Ajker Patrika

আলুর দরপতন, উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১০
আলুর দরপতন, উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের

বগুড়ায় আলুর অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে আলুর দাম। আলু বিক্রি করে উৎপাদনের খরচই উঠছে না কৃষকের। তার ওপর দুই দিনের টানা বৃষ্টি বড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। তড়িঘড়ি করে কম দামেই আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জানুয়ারির শুরু থেকেই আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি মণ আলু পাইকারি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। গত বছর এ দাম ছিল ৪০০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় এবার ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক জমি থেকে আলু তোলা হয়েছে। মাঠে আছে ২৮ হাজার হেক্টর জমির আবাদ, যেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। সেখানে ৬ লাখ মেট্রিক টন আলু আছে।

শাখারিয়ার আলুচাষি লাল মিয়া জানান, প্রতি বিঘা আলুর চাষ করতে তাঁর খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৬০-৭০ মণ। এ হিসাবে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনছেন তিনি।

রাজাপুর এলাকার ব্যবসায়ী ফটু মিয়া বলেন, এবার আলু আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে ক্লোডস্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করা শুরু হয়। এ সময় মণপ্রতি দেড় থেকে দুই শ টাকা করে দাম বাড়বে।

এদিকে, ফেব্রুয়ারিতে বাড়তি দামে বিক্রির আশায় কিছু কৃষক বাড়িতেই আলু সংরক্ষণের চেষ্টা শুরু করেছিলেন। কেউবা জমি থেকেই কিছুটা দেরি করে আলু তোলার কথা ভাবছিলেন।

কিন্তু গেল বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বৃষ্টি সে আশাও শেষ করে দেয়। আর তার পরের তিন দিন রোদ না হওয়ায় জমির পানি জমিতেই থেকে যায়। এ অবস্থায় আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষিবিদেরা বলছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলু বিক্রি করে দিতে হবে। বৃষ্টিভেজা আলু সংরক্ষণ করলে তাতে পচন ধরবে।

সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মিস্টার প্রামাণিক বলেন, ‘আরও ১৫ দিন পর আলু তুলব ভেবেছিলাম। কিন্তু পানি জমে আলু পচে যাওয়ার ভয়ে এখনই তড়িঘড়ি করে আলু তুললাম। এতে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ কম আলু পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে দামও কম।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় এবার ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক জমি থেকে আলু তোলা হয়েছে। মাঠে আছে ২৮ হাজার হেক্টর জমির আবাদ, যেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে। তবে জেলার আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া ও কাহালু উপজেলায় বৃষ্টির পানিতে আবাদি জমিতে তেমন ক্ষতি হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) এনামুল হক জানান, জেলায় ২৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে। সেখানে ৬ লাখ মেট্রিক টন আলু আছে।

কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. হাসান সারওয়ার বলেন, এবার আলুর ফলন এবং আমদানি বেশি ছিল বলে জানুয়ারিতে দাম কমেছিল। ফেব্রুয়ারিতে দাম বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে আলু তোলায় দাম বাড়ছে না আপাতত। তবে মাসের শেষ দিকে দাম বাড়বে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত