Ajker Patrika

ভাঙা ক্রস বাঁধে ঢুকছে পানি

কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর)
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৬: ১৭
Thumbnail image

যশোরের কেশবপুরের নদ-নদীতে পলি ঠেকাতে আপার ভদ্রা নদীর মুখে নির্মিত আড়াআড়ি বাঁধ (ক্রস বাঁধ) নির্মাণের পর পাঁচ দিনও টেকেনি। তীব্র স্রোতে বাঁধটি ভেঙে আশপাশের নদ-নদী ও বিলে পলি ঢুকতে শুরু করেছে। তবে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার এক মাস হতে চললেও পুনর্নির্মাণকাজ শুরু করেননি ঠিকাদার।

গত ১৫ এপ্রিল ক্রস বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়, কিন্তু পাঁচ দিনের মধ্যেই ৩৬ লাখ টাকার বাঁধটি ভেঙে পলি ঢুকতে শুরু করে। ফলে হরিহর নদসহ আপার ভদ্রা নদীতে হরি নদী থেকে পলি ঢুকে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে ভেঙে যাওয়া ক্রস বাঁধ পুনর্নির্মাণে দেরি হচ্ছে। এ কারণে নদনদীতে পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে কেশবপুর ও মনিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্রস বাঁধটি ভেঙে গেলেও নদনদীতে পলি উঠছে না। ক্রস বাঁধটি পুনর্নির্মাণের জন্য কাজ চলছে।

জানা গেছে, আশির দশকের পর থেকে জোয়ারের সময় হরি নদীর পলিযুক্ত পানি ঢুকে কেশবপুরের হরিহর নদ, বুড়িভদ্রা ও আপার ভদ্রা নদী পলি জমে উঁচু হতে থাকে। এতে নদীগুলো নাব্যতা হারাতে থাকে। পলি জমে নদীর তলদেশ থেকে বিল নিচু হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে সুষ্ঠুভাবে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। এর ফলে মানুষের ফসলহানির পাশাপাশি বাড়িঘরে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পলিযুক্ত পানি ঢোকা ঠেকাতে ও এ সমস্যা নিরসনে কেশবপুরের গৌরীঘোনা ইউনিয়নের কাশিমপুরে আপার ভদ্রা নদীর মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাময়িক ক্রস বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়।

প্রতিবছর জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ওই স্থানে ক্রস বাঁধ দেওয়া হয় এবং জুনের শেষের দিকে তা অপসারণ করার প্রকল্প নেওয়া হয়। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে পলি ঢোকার কারণে নদী রক্ষায় প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ৩ বছর মেয়াদে কেশবপুরের আপার ভদ্রা, হরিহর, বুড়িভদ্রা নদীসহ এর সংযোগ খালগুলো প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। তখন থেকেই হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন হয়।

পলি ঠেকাতে আপার ভদ্রা নদীর মুখে প্রতি বছরের ন্যায় গত ১৫ এপ্রিল ঠিকাদারের মাধ্যমে কাঠের গুঁড়ি (বল্লি), বাঁশের বেড়া ও বস্তার ভেতর মাটি ঢুকিয়ে ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের ৫ দিন অতিবাহিত না হতেই বাঁধটি ভেঙে পলি ঢুকতে শুরু করে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আপার ভদ্রা নদীর মুখে ক্রস বাঁধ ভেঙে গেলেও প্রায় এক মাসেও তা মেরামত হয়নি। যে কারণে জোয়ারের সময় স্রোতে হরি নদীর পলিযুক্ত পানি ঢুকে কেশবপুরের আপার ভদ্রা ও হরিহর নদ পলি জমে উঁচু হয়ে পড়ছে।

সরেজমিন ক্রস বাঁধ এলাকায় গেলে উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক উত্তম বিশ্বাস বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই ভেঙে জোয়ারের পানিতে পলি ঢুকে পড়ছে নদ-নদীতে।’

গৌরীঘোনা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ গাজী বলেন, ‘পলি ওঠার কারণে আবারও নদ-নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বর্ষা মৌসুমে এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দেবে।’

ক্রস বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদার আনন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আপার ভদ্রা নদীর মুখে ক্রস বাঁধ নির্মাণ ও ৩ মাস পর অপসারণ করার দরপত্র পেয়েছি। গত ১৫ এপ্রিলে বাঁধটি নির্মাণ করা হলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রচণ্ড স্রোত ও নিম্ন চাপের কারণে বাঁধটি ভেঙে যায়। আবারও বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হবে।’

ক্রসবাঁধ ঠিকভাবে নির্মাণ না করায় ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আনন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে বাঁধটি নির্মাণ করে ও ৩০ জুন খুলে না দেওয়া পর্যন্ত আমি এক পয়সাও বিল পাব না।’

উপজেলার ২৭ বিল পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, ‘আপার ভদ্রা নদীর মুখের ক্রস বাঁধ ভেঙে পলি উঠছে। দ্রুত ক্রসবাঁধ পুনর্নির্মাণ না করা হলে পলিতে নদ-নদী উঁচু হয়ে আগের মতো কেশবপুর ও মনিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।’

কেশবপুরের ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘ক্রসবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদ-নদীতে পলি জমে তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে হরিহর নদ-সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে।’

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ‘তীব্র জোয়ারের চাপে বাঁধটি ভেঙে যায়। তবে পলি উঠছে না। বৃষ্টির কারণে স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় পলি উঠছে না। মে মাসের মধ্যে ঠিকাদার বাঁধটি পুনর্নির্মাণ করতে না পারলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে এবং তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। তবে আশা করছি দ্রুত ক্রসবাঁধের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত