Ajker Patrika

এমন বন্যা আগে কখনো দেখেননি সুনামগঞ্জবাসী

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৬: ২১
এমন বন্যা আগে কখনো দেখেননি সুনামগঞ্জবাসী

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে পৌরশহরে ঢুকতে থাকে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেসে যায় পুরো শহর। প্লাবিত হতে থাকে একের পর এক উপজেলা। ডুবে যায় জেলার সবচেয়ে উঁচু স্থানটিও। ঢলের পানিতে ভাসতে থাকে মানুষের তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন। অসহায়ত্ব ঘিরে ধরে বানভাসিদের। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা বলছেন, বিগত ৫০ বছরেও তাঁরা এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি।

বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। পৌরশহরের শতভাগ বাসাবাড়িতে ওঠে কোমর থেকে গলাপানি। চোখের সামনেই ভাসতে থাকে ঘরের সাজানো জিনিসপত্র। পানি বৃদ্ধির গতিবেগ এতটাই ছিল যে, যেভাবে পেরেছে ঘর থেকে তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটেছেন।

বৃহস্পতিবারের এ রাত ছিল সুনামগঞ্জবাসীর জন্য একটি কালরাত।

পৌরশহরের পশ্চিম নতুনপাড়ার বাসিন্দা হরলাল দাস বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছিল, তখন আমরা যেভাবে ছুটেছিলাম প্রাণ বাঁচাতে; ঠিক তেমনি করে আমরা বৃহস্পতিবার রাতেও ছুটেছিলাম নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। পানির বেগ এতটাই ছিল—মনে হচ্ছিল নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাব।’

বর্তমানে শহর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো উন্নত হয়নি বন্যা পরিস্থিতি। এখন পর্যন্ত পৌরশহরের অধিকাংশ বাসাতেই পানি। পৌর এলাকার প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো রয়েছে বন্যাকবলিতরা।

ওয়েজখালি এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘লোকালয়ে হু-হু করে পানি ঢোকে। এমন স্রোত আগে দেখিনি। ওই রাতে আমাদের এলাকার একটি ছেলে পানির স্রোতের তোড়ে ডুবে মারা যায়। সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনো ঘুমাতে পারি না।’

বন্যাকবলিতরা জানান, হঠাৎ পানি আসায় ঘরে থাকা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও সরানোর সুযোগ হয়নি। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভেসে গেছে। নষ্ট হয়েছে কাগজপত্র।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কালিপুর এলাকার তাজুল ইসলাম বলেন, বাসায় অনেক মূল্যবান কাগজপত্র ছিল। সব পানিতে ভেসে গেছে। পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কথা ছাড়া আর কোনো কিছু ভাবিনি।

শহরের ভেতরে স্রোতের যে গতি ছিল, প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে তার চেয়ে দ্বিগুণ ছিল স্রোত। আর সেই স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। বিধ্বস্ত হয়েছে আধা পাকা ঘর। এ সংকট থেকে উত্তরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ সুনামগঞ্জবাসীর।

সুনামগঞ্জের গৌরারাং ইউনিয়নের কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার একমাত্র ছিল সম্বল ঘর। সেটাও তছনছ করে ফেলছে বন্যা। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে হলে রাস্তায় গিয়ে থাকতে হবে পরিবার নিয়ে।’

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। কারণ এখনো লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে সহায়তার আশ্বাস দেয় প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত