Ajker Patrika

রংপুরে পথে পথে ভোগান্তি

শিপুল ইসলাম, রংপুর
রংপুরে পথে পথে ভোগান্তি

‘৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নিল। তাও অটোরিকশাচালক ভয়ে অর্ধেক পথে নামিয়ে দিলেন। এ্যালা পানিত ভিজি হাঁটি যাবার নাগছি। প্রাইম মেডিকেল এ্যালাও কত দূর বাবা।’ 

গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার সময় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের মাছের আড়ত এলাকায় তল্লাশিচৌকির কাছে কথাগুলো বলছিলেন সদরের পালিচড়া এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম। ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তিনি। অটোরিকশায় করে শহরে আসতে পারলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দেখে তাঁদের মাঝপথে নামিয়ে দেন চালক। 

বেলা ২টার দিকে রংপুর সিটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আজমউদ্দিন ও নুসরাত দম্পতিকে। আজমউদ্দিন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে যাচ্ছিলেন। 

আজমউদ্দিন বলেন, ‘তিন দিন ধরে ঘরে বন্দী। ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ, অফিস বন্ধ। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। তাই স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে রেখে আসতে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো গাড়ি নাই। অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে এলাম। ১৩০ টাকার ভাড়া ৪২০ টাকা লাগল। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কবে গাড়ি চলবে, কবে সবকিছু ঠিক হবে—আল্লাহ জানে।’ 

গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো চলে কারফিউ। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না। যাঁরা বের হচ্ছেন তাঁরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কারফিউতে রংপুরে সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূরের পথের যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। চলাচলে একমাত্র ভরসা অটোরিকশা হলেও কারফিউর অজুহাতে যাত্রীদের পকেট কাটার অভিযোগ উঠেছে চালকদের বিরুদ্ধে। 

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো নগরী ছিল সুনসান। প্রধান প্রধান সড়কে সব দোকানপাট বন্ধ ছিল।

তবে অলিগলিতে কিছু লোক দেখা গেছে। কারফিউ শিথিলের সময় মানুষকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাইরে দেখা গেছে। তবে দিনভর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে দেখা যায়। তাঁরা বিনা প্রয়োজন বাইরে আসা লোকজনকে ফেরত পাঠিয়ে দেন। 

বেলা ৩টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ মোড়ে মেডিসিনের বক্স হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তারাগঞ্জের ওষুধ ব্যবসায়ী নূর আলমকে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর একটি অটোরিকশা পেয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আসার সময় ২০ কিলোমিটার রাস্তা চারবার ভেঙে আসি। অটোরিকশা না থাকলে তাও আসা যেত না। দোকানে অনেক ধরনের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন। তাই ঝুঁকি নিয়ে ওষুধ নিতে আসি।’ 

মেডিকেল কলেজ মোড় এলাকায়  অটোরিকশাচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়া গাড়ি বের করছি। তার ওপর যাত্রী নাই।’ 

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রংপুরের সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। নগরবাসী শান্তিপূর্ণভাবে কারফিউ মেনে চলছেন। গত তিন দিনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত