Ajker Patrika

বেকারত্ব ঘোচাবে বাপার্ড

মো. জাহিদুল ইসলাম, কোটালীপাড়া
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১২: ২৭
Thumbnail image

দেশে হাজার হাজার উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড)। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই প্রতিষ্ঠানটি। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে বাপার্ডের উদ্বোধন করবেন।

এ উপলক্ষে পুরো একাডেমি বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। করা হয়েছে আলোকসজ্জা।

এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জীবন মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সৃষ্টি করবে দক্ষ মানব সম্পদ। এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বাপার্ড। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের কাতারে সামিল করতে এই একাডেমি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই একাডেমিতে জাতীয়, আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে এখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নে কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি এ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দেয়। শত বাধা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৩০ হাজার মানুষকে কৃষি কাজ, সবজি, মৎস্য চাষ, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন, সেলাই, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাঁদের উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছে। এতে কয়েক লাখ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে এটিকে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যের বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড) প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেন।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি ২ শ ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ একর জমির ওপর বাপার্ড বাস্তবায়ন করেছে। এখানে রয়েছে ২টি ১০ তলা ভবন, অত্যাধুনিক প্রশাসনিক, হোস্টেল ভবন। রয়েছে পোলট্রি, হ্যাচারিসহ বিভিন্ন শেড। একাডেমির সব পুকুর নতুন করে সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো সব স্থাপনা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। একাডেমির সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর বাপার্ড নতুন আঙ্গিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের একাডেমি হিসেবে কাজ শুরু করবে।

কোটালীপাড়া উপজেলার কুরপালা গ্রামের চয়ন হাওলাদার বলেন, ‘আমি বাপার্ড থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি দোকান দিয়েছি। আমি এখানে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। অনেকে আমার এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। চাকরি না খুঁজে আমি এই কম্পিউটারে দোকান দিয়ে অনেক ভালো আছি।’

বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার মৌসুমি ভৌমিক বলেন, ‘আমি বাপার্ড থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতে একটি টেইলার্স করেছি। আমার এলাকার নারীরা আমার কাছ থেকে তাঁদের পোশাক তৈরি করেন। এ ছাড়া আমি এলাকার নারীদের পোশাক তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমি এখন আমার স্বামী সংসার নিয়ে খুবই ভালো আছি।’

গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, ‘বাপার্ডের নির্মাণকাজ শেষে হয়েছে। ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাপার্ড উদ্বোধন করবেন। এরপরই ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দিন বদলে বাপার্ড ও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাপার্ডকে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি হিসেবে আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি।’

বাপার্ডের মহাপরিচালক সৈয়দ রবিউল আলম বলেন, ‘ঢাকার কাছের জেলা গোপালগঞ্জ। কিন্তু পদ্মা নদীর কারণে এ জেলার সঙ্গে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এ জেলার সঙ্গে দেশের সব জেলার যোগাযোগ স্থাপন হবে। সেই সঙ্গে বাপার্ড প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারব। পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ গড়বে এই একাডেমি। সারা দেশের ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারব। গবেষণা ও গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়ন করে আমরা মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করতে সক্ষম হব।’

সৈয়দ রবিউল আলম আরও জানান, আন্তর্জাতিক মানের এই একাডেমিতে ইন্টারন্যাশনাল সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম আয়োজনের সুযোগ রয়েছে। এখান থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। এসব সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় নিয়ে আসতে পারব। দেশ উন্নত দেশের মতই উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাপার্ডের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ তোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আগে থেকেই কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন আঙ্গিকে আন্তর্জাতিক মানের একাডেমি হিসেবে এটি যাত্রা শুরু করবে। এতে মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দক্ষ মানব সম্পদ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। অবশ্যই আমদের দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হবে। এখান থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য চিরতরে বিদায় নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত