Ajker Patrika

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ০৮
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। শিক্ষাগত যোগ্যতার যে জাল সনদের কারণে তাঁর ব্যাংকের চাকরি গিয়েছিল, তা ব্যবহার করেই তিনি স্থানীয় আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩ সালে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) জাহাঙ্গীরকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক মিলিয়ে ২০ বছর চাকরি করেন। চলতি বছরের এপ্রিলে তাঁকে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে হলে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো ফাইলে জাহাঙ্গীরের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে এমবিএম (মাস্টার্স অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট)। এর পক্ষে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাংয়ের (ইউএসটিসি) সনদ জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ওমর গণি এমইএস কলেজ থেকে বিএ (পাস), বারইয়াহাট কলেজ থেকে এইচএসসি ও আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের সনদ জমা করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর ১৯৯৬ সালে পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে (মানবিক বিভাগ) এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। একই সালে তিনি বারইয়াহাট কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের যে সনদটি বোর্ডে জমা দিয়েছেন, সেটি জাল বলে ২০২৩ সালেই শিক্ষা বোর্ড আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংককে নিশ্চিত করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। এ ছাড়া ইউএসটিসি থেকে ২০১৬ সালে এমবিএম ডিগ্রি নেওয়ার যে সনদ দেখানো হচ্ছে, সেটিও জাল। কারণ ইউএসটিসিতে ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধীনে এ নামে কোনো ডিগ্রি নেই বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০২৩ সালের দিকে আমরা জানতে পারি, জাহাঙ্গীর আলম যে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দিয়ে চাকরি করছেন, তা জাল। এরপর ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাঁকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।’

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় এক আওয়ামী লীগ নেতা বড় অঙ্কের ঋণ চেয়েছিলেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই ঋণ প্রদানে আমি সম্মত না হওয়ায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আমাকে চাকরিচ্যুত করে। তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কিছু লোক এখনো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

জাহাঙ্গীরের বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিনজন ব্যক্তির একটি প্যানেল কাগজপত্রসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠান। প্যানেল নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলে তা শিক্ষা বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়। শিক্ষা বোর্ড পরবর্তী সময়ে সভাপতি মনোনয়ন দিয়ে থাকে। সার্টিফিকেট নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা আমাদের অবহিত করা হলে সেটা শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করা যাবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক হয়ে মনোনীত ফাইলটি শিক্ষা বোর্ডে আসে। কোনো অভিযোগ না থাকলে শিক্ষা বোর্ড কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এতগুলো ধাপ পার হয়ে আসার পর কেউ জাল সনদ জমা দিয়েছেন কি না, তা আর দেখা হয় না। তবে অভিযোগের সত্যতা পেলে কমিটির পদ বাতিল করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত