Ajker Patrika

পাটপাতায় ডলার আয়

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
Thumbnail image

সোনালি আঁশ কি তবে এবার সোনালি পাতা হয়ে যাচ্ছে! পুরো গল্পটি শুনলে এ প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে।

মেস্তা কিংবা অপরাজিতা ফুলের চা বেশ জনপ্রিয়। এবার তাদের জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাতে বাজারে এসেছে পাটপাতার চা! ইতিমধ্যে পাটপাতা দিয়ে তৈরি এ চা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে শুরু করেছেন টাঙ্গাইলের এলাসিন গ্রামের জাকির হোসেন তপু। স্বাস্থ্যগুণে পূর্ণ পাটপাতার চায়ের চাহিদা দেশীয় বাজারে দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে।

জাকির হোসেন ব্যবসার সুবাদে ঘুরেছেন বিশ্বের ৫১টি দেশ! আমেরিকায় থাকাকালীন অলটারনেটিভ মেডিসিন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন। জেনেছেন ভেষজ উদ্ভিদ ও গুল্মলতার গুণাগুণ। সে সময় ছোটবেলার স্মৃতি বারবার তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। পূর্বপুরুষদের রোগ নিরাময়ে ভেষজ পাতা ও কাণ্ডের ব্যবহার তাঁর মানসপটে ভেসে বেড়িয়েছে। দেশে ফিরে ২০১০ সাল থেকে ভেষজ গুল্মলতা ব্যবহারে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেন তিনি। প্রথমে কালিজিরার তেল উৎপাদনে সফলতা পান। এরপর পাটপাতা দিয়ে চা তৈরির উদ্যোগ নেন।

পাটপাতায় বহুমাত্রিক ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ডায়াবেটিস রোগে বিশেষ উপকারী। পাটপাতা শরীরের প্রদাহ কমিয়ে ওজন কমায়, ক্যানসার, পেটের বিভিন্ন অসুখ, আলসার, উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে এটি। জ্বর, ঠান্ডা, ফ্লু নিয়ন্ত্রণ, দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বৃদ্ধি, দাঁতের সুরক্ষা ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে অদ্বিতীয় এটি। তাই পাটপাতা শুকিয়ে চা-পাতার মতো রূপান্তর করে আধুনিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেন জাকির হোসেন।

উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে পাটপাতার চা বাজারজাত করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই চায়ের ভোক্তা পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী মানুষই বেশি।

নতুন প্রজন্ম এখনো এই চায়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। তবে আমেরিকা, ডেনমার্ক, ইউরোপ ও জার্মানিতে এর চাহিদা অনেক। প্রতি মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার পাটপাতার চা বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাকির হোসেন। মহিমা প্রোডাক্টসের ব্যানারে উৎপাদিত এই পণ্য লাজ ফার্মার প্রতিটি আউটলেট ও দারাজের মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যায় দেশে।

বর্তমানে জাকির হোসেনের চা কারখানায় নিয়মিত ও অনিয়মিত অন্তত ২৫ জন কর্মী কাজ করছেন। পাটপাতা সংগ্রহের পর পরিষ্কার করে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর সেগুলো আবারও ভালো করে বেছে পরিষ্কার করে মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেজিং করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে পাটপাতার চা ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বহুমুখী পাটশিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহের হুসাইন। পাটপাতার চা উৎপাদনে গুরুত্ব ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)-এর পরিচালক (বিক্রয়) অধরা বোস বলেন, পাটপাতার চা সুধী মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। মিনিস্ট্রি লেবেলের অনেকেই পাটপাতার চা আমাদের সেলস সেন্টার থেকে নিয়ে খাচ্ছেন এবং উপকৃত হচ্ছেন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে অতিথিদের জন্য উপহার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেনের উৎপাদিত পাটপাতার চা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অধরা বোস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত