Ajker Patrika

শুঁটকিপল্লিতে এক মৌসুমে আয় শতকোটি টাকা

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, ১৫: ০৬
শুঁটকিপল্লিতে এক মৌসুমে আয় শতকোটি টাকা

চারপাশে ঝাঁজালো গন্ধ। এর মধ্যেই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন জেলেরা। পাশেই নদীর তীরে চতলার ওপরে সারিবদ্ধভাবে রাখা শুঁটকির বিশাল স্তূপ। প্রতিটি স্তূপ ঘিরে জেলে ও ব্যাপারীদের আনাগোনা। কিছু জায়গায় বিক্রি হওয়া স্তূপ থেকে শুঁটকি মেপে নিচ্ছেন ব্যাপারীরা। শ্রমিকেরা বিশেষ কায়দায় সেসব প্যাকেট করছেন। নোয়াখালীর হাতিয়ার জাহাজমারা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী সুইজ ঘাটে শুঁটকিপল্লির চিত্র এটি।

একই চিত্র উপজেলার জংগলিয়ার সুইজ ঘাট, কাদিরা ঘাট, বুড়িরদোনা ঘাট, রহমত বাজার ঘাট, আচকা বাজার ঘাট, কাজির বাজার ঘাট, বন্দরটিলা ও নিঝুম দ্বীপ নামার বাজারসহ ১০টি ঘাটে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর চেউয়া মাছ বেশি পাওয়ায় জেলেরা শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

হাতিয়ায় চেউয়া মাছের জন্য সবচেয়ে বড় ঘাট জাহাজমারা মোহাম্মদ আলী সুইজ ঘাট। এখানে ছোট-বড় ৭০-৮০টি জেলে নৌকা রয়েছে। প্রতিটি নৌকায় থাকেন একজন মাঝি ও ৩০-৩৫ জন করে জেলে। ঘাটের প্রবীণ মাঝি নাজিম উদ্দিন জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার চেউয়া মাছ বেশি দেখা যাচ্ছে। গত দুই মাস আগ থেকে শুরু হয়েছে চেউয়া মাছের মৌসুম। আরও দুই মাস এই মাছ পাওয়া যাবে নদীতে।

ইতিমধ্যে এক একটি নৌকা ৩৫-৪০ লাখ টাকা করে শুঁটকি বিক্রি করে আয় করেছে। প্রতি মন শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা ধরে। তাঁর মালিকানা নৌকাটি দুই ঝোতে (দুই কাঁঠাল) ১৫ শত মণ শুঁটকি বিক্রি করেছে। এখনো নদীর তীরে চতলায় শুকিয়ে রাখা একটি শুঁটকির স্তূপ রয়েছে। যাতে আনুমানিক ৬-৭ শত মণের মতো হবে বলে আশা করছেন। আরও বেশি মূল্য পাওয়ার আশায় শুঁটকির এই স্তূপ রেখে দিয়েছেন। এর আগে দুই জোতে পাওয়া ১৫ শ মণ বিক্রি করে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। খরচ বাদে হিসাবে এখন পর্যন্ত এক একজন বাগি (জেলে) প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে পেয়েছে বলে জানান নাজিম মাঝি।

এক প্রশ্নের জবাবে নাজিম মাঝি জানান, শুধু মোহাম্মদ আলী সুইজ ঘাটে জেলেরা এক মৌসুমে শুঁটকি বিক্রি করে আয় করে ৫০ কোটি টাকারও ওপরে। এই বছর আয়ের এই অঙ্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা তাঁর।

শুঁটকি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও বেড়ির বাইরে বন বিভাগের বাগান ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বাজার। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জাহাজমারা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জংগলিয়ার ঘাটে বেড়ি বাঁধের বাইরে চরের মধ্যে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বাজার। একই চিত্র বুড়িরচর বুড়িরদোনা ঘাটের দক্ষিণে এম আলী লালচরে। অস্থায়ী এসব বাজার মূলত শুঁটকি উৎপাদনে নিয়োজিত জেলে ও ব্যাপারীদের গিরে গড়ে উঠেছে। এখানে চায়ের দোকান, মুদিদোকান, জ্বালানি তেল ও ইঞ্জিনের পার্টস বিক্রি করা হয়।

হাতিয়ার শুঁটকির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ময়মনসিংহ। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা কিছু শুঁটকি বিক্রি হয়। এই শুঁটকি দিয়ে তৈরি হয় মাছ ও মুরগির খাদ্যসহ বিভিন্ন উপকরণ।

তবে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় লাভ কম হয় বলে জানান আবুল বাসার। প্রতি মণ শুঁটকি হাতিয়া থেকে ময়মনসিংহ মোকামে পৌঁছাতে খরচ পড়ে ২৪০ টাকা। হাতিয়া থেকে চেয়ারম্যান ঘাট হয়ে ট্রাকে এসব শুঁটকি মোকামে পাঠান তাঁরা।

এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘গত বছর চেউয়া শুঁটকি উৎপাদনের একটি হিসাব আমরা জেলা অফিসে জমা দিয়েছি। বিভিন্ন ঘাটের বড় বড় জেলে নৌকার ওপর এই সমীক্ষা করা হয়েছে। এতে উৎপাদন দেখানো হয়েছে ১২ হাজার টন। এবার এখনো আমাদের সমীক্ষা তৈরি করা হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত