Ajker Patrika

অষ্টম শ্রেণিতে বিয়ে, অনটন শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
Thumbnail image

শূন্য থেকে শুরু করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটা সহজ ছিল না ফাতেমা খাতুনের। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অভাবের তাড়নায় তাঁকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। লেখাপড়া করে বড় হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বিয়ে করার কারণে তা আর হওয়া হয়নি। তবে ক্ষুদ্রশিল্পের কাজ করে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা। 
ফাতেমার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কাদিহাট জোতপাড়া গ্রামে। এই গ্রামে তাঁর ক্ষুদ্রশিল্পের কারখানা। সেখানে তিনি পাপোশ, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, জায়নামাজসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। এসব পণ্য রপ্তানি করছেন অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

ফাতিমার বিয়ের সময় স্বামীর সংসারের অবস্থা ভালো ছিল না। বিয়ের দুই বছরের মাথায় ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। এর পর আরও এক ছেলের মা হন। সংসারের সদস্য বেড়ে যাওয়ায় চারদিকে অভাব-অনটন ঘিরে ধরে। দম ফেলতে পারছিলেন না তাঁর স্বামী বাবুল হক। কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই কাজের সন্ধানে অনুপ্রবেশ করে ভারতে যান স্বামী। সেই বছরটি ছিল ১৯৯১। ওই দেশের পাঞ্জাব রাজ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকের কাজ করেন বাবুল।

এরই মধ্যে ফাতেমাও কাজ নেন ঢাকার একটি পাপোশ তৈরির কারখানায়। আড়াই বছর পর ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন বাবুল। ওই টাকা দিয়ে শুরু করেন মুদির দোকান। কিছুদিন ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু বাকি বকেয়া পড়ায় ধীরে ধীরে পুঁজি হারিয়ে যায়।

কূলকিনারা না পেয়ে অবশেষে আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাড়িতে চারটি তাঁত বসিয়ে শুরু হয় ফাতেমার উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াই। কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে ব্যবসায়। অদম্য ইচ্ছা আর চেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

২০০৪ সালে শুরু করা ক্ষুদ্র শিল্পটি এখন বড় আকার ধারণ করেছে। ফাতেমার এখন দুটি কারখানা। চারটি মেশিন থেকে ষাটটি মেশিন তাঁর। দেশ ও দেশের বাইরে বিক্রি হচ্ছে তাঁর বানানো পাপোশ। প্রতি ছয় মাস পরপর সাত-আট লাখ টাকার অর্ডার আসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বাহারি নকশা ও টেকসই হওয়ায় তার উৎপাদিত পণ্যের কদর বেড়েছে বহুগুণ। তাঁর কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে এলাকার ২০০ নারী ও পুরুষ। তাঁর স্বামী কাঁচামাল সংগ্রহ ও বাজারজাতের কাজ করছেন।

ফাতেমা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় জনজীবন স্থবির হওয়ায় কিছুটা লোকসানে মুখে পড়তে হয়েছিল। ওই সময় করোনায় দেশের গার্মেন্টসশিল্প প্রণোদনা পেলেও ওই সুবিধা আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। শত বাধা ডিঙিয়ে সব পরিস্থিতিতে লড়ে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এখন আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। আমি ভয় পাই না, আমি সাহসের সঙ্গে সব বাধা জয় করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত