Ajker Patrika

পানির অভাবে মাঠেই নষ্ট পাট

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ১৪: ৪৮
পানির অভাবে মাঠেই নষ্ট পাট

রাজশাহীর চারঘাটে এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো। কিন্তু পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় বেশির ভাগ পাটগাছ শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের জমিতেই। অনেকে কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পানি এনে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে পাটচাষিদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে পাটের উৎপাদন খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাটচাষিদের এমন দুর্দশা চোখে পড়েছে। দেখা গেছে, অনাবৃষ্টিতে জমির কাছাকাছি জলাশয়গুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড খরতাপে জমিতে থাকা পাটগাছ পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, এসব পুড়ে যাওয়া গাছ থেকে কোনো আঁশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর যাঁরা পাট জাগ দেওয়ার জন্য জমি থেকে দূরে ভাগ্যক্রমে কোনো জলাশয় পেয়ে গেছেন, তাঁদের পরিবহন খরচের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আর যাঁরা কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পানি এনে পাট জাগ দিচ্ছেন, তাঁদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই অবস্থায় ফলন ভালো হলেও তা হাসি ফোটাতে পারছে না এখানকার কৃষকদের মুখে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলায় গত বছর ২ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর বেশি। কিন্তু সময়মতো জাগ দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা। এমনটা হলে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের বলেন, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। কিন্তু আশপাশের কোথাও জাগ দেওয়ার মতো পানি না থাকায় দুই বিঘা জমির পাট কেটে তা আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের একটি জলাশয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে তাঁর পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি খরচও।

আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় দুই বিঘা জমির পাট এখনো কাটতে পারিনি। জমিতেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে আর আঁশ পাওয়া যাবে না।’

একই অবস্থা এই উপজেলার বালুদিয়াড় গ্রামের কৃষক বাছের মণ্ডলের। পানির অভাবে তাঁর দুই বিঘা জমিতে লাগানো পাটগাছের পুরোটাই এর মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাকি দেড় বিঘা জমির পাট কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচের পানি দিয়ে জাগ দিয়েছেন।

পাটের পাইকারি ব্যবসায়ী উপজেলা সদরের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ ভালো মানের পাট ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের এই দর গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর একই সময়ে এই পাট ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছিল। পানি না থাকার ফলে যেখানে-সেখানে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, আঁশের রং কালো হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক চাষি পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন নাহার বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় চলতি মৌসুমে চারঘাটে সর্বাধিক পাটের আবাদ হয়েছে। কিন্তু বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না থাকায় কৃষকেরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। অনেক জমির পাট জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত