Ajker Patrika

‘শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত পাশে আছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ৫৮
Thumbnail image

দেশে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গ্রাহকদের সঙ্গে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জ। গত মাসে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অর্ডার নিয়েও গ্রাহকদের পণ্য কিংবা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ জোরালো হতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের একটি বড় অংশই দুষছে ই-অরেঞ্জের সাবেক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং সাবেক ক্রিকেটার ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। তাদের দাবি, মাশরাফিকে দেখেই তারা পণ্যের অর্ডার দিয়েছিল।

পাওনা টাকা ও পণ্য ফেরতের দাবিতে গত ১৬ আগস্ট রাতে মাশরাফির বাসার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ই-অরেঞ্জের ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। পরে এ বিষয়ে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। তবে এবার ‘জানের সদকা’ হিসেবে গ্রাহকদের টাকার মায়া ছাড়তে বলেছেন মাশরাফি। গতকাল সোমবার মাশরাফির মিরপুরের বাসায় গেলে তিনি এ কথা বলেন বলে দাবি করেছেন ই-অরেঞ্জের কয়েকজন নারী গ্রাহক।

পণ্য ক্রয় বাবদ ই-অরেঞ্জে অগ্রিম ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা মৌ আক্তার নামে এক গ্রাহক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাশরাফি ভাইকে আমরা বলেছি, আপনি ছিলেন বলেই আমরা ই-অরেঞ্জে টাকা দিছি। আপনি না থাকলে আমরা কখনোই যেতাম না। তখন তিনি আমাদের বলেছেন, আপনারা জানের সদকা হিসেবে এই টাকা ছেড়ে দেন।’

গতকাল মাশরাফির বাসায় যাওয়া কয়েকজন ই-অরেঞ্জ গ্রাহক জানান, তাঁরা দুই ঘণ্টা মাশরাফির বাসায় ছিলেন। এ সময় মাশরাফি প্রথমে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তবে তিনি এটাও জানিয়ে দেন যে তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এক-দেড় বছর আগের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গ্রাহকেরা জানান, কথাবার্তার একপর্যায়ে মাশরাফি রেগে গিয়ে বলেন ‘আমার অ্যাড (বিজ্ঞাপন) করার কথা আমি অ্যাড করেছি। আমি কি আপনাদের বলছি ই-অরেঞ্জে টাকা দিতে?’ কয়েকজন গ্রাহক তখন বলেন, ‘আমরা আপনাকে দেখেই টাকা দিয়েছি। কারণ, আপনি তো অভিনেতা নন, আপনি ক্যাপ্টেন, আপনি সাংসদ। আপনি জনগণের প্রতিনিধি বলেই আমরা ই-অরেঞ্জে আস্থা রেখেছি।’ এর উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘আমার যতটুকু সম্ভব আপনাদের টাকা যেন ফিরে পান সেই চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় মাশরাফির সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি তাঁদের (গ্রাহক) সঙ্গে আছি। কিন্তু মাশরাফি থাকুক আর না থাকুক, প্রচলিত আইনের বাইরে তো মাশরাফি কিছু করতে পারবে না। মাশরাফি তো চাইলেও এটার দায় নিতে পারবে না। কারণ মাশরাফি এটার মালিক না, শেয়ার হোল্ডারও না। মাশরাফি শুধু এটার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিল।’

একটি কোম্পানি সমস্যায় পড়লে এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর গিয়ে তা ঠিক করে দেবে এমন কোনো আইন নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বলতে পারেন যে আমার জেনেবুঝে ওখানে যাওয়া উচিত ছিল কি না। একটা কোম্পানি যখন আমার কাছে আসবে, আমার জানার বিষয় হচ্ছে সেই কোম্পানির ব্যবসা করার অনুমোদন আছে কি না। একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আমি সেটাই করেছি। তাদের (ই-অরেঞ্জ) ব্যবসার মালিক তো আমি না যে তাদের পলিসি সম্পর্কে আমি জানবো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘সবার মতো মাশরাফিও আমাদের সঙ্গে খেলার পুতুলের মতো খেলছেন। তিনি আমাদের বলেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে বলা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে। আমরা জুন মাসে টাকা দিয়েছি। তখন মাশরাফি ই-অরেঞ্জের অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। তিনি কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা যতটুকু বুঝলাম, মাশরাফি দায় এড়াতে চাইছেন। জানের সদকা হিসেবে টাকার মায়া ছাড়তে বলে মাশরাফি প্রতারকদের মতোই কথা বললেন।’

গ্রাহকদের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তাঁর স্বামী ও প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা মাসুকুর রহমান এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আমানুল্লাহ বর্তমানে কারাগারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত