Ajker Patrika

বেলাই বিলের সৌন্দর্য টানছে দর্শনার্থীদের, বাড়ছে স্থানীয়দের জীবনমান

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
বেলাই বিলের সৌন্দর্য টানছে দর্শনার্থীদের, বাড়ছে স্থানীয়দের জীবনমান

দৃষ্টি যত দূর যায় ততটুকুতে কেবল অথই পানি। কোথাও কোথাও কচুরিপানার ফুল গোধূলির আলোর সঙ্গে মিলে মিশে একাকার। পুরো বছর জুড়ে থাকে পানকৌড়ির আনাগোনা। জীবিকার তাগিদে বের হওয়া জেলেদের নৌকা থেকে ভেসে আসে লোকগানের শ্রুতিমধুর সুর। বর্ষায় এ বিলের রূপ, যৌবন আর লাবণ্য কয়েক হাজার গুন বেড়ে উঠে। এটিই বেলাই বিলের নিত্যদিনের চিত্র।

গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত বেলাই বিল প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে এক ভিন্নরূপ ধারণ করে। বিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া তুমলিয়া মোড়-আওড়াখালি রাস্তাটিকে ঘিরে শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা নৌকায় করে  বিল দেখতে চলে আসে। ঢাকা শহরের সন্নিকটে হওয়ায় শহুরের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে একটু বিনোদনের আশায় পুরো পরিবার নিয়ে অনেকেই চলে আসেন এ বিলে। সারা দিন ঘোরাঘুরির পাশাপাশি থাকে বিল থেকে জেলেদের ধরে আনা তাজা সুস্বাদু মাছে দুপুরের ভোজ।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা নৌকায় করে বিল দেখতে চলে আসেনশুধু তাই নয়, কালীগঞ্জের সঙ্গে পুবাইলের সীমান্তরেখা টেনে দিয়েছে বেলাই বিল। বর্ষায় অথই পানি ও শুকনো মৌসুমে দিগন্ত জুড়ে থাকে ধানের খেত। এটিই চিরচেনা বিল বেলাইয়ের সৌন্দর্য। বিলটি মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় বর্ষা মৌসুম জুড়ে জেলেদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী এই মাছ আহরণের মাধ্যমে তাঁদের নিজেদের সংসার চালায়। দেশীয় মাছের কদর থাকায় রাজধানী থেকে প্রতিদিন সকালে বহু মানুষ ছুটে আসেন স্থানীয় বাজার এবং বেলাই পাড়ে। জেলেদের তুলে আনা মাছগুলো সতেজ ও সুস্বাদু হওয়ায় উচ্চমূল্যে তা বিক্রিও হয়। 

অপরদিকে, বিলের স্বচ্ছ পানিতে রং ছড়াতে ফুটে থাকে জাতীয় ফুল শাপলা। পুরো বিলের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে শাপলা ফুলে পরিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ এই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিল থেকে চলে শাপলা সংগ্রহের কাজ। তারপর তা রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে চলে যায় বিক্রির উদ্দেশ্যে। এভাবেই এ অঞ্চলের মানুষ উপকারভোগী হয়ে বেঁচে আছে বিল বেলাইয়ের বুকে। 

শীত মৌসুমে বিল পর্যটক আসেন অতিথি পাখি দেখতে। এ সময় বেলাই বিলে পর্যটকের ঢল নামে। বর্তমানে বেলাই বিলে অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। অতিথি পাখি দেখতে ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বেলাই বিলে। গোধূলি বেলায় সূর্যের সোনালি আলোয় বিলের পানিতে মিলেমিশে অঙ্কন করে এক দারুণ চিত্র। সারি সারি অতিথি পাখিদের নীড়ে ফেরা, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ঝাঁক এসব দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন হাজারো মানুষ। 

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বেরুয়া ব্রিজের নিচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে নৌকাঢাকার উত্তরা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ায় বেলাই বিলে প্রতিদিনই বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। উত্তরা পার হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে কিছুক্ষণ পর পর বাস, লেগুনা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে কালীগঞ্জ/নলছাটার উদ্দেশ্যে। নলছাটা নেমে বিল বেলাইয়ের এক অংশ পরিদর্শন করা যায়। তবে পুরোটা দেখতে হলে আরও সামনে গিয়ে তুমলিয় মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে বেরুয়া ব্রিজে যেতে হবে অটোরিকশায় করে। ব্রিজে নেমে নৌকায় করে বেলাই বিলের ভেতরে ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। 

বেলাই বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. আজহার উদ্দিন বলেন, ‘আমি ঢাকার গুলশানে থাকি। ইউটিউবে এ বিলের সৌন্দর্য দেখেছি। সেই থেকে এখানে আসার পরিকল্পনা ছিল। আমি এখানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। মোবাইলে যতটা দেখেছি বাস্তবে তা হাজার গুণ বেশি সুন্দর। আমি সকলকে আহ্বান করব যেন সবাই বিলটি দেখতে আসেন।’ 

বিলটি মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় বর্ষা মৌসুম জুড়ে জেলেদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মিরাজ মোল্লা বলেন, ‘বেলাই বিল পাড়ে আমার বাড়ি। ছোটবেলায় বাবার কাছেই মাছ ধরা শিখেছি। সেই থেকে এটি পেশা নেশা। আগে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলেও তেমন একটা মূল্য পাওয়া যেত না। এখন বাইরে থেকে পর্যটক আসায় দেশি মাছ বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি। এতে আমার সংসার আগের থেকে বেশ ভালোভাবেই চলছে।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান বলেন, বিলটি অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তাই তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রাকৃতিক ভূমি রক্ষা এবং সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত