Ajker Patrika

ফুলের গ্রাম অলঙ্কারকাঠি

মো. হাবিবুল্লাহ, নেছারাবাদ (পিরোজপুর)
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩৩
ফুলের গ্রাম অলঙ্কারকাঠি

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার অলঙ্কারকাঠি গ্রামের নাম এখন ফুলের গ্রাম। গ্রামটি ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ফুলপ্রেমীদের পদচারণে মুখর পল্লিটি। নেছারাবাদের অলঙ্কারকাঠি বেইলি সেতু পার হওয়ার পর থেকে শুধু ফুলের সমাহার। দেখে মনে হবে ফুলের চাদর পড়ে আছে গ্রামটিতে। অলঙ্কারকাঠি বেইলি সেতু থেকে উত্তর শর্ষিনা পর্যন্ত সড়কের দুধারে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা দুই শতাধিক নার্সারিতে ফুলের চারা কেনাবেচা এখন জমজমাট। দুই সহস্রাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে এই নার্সারি গ্রাম অলঙ্কারকাঠি। প্রতিদিন লাখ টাকার চারা বেচাকেনা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০০২ সালে অলঙ্কারকাঠি বেইলি সেতুর পশ্চিম পাড়ে কৃষ্ণকাঠি গ্রামের একখণ্ড জমি নিয়ে পানাউলাপুর গ্রামের মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন বৈশাখী নার্সারি। এর কয়েক বছর পর জাহিদুল ইসলাম পলাশ প্রতিষ্ঠা করেন ছারছীনা নার্সারি। একই সময় গড়ে ওঠে তৌহিদের আশা নার্সারি। বর্তমানে অলঙ্কারকাঠি গ্রামসহ কাছাকাছি এলাকা মিলিয়ে ওখানে দুই শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে।

আয়সা-সিদ্দিকা নার্সারির মালিক মো. সাখাওয়াত বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে নার্সারি ব্যবসায় জড়িত। তিনি ৪০ শতাংশ জায়গায় এ বছর ১১ হাজার ফুলের চারা দিয়েছেন। তাঁর নার্সারিতে সব সময় তিন-চারজন কাজ করেন। এ বছর তাঁর নার্সারিগুলোতে গোলাপ, ডালিয়া, কেনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা গান্ধা, গাঁদা, জিনিয়া, কেনিডোলাসহ ১৮ প্রজাতির ফুলের চারা দিয়েছেন।

নার্সারির মালিক আব্দুল হাই বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ফুলের চারা কলমের নার্সারিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে নার্সারিতে ভালো বেচাবিক্রিতে উপযুক্ত যোগাযোগব্যবস্থা থাকার দরকার। এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ফুলের চারা দিয়েছেন। প্রতিদিন তাঁর নার্সারিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফুলের চারা বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে বড় রাস্তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বাররা যদি কোনো সাঁকো দিত, তাহলে আমাদের বিক্রি অনেক বেড়ে যেত। আমার মতো এখানে আরও শতাধিক নার্সারির মালিকেরা একই সমস্যায় আছেন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, নার্সারিতে চারা উৎপাদনে তাঁরা ন্যূনতম সরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছেন না।

নার্সারির মালিক শাহাদাৎ হোসেন ও আশা নার্সারির মালিক তৌহিদ বলেন, ঢাকার বীজ বিক্রির দোকান ও বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্টের কাছ থেকে বীজ কিনে আশ্বিন মাসে বীজতলা করে বীজ বপন করতে হয়। ১৫ থেকে ২০ দিন পর চারা গজালে পলিথিন প্যাকেটে স্থাপন করে পানি ও ওষুধ দিতে হয়। ওই সব গাছে অগ্রহায়ণ মাসে ফুল আসতে শুরু করে। চৈত্র মাস পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। জমি চাষ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি নার্সারিতে ৮ থেকে ১০ জন করে শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও কাজ করেন। এ জন্য নারীদের ৩০০ টাকা ও পুরুষদের ৪৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হয়। ফুলের চারা কলমে নার্সারিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

নেছারাবাদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, ‘উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ২০০০ নার্সারি রয়েছে। নার্সারি ব্যবসায়ীদের জন্য আমাদের পক্ষ পৃথক কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আমাদের সম্পর্কটা বেশি থাকে রবিশস্য চাষিদের সঙ্গে। সম্প্রতি আমরা উপজেলা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ৬০ জন চাষিকে এক দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘নার্সারি ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রি বৃদ্ধির জন্য যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত