Ajker Patrika

বৃষ্টিতে ডুবল বোরোর খেত

লালমনিরহাট ও নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ১৫: ০১
Thumbnail image

বৃষ্টিতে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নিচু এলাকার ধানখেত ডুবে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কায় অনেক কৃষক আধা পাকা ধান ঘরে তুলছেন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

নাগেশ্বরী: উপজেলা কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বৃষ্টিপাতে নাগেশ্বরীতে প্রায় ১৯ হেক্টর আধা পাকা, পাকাসহ সদ্য শিষ বের হওয়া ধান ডুবে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। ডুবে যাওয়া আধা পাকা ধানগাছ চড়া মজুরিতে শ্রমিক দিয়ে কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকেরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগার জানায়, গত শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, ধান কাটতে দ্বিগুণ মজুরিতেও মিলছে না কৃষিশ্রমিক। শ্রমিক-সংকটের কারণে নিজেরাই নেমেছেন ধান কাটার কাজে। ডুবে যাওয়া ধান কেটে নৌকাসহ বিভিন্ন উপায়ে তুলছেন রাস্তার ধারে ও উঁচু জায়গায়।

নাগেশ্বরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক পানিতে থাকা ধান কাটলেও মাড়াই করতে পারছেন না। ফলে গাদায় নষ্ট হচ্ছে এসব ধান। উপজেলার বানুর খামার, হাউরিরভিটা, গোদ্ধারের পাড়, চচলার বিল, বোয়ালের দারা, বাগডাঙ্গা, সন্তোষপুর ইউনিয়নের আমতলা, ছিলাখানা, নাওডাঙ্গা, ধরকা বিল, রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা, বানারপার, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সাপখাওয়া বিল, বড়বাড়ী, কেদার ইউনিয়নের সুবলপাড়, সাতানা, কচাকটা ইউনিয়নের জালির চরসহ বেশ কিছু এলাকার খাল-বিলের পানিতে আধা ডোবা অবস্থায় রয়েছে শত শত বিঘা জমির ধান। অপরদিকে নিচু এলাকার ধান একেবারে ডুবে গেছে।

উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের আমতলা এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের জানান, তিনি আমতলা বিলে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। সব ধান এখন পানির নিচে।

উপজেলার হাউরিভিটা এলাকার দেলবর আলী জানান, তাঁর পাঁচ বিঘা জমির বোরো পানিতে ডুবে গেছে। এতে তিনি আধা পাকা ধান কাটছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, ১৯ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হলেও খেতের তেমন ক্ষতি হবে না।

লালমনিরহাট: জেলার কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও বেশির ভাগ অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনে এসব কৃষক পরিবার খুশি থাকলেও বৈরী আবহাওয়া ও দাম নিয়ে শঙ্কা রয়েছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিক মজুরিও বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বোরো ধানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। পাকা ধান শিলাবৃষ্টি বা কালবৈশাখীর কবলে পড়লে নষ্ট হবে। এ কারণে অনেকে আধা পাকা ধান মাড়াই শুরু করেছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছের আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এবার শিলাবৃষ্টি হলে একটা ধানও ঘরে তোলা যাবে না। তাই ধান পাকা শুরু হতেই কাটা শুরু করেছি। বাকি দিনগুলো আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ধান ঘরে তোলা যাবে। না হলে লোকসান গুনতে হবে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কিশামত হারাটি গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার মানু বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই এখন বৃষ্টি ও ঝড় হচ্ছে। ধান আধা পাকা হওয়ায় কেটে বাড়িতে এনে মাড়াই করছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৮১৫ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বাড়বে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান মুকুল জানান, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও বোরোর ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। মাড়াই করার উপযুক্ত ধান খেতে না রেখে দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত