে স্তূপ করে রাখার পর বিকেলে তা বস্তায় নিয়ে মাথায় বহন করে বাড়ি নিয়ে যাবেন।

এই যুবকের নাম শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার। পাশে বেড়িবাঁধের ভেতরে বড়দেইল গ্রামে তাঁদের বাড়ি। তিনি নোয়াখালী কলেজের স্নাতকের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়িতে এসে বাবাকে সহযোগিতা করছেন। কৃষ্ণ জানান, এবার আড়াই একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ৫৫০ মণের মতো ফলনের আশা করছেন। মূল্য কম হওয়ায় এখনই তা বিক্রি করছেন না। ঘরে রেখে দিয়ে আরও এক মাস পর বিক্রি করবেন। ১০ বছর ধরে এখানকার জমিতে অন্য ফসলের সঙ্গে আলুর চাষ করে আসছেন তাঁরা। এ বছর আলুর আকার একটু ছোট হওয়ায় খেত থেকে ৪০০-৪৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। বাড়ি থেকে বিক্রি করলে আরও ৫০ টাকা বেশি পাওয়া যায়।

একই এলাকার আলুচাষি শ্রীরাম চন্দ্র দাসের (৬০) ছেলে সুজিত চন্দ্র দাস আলু তুলছিলেন। সুজিত জানান, মা, দুই ভাবি ও ছোট বোনকে নিয়ে আলু তোলার কাজ করছেন। সঙ্গে দুজন নারী শ্রমিক নিয়েছেন। এবার দেড় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন তাঁরা। জমিতে থাকা বেশির ভাগ আলু তুলে ফেলেছেন। ১০ দিন ধরে আলু তোলার কাজ করছেন। দেড় একরে ২২০ মণ হবে বলে আশা করছেন। বাড়িতে রাখার জায়গা নেই, তাই সব আলু খেতেই বিক্রি করে দিয়েছেন। হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড়দেইল ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবেল হোসেন জানান, উপজেলায় ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বড়দেইল গ্রামে চাষ হয় ২০০ হেক্টর জমিতে। সরকারি হিসাবে এই গ্রাম থেকে এবার হেক্টরপ্রতি ২৫ টন করে মোট উৎপাদিত হয়েছে ৫ হাজার টন আলু। বড়দেইল গ্রামের টানবাজার থেকে রহমত বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন চাষিরা। পলি মাটিতে ভরা এসব জমি খুবই উর্বর। এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের দুবার করে চারা রোপণ করতে হয়েছে।

বুড়িরচর ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, আলু চাষে নোয়াখালী জেলার মধ্যে সেরা বড়দেইল গ্রাম। এখানে প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ হয়। তবে হাতিয়ায় কোনো হিমাগার না থাকায় চাষিরা খেত থেকে তোলার পরপরই আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এতে মূল্য অনেক কম পান। হিমাগারে রেখে বছরের অন্য সময়ে বিক্রি করতে পারলে দ্বিগুণ লাভ হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত