Ajker Patrika

আর্জেন্টিনার অপেক্ষার ইতি নাকি ফের ফরাসি বিপ্লব

উপল বড়ুয়া, ঢাকা
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪: ১৭
আর্জেন্টিনার অপেক্ষার ইতি নাকি ফের ফরাসি বিপ্লব

‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘বধূ শুয়ে ছিল পাশে—শিশুটিও ছিল;/ প্রেম ছিল, আশা ছিল—জ্যোৎস্নায়—তবু সে দেখিল/ কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?/ অথবা হয়নি ঘুম বহু কাল—লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার...।’

ফুটবল ক্যারিয়ারে এত এত অর্জন, সন্তানভর্তি সুন্দর সংসার—তবু যেন আক্ষেপ রয়ে গেছে মেসির। গত ৮ বছরে কি ঠিকমতো ঘুমোতে পেরেছেন তিনি? হয়তো দুঃস্বপ্ন হয়ে বারবার ফিরে এসেছে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল। জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল হজম না করলে অধরা স্বপ্নটা কবেই তো পূরণ হয়ে যেত তাঁর। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের সামনে।

প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারকে পূর্ণতা দিতে ওই একটি শিরোপার দিকেই তাকিয়ে মেসি। অথচ কিলিয়ান এমবাপ্পে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই জিতে নিয়েছেন সোনালি ট্রফিটা। একেই হয়তো বলে ভাগ্যের পরিহাস।

ফুটবল বিশ্বকাপ সম্পর্কিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফুটবল বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় মেসির হাতে নেই বিশ্বকাপ আর এমবাপ্পে টানা দুটি বিশ্বকাপ জিতলে গড়ে ফেলবেন রেকর্ড। আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২-এর ফাইনালে হয়তো সেই ইতিহাস হয়ে যেতে পারে এমবাপ্পের; কিংবা আক্ষেপের সঙ্গে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে পারে মেসির। শুধু আর্জেন্টাইনরা নন, নিখাদ ফুটবল রোমান্টিকরা শিরোপা দেখতে চান ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা ‘এলএম টেনে’র হাতে।

ডিয়েগো ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে ১৯৮৬ সালে শেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৬ বছর। চাতকের তবু মেটেনি তৃষ্ণা। এবার যদি স্বদেশিদের সেই তৃষ্ণা মেটাতে পারেন মেসি। তাঁর বাঁ পায়ের দিকেই অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আর্জেন্টাইনরা।

২০১৮ বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয়েছিল আর্জেন্টাইনদের। অনেক কষ্টেসৃষ্টে নকআউট নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু শেষ ষোলোয় পেরে ওঠেনি এমবাপ্পের গতির কাছে। ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় তারা। ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরে রাগে-অভিমানে জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলেন মেসি। ভাগ্যিস ফিরেছিলেন! না হলে কি আজ এই ফাইনাল খেলা হতো?

২০১৮ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর আর্জেন্টিনা দলে আসে বড় পরিবর্তন। কোচের দায়িত্ব ওঠে লিওনেল স্কালোনির কাঁধে। আলবিসেলেস্তেরাও ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। ২৮ বছরের অপেক্ষার ইতি টেনে গত বছর দেশকে কোপা আমেরিকা এনে দেন স্কালোনি-মেসি জুটি।

আর্জেন্টিনা কাতারে এসেছিল ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। তবে শুরুতে সৌদি আরবের বিপক্ষে হোঁচট খেয়ে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল তাদের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালের মঞ্চে আর্জেন্টিনা।

কোচ দিদিয়ের দেশমের হাত ধরে আমূল পাল্টে যাওয়া ফ্রান্স এখন ফুটবল বিশ্বেরই বড় শক্তি। এই শতাব্দীতে সবচেয়ে সফল দল তারা।একমাত্র দল হিসেবে এই শতকে খেলছে তিনটি ফাইনাল। গত শতাব্দীর শেষ ফাইনালে দেশমের নেতৃত্বে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পেয়েছিল ফরাসিরা। আর চার বছর আগে দেশমের অধীনেই রাশিয়ায় একচ্ছত্র দাপট দেখিয়ে জিতেছিল নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা। চোটে পড়ে করিম বেনজেমা, পল পগবা, এনগোলা কান্তের মতো তারকাদের না পেলেও কাতারে বড় সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে ফ্রান্সের সামনে টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ।

ফ্রান্স শিল্পের দেশ, লড়াকু জাতি। এমবাপ্পেরাও পেয়েছেন তেমন এক অভিভাবক। দেশম ফুটবলে ফরাসি বিপ্লব করেই যাচ্ছেন। ডাগআউটে এবার তাঁকে লড়তে হবে অপেক্ষাকৃত তরুণ স্কালোনির সঙ্গে—যিনি ডাগআউটে ঠান্ডা মাথার এক ‘চাণক্য’। তাঁর ভাবনায় এখন শুধু ঘুরছে, ‘আর একটা সিঁড়ি...।’

ফাইনালের আগে অবশ্য চিন্তা আছে ফরাসি শিবিরে। ‘ক্যামেল ফ্লু’তে আক্রান্ত দেশমের বেশ কয়েকজন ভরসা। এতেই ফিট হয়ে ওঠা বেনজেমাকে ফাইনালে দেখা যাবে কি না, এমন একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বেনজেমাকে নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উত্তরটা সরাসরি দেননি দেশম। ফ্রেঞ্চ কোচ বলেছেন, ‘আমার মনোযোগ ২৪ সদস্যের স্কোয়াডের দিকে। যারা আগামীকাল (আজ) খেলবে।’

স্কালোনি অবশ্য সবাইকেই পাচ্ছেন। চোটের সমস্যা থাকলেও মাঠে দেখা যাবে আর্জেন্টিনার দুই অভিজ্ঞ ভরসা মেসি ও আনহেল দি মারিয়াকে। এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরছেন মার্কোস আকুনিয়াও।

সব মিলিয়ে দুই দলই তৈরি। এখন আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান নাকি আবারও ফরাসি বিপ্লব—সেটি জানতে আজ কাতারের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম লুসাইলের দিকে তাকিয়ে গোটা পৃথিবী।

বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত