Ajker Patrika

বাঁধ ও চরের মাটি লুট

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা
Thumbnail image

কুমিল্লার গোমতী নদী থেকে বালু এবং বাঁধ ও চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

বাঁধ রক্ষায় বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান চালালেও মাটি লুট থামছে না। নদীর দুই পাড়ের মাটি লুটের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধ ও তীরসংলগ্ন জমির ফসল উৎপাদন।

জানা গেছে, কুমিল্লা জেলা সদরের কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি উপজেলার কলাতিয়া পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী। নদীর উভয় তীরে ১৩৫ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। নব্বইয়ের দশক থেকে এ নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়। তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের প্রতিবেদনমতে, কুমিল্লার গোমতী নদীতে উত্তোলনযোগ্য মাটি ও বালু নেই।

যে কারণে একটি ছাড়া ১২টি বালুমহাল বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, গোমতী নদীর চাঁনপুর ব্রিজ এলাকায় চর থেকে শ্রমিকেরা মাটি কেটে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় দেখা যায়, নদীতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।

গোমতী নদীর টিক্কারচর এলাকার বাসিন্দা শামছুল হক বলেন, একসময় নদীর দুই পাড়ের উৎপাদিত সবজি এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাতেও যেত। এখন সেই অবস্থা নেই। সবজি বেচা-কেনার হাঁকডাকের বদলে কৃষিজমির মাটি লুটের কথা শোনা যায়।

চাঁনপুর গোমতীর পাড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, দিনের পর দিন নদীর দুই পাড়ের মাটি কাটায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের খবর পেয়ে আগেই মাটিখেকোরা সরে পড়ে।

সাব্বির হোসেন নামে গোমতীর চরসংলগ্ন এক বাসিন্দা বলেন, দিন-রাত মাটি কাটার ট্রাক্টরের দাপটে সড়কে চলা দায়। ধুলাবালিতে বাসাবাড়িও অন্ধকার হয়ে যায়। প্রতিবাদ করতে গেলে মারধরসহ হুমকি-ধমকি আসে।

মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ মালিশাইল এলাকায় খননযন্ত্র (ড্রেজিং) দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

মুরাদনগর উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘আমি নিজে বেশ কয়েকবার বালু উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ করেছি। আবার কেউ উত্তোলন করছেন কি না, জানা নেই। কেউ পুনরায় বালু উত্তোলন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পক্ষে এককভাবে কিছু করা কষ্টকর।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, নদী রক্ষায় দায়সারাভাবে একে অপরের কথা না বলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত