কথায় ঝাঁজ নেই, ম্যাচে কি থাকবে

মাথায় টুপি, চোখে কালো চশমা, হাতে তাঁর ওয়াকিটকি–চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দেখলে মনে হবে, দুর্ধর্ষ কোনো ‘গোয়েন্দা’ চলে এসেছেন পালেকেল্লেতে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে। ‘মাস্টারমাইন্ড’, দুর্দান্ত ‘গেম প্ল্যানার’ বলতে যেমন চেহারা একজন মানুষের চোখে ভেসে ওঠে, গতকাল ঠিক তেমনই দেখাচ্ছিল হাথুরুকে।

অনুশীলনের ফাঁকে ওয়াকিটকি নিয়ে হাথুরুকে কথাও বলতে দেখা গেল। অনুশীলনের ফাঁকেই প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করা স্বদেশি কোচের সঙ্গে দেখা করে গেলেন দাসুন শানাকা। তাসকিন আহমেদের সঙ্গেও বেশ কিছুক্ষণ হাসি-রসিকতা করলেন লঙ্কান অধিনায়ক। গতবার তাঁর এক মন্তব্যে মরুতে বিতর্কের আগুন জ্বলেছিল। ২০২২ এশিয়া কাপের শুরুতে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ নিয়ে শানাকা বলেছিলেন, বাংলাদেশ দলে সাকিব আল হাসান আর মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া বিশ্বমানের বোলার নেই। এটির জবাবে বাংলাদেশ টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, ‘আমাদের দুই বোলার, তাই তো? আমি বলব, তাদের দলে সেটাও নেই। যেখানে বাংলাদেশের দুজন আছে, এটা তো ভালো।’

ব্যস, শুরু হয়ে গেল তুমুল হইচই। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ মানেই যে এখন বাড়তি উত্তাপ আর তীব্র ঝাঁজ, সেটি গত কয়েক বছরে নিয়মিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফল যেটাই হোক; এবারও আরেকটি তপ্ত, রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের অপেক্ষায় দর্শকেরা। যদিও দুই দলের পক্ষ থেকে এই ‘দ্বৈরথ’কে বড় করে না দেখে বরং সমীহ, সব ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা সামনে আনছেন। দেশে থাকতেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেমন বলেছিলেন, গত কয়েক বছরে দুই দলই একে অন্যের বিপক্ষে ধারাবাহিক ভালো খেলছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হচ্ছে বলেই হয়তো এমন মনে হচ্ছে।

ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশনে বাংলাদেশকে পেয়েও শানাকা অহেতুক বাতাস গরম না করে বরং শান্তির পতাকা উড়িয়েছেন। যেন মনোযোগ অন্তত ক্রিকেটেই রাখা যায়। তাঁর সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবে গতবারের সেই মন্তব্য এল। শুনে শানাকা হাসলেন। বললেন, ‘অবশ্যই বাংলাদেশের বিশ্বমানের বোলার আছে। গতবার আমি খারাপ কিছু বলতে চাইনি। কিন্তু আমার বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধা আছে তাদের প্রতি। আপনি কথাটা কীভাবে নিচ্ছেন, সেটার ওপর নির্ভর করে সবকিছু।’

দুই দল মিলে যাচ্ছে একটি জায়গায়, আজ তারা নিজেদের এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে একাধিক চোট-অসুস্থতায় খেলোয়াড় হারানোর দুঃসংবাদ নিয়ে। শ্রীলঙ্কা দলে নেই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুষ্মন্ত চামিরা, দিলশান মাদুশঙ্কা ও লাহিরু কুমারার মতো তারকা বোলাররা। আবার বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে হারিয়েছে লিটন দাসের মতো ওপেনারকে। তামিম ইকবাল-ইবাদত হোসেন তো নেই আরও আগে থেকে। লিটনের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। যথারীতি এবারও নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করে বিসিবি আকস্মিকভাবে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে এনামুল হক বিজয়কে। দুই দলই যেহেতু নিয়মিত কিছু খেলোয়াড়কে হারিয়ে বেশ ধাক্কা খেয়েছে, সাকিব তাই বলছেন, দুই দল একই অবস্থানে রয়েছে।

লিটন নেই, বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে আজ নাঈম শেখের সঙ্গে দেখা যেতে পারে ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা তানজিদ হাসান তামিমকে। লোয়ার মিডল অর্ডারে যদি শেখ মেহেদী হাসানকে না খেলায়, তবে শামীম পাটোয়ারীরও ওয়ানডে অভিষেক হতে পারে। পেস বোলিংয়ে পুরোনো সেনানীদের ওপরই ভরসা রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট। মোস্তাফিজুর রহমান ফিট না থাকলে শরীফুল ইসলাম থাকতে পারেন একাদশে।

পালেকেল্লের উইকেট সাধারণত রানপ্রসবা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় মাত্রাতিরিক্ত ক্রিকেটীয় ব্যস্ততায় বেশির ভাগ উইকেট ‘ক্লান্ত’ শোনা যাচ্ছে। সে হিসেবে আজকের হাই স্কোরিং ম্যাচ যদি না-ও দেখা যায়, আরেকটি বাংলাদেশ-লঙ্কার রোমাঞ্চকর ম্যাচ হতে তো কোনো বাধা নেই।