Ajker Patrika

‘বাচ্চাটারে খাওয়াইতে পারি না’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৬: ১৬
Thumbnail image

‘আমাগো দিন-রাইত কষ্ট আর ভয়ে কাটতাছি। পেট ভইরা খাইতেও পারি না। বাচ্চাটারে ঠিকমতো খাওয়াইতে পারি না। চকির তলায় পানি, ঘরে পানি। বাচ্চাটারে নিয়া লাগাতার ভয়ে থাহি।’ বন্যায় দুর্ভোগ নিয়ে কথাগুলো বলেন কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর গ্রামের মঞ্জিলা।

মঞ্জিলা ওই গ্রামের দিনমজুর শাহজালালের স্ত্রী। জমানো টাকা দিয়ে টিন কিনে নতুন ঘর তুলেছিলেন তাঁরা। বানের পানি এখন তাঁদের ঘরে। কোমরপানিতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিছানা দ্বিগুণ উঁচু করেও যেন রেহাই নেই। শিশুসন্তান নিয়ে ওই ঘরেই এক সপ্তাহ ধরে ঝুঁকিতে বাস করছে ওই দম্পতি। বাঁশের মাচানে চুলা তুলে সেখানেই রান্না। উপকরণের অভাবে তিনবেলা রান্না হয় না। এক কিস্তি ত্রাণ পেলেও শিশুসন্তান নিয়ে ঘোলাপানির অসহনীয় বন্দীজীবনে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। এদিকে প্লাবিত এলাকায় কাজও জুটছে না।

শুধু সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন নয়, জেলার ৯ উপজেলার দেড় লক্ষাধিক দুর্গত মানুষের সিংহভাগের অবস্থা করুণ। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় তাঁরা নিজেরা যেমন কষ্টে আছেন, তেমনি গোখাদ্যের সংকট তৈরি হওয়ায় গরু-ছাগলের খাবার জোগাড়েও হিমশিম খাচ্ছেন।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের হানিফ, আনছারসহ কয়েকজন বানভাসি জানান, গবাদিপশু নিয়ে পাশের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিলেও নিজেদের ও পশুখাদ্য জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এলাকায় কিছু পরিবারে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হলেও পশুখাদ্য নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। ফলে মানুষের সঙ্গে খাদ্যসংকটে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার গবাদিপশু।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকায় পাঁচ হাজার বানভাসি পরিবারের জন্য সাত মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি; যা ৭০০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। আরও খাদ্যসহায়তা দরকার।’

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, গতকাল বুধবার পর্যন্ত দুর্গতদের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ১৮ লাখ টাকা ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; যার সিংহভাগ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে মাঠপর্যায় থেকে জানা গেছে, বেশির ভাগ দুর্গত এলাকায় কোনো শিশুখাদ্য কিংবা গোখাদ্য বিতরণ শুরু হয়নি। বরাদ্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ দুর্গত এলাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ দুই উপকরণ।

এদিকে এক সপ্তাহ ধরে বিপৎসীমার ওপরে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ওঠানামা করছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী হওয়া বন্যায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চর ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

পাউবো জানায়, গতকাল বুধবার বেলা ৩টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমলেও বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য কমলেও একই সময়ে নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত