Ajker Patrika

এক চালকলেই এত নামী কোম্পানির চাল!

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
এক চালকলেই এত নামী কোম্পানির চাল!

কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার বাটিকামারা এলাকার আনসার অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের চালকলে প্রস্তুত হচ্ছে মামা-ভাগনে, সুপার স্বর্ণা, আহাদ স্পেশাল, সাফি স্পেশাল, নয়ন অ্যাগ্রো ফুড, এফআরআরসহ বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের চাল। অথচ এসব চাল প্রস্তুতের খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেই।

চালের বস্তায় নেই উৎপাদনের মেয়াদ। দীর্ঘদিন ধরে চাল ও ধান মজুত রাখায় অসংখ্য বস্তায়  বাসা বেঁধেছে মাকড়সা। এ ছাড়া চালকলে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চাল ও ধান।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আনসার অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস অটো চালকলে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহীদুল ইসলাম, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. এরশাদ আলীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে ওই চালকলে এমন অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। তবে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের পূর্ব নির্ধারিত কোনো নির্দেশনা না থাকায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে মালিককে সতর্ক করেছেন প্রশাসন।

দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, চালকলের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘আনসার অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, এখানে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ধান থেকে চাল তৈরি, বাছাই প্রস্তুত করে পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়।’ কিন্তু চালকলের ভেতরের চিত্র ভিন্ন। শুধু আনসার সুপার চাল নয়, প্রস্তুত করা হচ্ছে মামা-ভাগনে, সুপার স্বর্ণা, আহাদ স্পেশাল, সাফি স্পেশাল, নয়ন অ্যাগ্রো ফুড, এফআরআরসহ বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের চাল। এগুলো কুষ্টিয়ার খাজানগর, কবুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠানের নাম।

অভিযান চলাকালে আনসার অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক অ্যাডভোকেট জাকারিয়া আনসার মিলন বলেছেন, ‘বিভিন্ন লোকজন ও অ্যাগ্রো কোম্পানি তাদের মিল থেকে চাল প্রস্তুত করে নিয়ে যান। কিন্তু বিষয়টি খাদ্যগুদামকে জানানো হয়নি।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিকেলে এই পরিচালকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনে তো এসব কথা বলা যায় না। রাত আটটায় অফিসে আসেন। বিস্তারিত সামনাসামনি বলা যাবে।’

জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার সাফি অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক তুহিনুজ্জামান হালিম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এখন আমার ব্যবসা ছোট হয়েছে। তাই আনসার অ্যাগ্রো ফুড থেকে চাল প্রস্তুত করি। তবে বস্তায় লাগানো লোগোতে ঠিকানা পরিবর্তন করা হয়নি। আমার অন্যায় হয়েছে।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. এরশাদ আলী বলেন, ‘আনসার অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসে আজ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের চাল প্রস্তুতের নমুনা পাওয়া গেছে। যা নিয়মবহির্ভূত। মূলত এক কলে অন্য কলের চাল প্রস্তুত করতে হলে খাদ্যগুদামের অনুমতি নিতে হয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আনসার অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে খাদ্যগুদাম কর্তৃক পূর্বনির্দেশনা প্রদান না করায় মিলের পরিচালককে সতর্ক করা হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত