আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বছর পঞ্চাশের বর্ণালি ধারা যখন তাঁর স্বামীর রাসায়নিক সারের দোকানে পা রাখেন, তখন কেবল স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী তত দিনে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ভারতীয় সুন্দরবনের এক প্রান্তে ছোট্ট জনপদ নিচিন্তাপুর এখন জৈব কৃষিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণালির গ্রাম এটি।
বর্ণালিদের এলাকায় রাসায়নিক সারের দোকানগুলো একসময় কৃষকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল। আজ এসব স্থানেই তাঁরা আলোচনা করেন, কখনো একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন কোন বীজ কিনবেন, কোন সার ব্যবহার করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনে প্রধান ফসল ধান। জমিতে পুরুষদের মতোই, বরং তার চেয়ে বেশি কাজ করেন নারীরা। কিন্তু হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার কেনার সিদ্ধান্ত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে থাকেন।
উত্তীর্ণ ধরা বর্ণালির মতোই আরেক নারী। ২০০৫ সালে যখন দোকানটির দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই সমস্যাগুলো জানতেন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ধরা বলেন, ‘আমি সুন্দরবনের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি।’
তবে ধরা যা জানতেন না, তা হলো, দোকানে ১২ বছর কাটানোর পর তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেবে। তিনি বলেন, পুরুষেরা এসে খুব হতাশা নিয়ে অভিযোগ করতেন। নিচিন্তাপুর পশ্চিমবঙ্গের কুলপি প্রশাসনিক ব্লকে কৃষকেরা অভিযোগ করতেন, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পরের মৌসুমে আরও বেশি সার কিনতে হবে। সুন্দরবনে এটি কৃষকের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
এই অঞ্চলে মে হলো এক আতঙ্কের মাস। ২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ২০২৪ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে মাটিকেও লবণাক্ত করে তুলছে। এর ফলে কৃষিজমি বছরের পর বছর চাষের অনুপযোগী থাকছে।
২০০৯ সালের মে মাসে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কিছু জায়গায় চার থেকে পাঁচ বছর কৃষিকাজ বন্ধ ছিল। ধরা বলেন, ‘নিচিন্তাপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পাঁচ বছর পরেও কারও কারও জমি এখনো লবণাক্ত।’
কিন্তু লবণাক্ত মাটিতে যা বাড়তে বাধা পায়, তা হলো আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মতভাবে উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের জাত, যার জন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যা টিকে থাকে, তা হলো সুন্দরবনের দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী ধান, ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে এই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
তবু কৃষকেরা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সার কিনতে থাকেন। ধরা বলেন, কৃষকদের হতাশা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।
২০১৭ সালে ধরা নিচিন্তাপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে জৈব কৃষির ওপর এক বছরের কোর্সে ভর্তি হন। আজ তিনি তাঁর কোম্পানি, অ্যাগ্রি ফার্মার্স প্রোডিউসার কো-লিমিটেডের চেয়ারপারসন। কোম্পানিটি জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং নিচিন্তাপুর ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত। ধরা বলেন, ‘২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। কারণ, সুন্দরবনে প্রায় সব নারীই কৃষক।’ ২০২৩ সালে এই কোম্পানি গঠন করেন তিনি।
প্রশিক্ষণের পর এলাকার অশ্বত্থাতলা গ্রামের বাসিন্দা ধরা নিচিন্তাপুর ও নিকটবর্তী গ্রামগুলোর নারীদের একটি সমিতির কাছে যান। সমিতিটি তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রথমে স্বনির্ভর সমিতি গঠনের নজর ছিল। তবে ২০১৬ সালে বড় পরিসরে অশ্বত্থাতলা জনকল্যাণ মহিলা সমিতি গঠিত হয়। ধরা বলেন, জৈব কৃষিতে নারীরা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন।
২০১৮ সাল থেকে ধরা এলাকার নারী কৃষকদের নিমপীঠ ইনস্টিটিউটে জৈব কৃষি কোর্সে যোগদানের জন্য সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন মহিলা কৃষকের ১৫ থেকে ২০টি দল ইনস্টিটিউটে গিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে।
প্রশিক্ষণ নারী কৃষকদের জীবন বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। কেউ কেউ ভূমিহীন। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জৈব কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নেও বেশ ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ।
ধরার কোম্পানি কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করে। ধরা বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ২ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৫৮০ জন শেয়ারহোল্ডার এবং বাকিদের আমাদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বাকি কৃষকদের কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য জৈব উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়।’
এই উদ্যোগের জন্য চলতি বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ধরা।
ধরাকে অনুসরণ করে সুন্দরবনের অরুণনগর গ্রামে আরও অনেক নারী জৈব কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্পর্শ করেন না। তাঁরা ধান ও সবজি চাষে ব্যবহার করেন গোবর সার এবং নিমভিত্তিক কীটনাশক। এ ছাড়া কম্পোস্ট ও ভার্মিকম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছেন তাঁরা।
এর পাশাপাশি সুন্দরবনের নারীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন—তাঁরা দেশীয় জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কারণ, তখন লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ কৃষকেরা ব্যাপক হারে অন্যত্র চলে যান। মনে করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে বিশেষ করে পুরুষ ও ছেলেদের এটিই বৃহত্তম অভিবাসন। ফলে পরিবারে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কৃষিকাজের দায়িত্ব নেন এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে দেশীয় ধানের জলবায়ু-সহিষ্ণু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে এর চাষ শুরু হয়। তবে আধুনিক জাতের প্রবর্তনের পর কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ দেশীয় জাত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।
সাবেক কৃষি কর্মকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘একসময় পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের বেশি দেশীয় ধানের জাত ছিল, কিন্তু এখন আমরা ১৫০টির মতো জাত খুঁজে পাই, যা চাষ করা হচ্ছে।’ তিনি তাঁর কর্মজীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি দেশীয় ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।
অনুপম বলেন, সবুজ বিপ্লব ঐতিহ্যবাহী ফসলের পরিবর্তে রাসায়নিক সার-সহিষ্ণু আধুনিক ধান ও গমকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষির এই ধারণা কেবল উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রকল্প একফসলি চাষকেও উৎসাহিত করেছিল, মাটি ও ফসলের জন্য খারাপ এবং দেশীয় ফসলের পুষ্টি ও স্বল্প খরচের সুবিধাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কালাভাত একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ধানের জাত।
অনুপম বলেন, রাসায়নিক সার, বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফসল কীটপতঙ্গের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে সুন্দরবনে এই প্রভাব বোঝা যেতে শুরু করে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় প্রাণিবিদ্যা সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অমলেশ মিশ্রও সুন্দরবনের দেশীয় ধান সংরক্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
সুন্দরবনের সাগর ব্লকের বাসিন্দা মিশ্র সাগরে অমলগ্রাম পিপা নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর প্রাঙ্গণে তিনি দেশীয় ধানের জাতের একটি বীজ ভান্ডার তৈরি করছেন, যার জন্য তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি জাতের ধান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ১২০টির বেশি সুন্দরবনের।
মিশ্র বলেন, দাদসাল, দুধের সর, ট্যাংরাসাল, খেজুরছড়ি ও হ্যাংরা সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু দেশীয় জাত। অন্যান্য দেশীয় ধান অন্যান্য ধরনের সহিষ্ণুতা দেখায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ধানের খেতে পানির স্তর দুই ফুটের বেশি উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কয়েকটি জাত তখনো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। মিশ্র জানান, এর মধ্যে ছিল বিন্নি, ডোকরাপাটনাই, কালাভাত, মালাবতী, পাটনাই ও তালমুগুর।
যে জাতগুলো উচ্চগতির বাতাস সহ্য করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—ট্যাংরাসাল, হোগলা, সাদামোটা, পাটনাই ও ডোকরা।
সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেশীয় ধানের জাত রয়েছে। এর মধ্যে গুলিগতি নামে দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী জাত, ২৫-৩০ দিন এক ফুট বা তার বেশি স্থির পানি সহ্য করতে পারে। জাতটি চিরতরে হারিয়ে গেছে।
কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের (স্বায়ত্তশাসিত) জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা স্নাতকোত্তর ও গবেষণা বিভাগ অমলগ্রাম পিপার সহযোগিতায় সুন্দরবনের জলবায়ু-সহিষ্ণু দেশীয় ধানের জাত চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়ক গাঙ্গুলি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি জাত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুটমুড়ি, ট্যাংরাসাল, তালমুগুর, হ্যাংরা, হোগলা, কালাভাত, নোনা বোখরা, আমন বাঁশকথা, আমন দেরাদুন গন্ধেশ্বরী, তালাদি নোনা ও সাটিয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ফসলের জাতকে দেশীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি এটি ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তু অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে জন্মে থাকে। এর মানে হলো, এটি সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনুপম পালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু জাতের মধ্যে রয়েছে—নোনা বোখরা, তালমুগুর বা কেরালার আল্টাপাতি।
মাঠপর্যায়ে এই জ্ঞান নারীরাই লালন করেন। তাঁরা বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করেন।
রূপান্তর ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে সুন্দরবনের শিশু ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকে সুন্দরবনের নারী কৃষকদের দেশীয় ধান চাষে সাহায্য করছে। তারা ব্যাপকভাবে দুধের সর ধানের বীজ বিতরণ করে। এই বীজ আবার নারীদের থেকেই সংগ্রহ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর সুন্দরবনে ত্রাণকাজ কলকাতাভিত্তিক সংস্থাটির জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্মিতা সেন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, ত্রাণের লাইনে খুব কম পুরুষ দাঁড়িয়েছেন। পুরুষেরা সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করতেন।’
স্মিতা বলেন, ‘আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করি, কিসে তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। নারীরা সাধারণ ত্রাণসামগ্রী, বেশি খাবার বা পোশাক চাননি। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমির লবণাক্ততা কমাতে চুন (চুনের গুঁড়ো) ও সরিষার খৈল চেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই জমিতে কাজ করতেন। যদিও তাঁরা নিজেদের কৃষক বলতে দ্বিধা করতেন!’
রূপান্তর নারীদের দিকেই মনোযোগ নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝেমধ্যে পুরুষদের ঔদাসীন্য তাদের কাজে বরং সাহায্য করে। স্মিতা বলেন, একটি গ্রামে সংস্থার একটি গোষ্ঠীর সদস্য জৈব কৃষি চেষ্টা করার কথা বলার সময় হাসেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মাটি এতটাই লবণাক্ত ছিল যে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছিল আর চাষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে দেশীয় বীজে ভালোভাবে সবজি ফললে এবং ২০২২ সালে দুধের সর ধান সফল হলে পরিবারটি জৈব কৃষি শুরু করে।
বর্তমানে রূপান্তরের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার নারী কৃষক। তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন ফসল হিসেবে দুধের সর চাষ করেন।
এই নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ৬১ বছর বয়সী মীরা খাটুয়া। এপ্রিলের এক গরম দিনে বেলা ১১টায় তাঁর দেড় বিঘা জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি এনজিও লোকদের তাঁর মাটির কুঁড়েঘরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন জাতের বীজ দেখান। তিনি ধান, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, শিম ও শাকসবজি চাষ করেন। তাঁর কুঁড়েঘর ও দরজার ওপর গৃহসজ্জার মতো পেঁয়াজ ঝুলছিল। নিজেই সেগুলো ফলিয়েছেন। আর এভাবেই পেঁয়াজগুলো দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে বলে জানান। ৫০ বছর বয়সী ফিরোজা বিবির বাড়িতেও একইভাবে কাণ্ডসহ টমেটো ঝুলতে দেখা যায়।
এভাবেই সুন্দরবনের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের চমৎকার অভিযোজন কৌশল উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
দ্য অয়্যারের সৌজন্যে

বছর পঞ্চাশের বর্ণালি ধারা যখন তাঁর স্বামীর রাসায়নিক সারের দোকানে পা রাখেন, তখন কেবল স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী তত দিনে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ভারতীয় সুন্দরবনের এক প্রান্তে ছোট্ট জনপদ নিচিন্তাপুর এখন জৈব কৃষিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণালির গ্রাম এটি।
বর্ণালিদের এলাকায় রাসায়নিক সারের দোকানগুলো একসময় কৃষকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল। আজ এসব স্থানেই তাঁরা আলোচনা করেন, কখনো একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন কোন বীজ কিনবেন, কোন সার ব্যবহার করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনে প্রধান ফসল ধান। জমিতে পুরুষদের মতোই, বরং তার চেয়ে বেশি কাজ করেন নারীরা। কিন্তু হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার কেনার সিদ্ধান্ত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে থাকেন।
উত্তীর্ণ ধরা বর্ণালির মতোই আরেক নারী। ২০০৫ সালে যখন দোকানটির দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই সমস্যাগুলো জানতেন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ধরা বলেন, ‘আমি সুন্দরবনের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি।’
তবে ধরা যা জানতেন না, তা হলো, দোকানে ১২ বছর কাটানোর পর তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেবে। তিনি বলেন, পুরুষেরা এসে খুব হতাশা নিয়ে অভিযোগ করতেন। নিচিন্তাপুর পশ্চিমবঙ্গের কুলপি প্রশাসনিক ব্লকে কৃষকেরা অভিযোগ করতেন, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পরের মৌসুমে আরও বেশি সার কিনতে হবে। সুন্দরবনে এটি কৃষকের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
এই অঞ্চলে মে হলো এক আতঙ্কের মাস। ২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ২০২৪ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে মাটিকেও লবণাক্ত করে তুলছে। এর ফলে কৃষিজমি বছরের পর বছর চাষের অনুপযোগী থাকছে।
২০০৯ সালের মে মাসে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কিছু জায়গায় চার থেকে পাঁচ বছর কৃষিকাজ বন্ধ ছিল। ধরা বলেন, ‘নিচিন্তাপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পাঁচ বছর পরেও কারও কারও জমি এখনো লবণাক্ত।’
কিন্তু লবণাক্ত মাটিতে যা বাড়তে বাধা পায়, তা হলো আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মতভাবে উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের জাত, যার জন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যা টিকে থাকে, তা হলো সুন্দরবনের দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী ধান, ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে এই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
তবু কৃষকেরা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সার কিনতে থাকেন। ধরা বলেন, কৃষকদের হতাশা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।
২০১৭ সালে ধরা নিচিন্তাপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে জৈব কৃষির ওপর এক বছরের কোর্সে ভর্তি হন। আজ তিনি তাঁর কোম্পানি, অ্যাগ্রি ফার্মার্স প্রোডিউসার কো-লিমিটেডের চেয়ারপারসন। কোম্পানিটি জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং নিচিন্তাপুর ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত। ধরা বলেন, ‘২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। কারণ, সুন্দরবনে প্রায় সব নারীই কৃষক।’ ২০২৩ সালে এই কোম্পানি গঠন করেন তিনি।
প্রশিক্ষণের পর এলাকার অশ্বত্থাতলা গ্রামের বাসিন্দা ধরা নিচিন্তাপুর ও নিকটবর্তী গ্রামগুলোর নারীদের একটি সমিতির কাছে যান। সমিতিটি তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রথমে স্বনির্ভর সমিতি গঠনের নজর ছিল। তবে ২০১৬ সালে বড় পরিসরে অশ্বত্থাতলা জনকল্যাণ মহিলা সমিতি গঠিত হয়। ধরা বলেন, জৈব কৃষিতে নারীরা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন।
২০১৮ সাল থেকে ধরা এলাকার নারী কৃষকদের নিমপীঠ ইনস্টিটিউটে জৈব কৃষি কোর্সে যোগদানের জন্য সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন মহিলা কৃষকের ১৫ থেকে ২০টি দল ইনস্টিটিউটে গিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে।
প্রশিক্ষণ নারী কৃষকদের জীবন বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। কেউ কেউ ভূমিহীন। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জৈব কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নেও বেশ ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ।
ধরার কোম্পানি কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করে। ধরা বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ২ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৫৮০ জন শেয়ারহোল্ডার এবং বাকিদের আমাদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বাকি কৃষকদের কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য জৈব উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়।’
এই উদ্যোগের জন্য চলতি বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ধরা।
ধরাকে অনুসরণ করে সুন্দরবনের অরুণনগর গ্রামে আরও অনেক নারী জৈব কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্পর্শ করেন না। তাঁরা ধান ও সবজি চাষে ব্যবহার করেন গোবর সার এবং নিমভিত্তিক কীটনাশক। এ ছাড়া কম্পোস্ট ও ভার্মিকম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছেন তাঁরা।
এর পাশাপাশি সুন্দরবনের নারীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন—তাঁরা দেশীয় জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কারণ, তখন লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ কৃষকেরা ব্যাপক হারে অন্যত্র চলে যান। মনে করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে বিশেষ করে পুরুষ ও ছেলেদের এটিই বৃহত্তম অভিবাসন। ফলে পরিবারে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কৃষিকাজের দায়িত্ব নেন এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে দেশীয় ধানের জলবায়ু-সহিষ্ণু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে এর চাষ শুরু হয়। তবে আধুনিক জাতের প্রবর্তনের পর কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ দেশীয় জাত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।
সাবেক কৃষি কর্মকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘একসময় পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের বেশি দেশীয় ধানের জাত ছিল, কিন্তু এখন আমরা ১৫০টির মতো জাত খুঁজে পাই, যা চাষ করা হচ্ছে।’ তিনি তাঁর কর্মজীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি দেশীয় ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।
অনুপম বলেন, সবুজ বিপ্লব ঐতিহ্যবাহী ফসলের পরিবর্তে রাসায়নিক সার-সহিষ্ণু আধুনিক ধান ও গমকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষির এই ধারণা কেবল উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রকল্প একফসলি চাষকেও উৎসাহিত করেছিল, মাটি ও ফসলের জন্য খারাপ এবং দেশীয় ফসলের পুষ্টি ও স্বল্প খরচের সুবিধাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কালাভাত একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ধানের জাত।
অনুপম বলেন, রাসায়নিক সার, বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফসল কীটপতঙ্গের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে সুন্দরবনে এই প্রভাব বোঝা যেতে শুরু করে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় প্রাণিবিদ্যা সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অমলেশ মিশ্রও সুন্দরবনের দেশীয় ধান সংরক্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
সুন্দরবনের সাগর ব্লকের বাসিন্দা মিশ্র সাগরে অমলগ্রাম পিপা নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর প্রাঙ্গণে তিনি দেশীয় ধানের জাতের একটি বীজ ভান্ডার তৈরি করছেন, যার জন্য তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি জাতের ধান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ১২০টির বেশি সুন্দরবনের।
মিশ্র বলেন, দাদসাল, দুধের সর, ট্যাংরাসাল, খেজুরছড়ি ও হ্যাংরা সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু দেশীয় জাত। অন্যান্য দেশীয় ধান অন্যান্য ধরনের সহিষ্ণুতা দেখায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ধানের খেতে পানির স্তর দুই ফুটের বেশি উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কয়েকটি জাত তখনো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। মিশ্র জানান, এর মধ্যে ছিল বিন্নি, ডোকরাপাটনাই, কালাভাত, মালাবতী, পাটনাই ও তালমুগুর।
যে জাতগুলো উচ্চগতির বাতাস সহ্য করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—ট্যাংরাসাল, হোগলা, সাদামোটা, পাটনাই ও ডোকরা।
সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেশীয় ধানের জাত রয়েছে। এর মধ্যে গুলিগতি নামে দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী জাত, ২৫-৩০ দিন এক ফুট বা তার বেশি স্থির পানি সহ্য করতে পারে। জাতটি চিরতরে হারিয়ে গেছে।
কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের (স্বায়ত্তশাসিত) জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা স্নাতকোত্তর ও গবেষণা বিভাগ অমলগ্রাম পিপার সহযোগিতায় সুন্দরবনের জলবায়ু-সহিষ্ণু দেশীয় ধানের জাত চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়ক গাঙ্গুলি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি জাত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুটমুড়ি, ট্যাংরাসাল, তালমুগুর, হ্যাংরা, হোগলা, কালাভাত, নোনা বোখরা, আমন বাঁশকথা, আমন দেরাদুন গন্ধেশ্বরী, তালাদি নোনা ও সাটিয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ফসলের জাতকে দেশীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি এটি ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তু অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে জন্মে থাকে। এর মানে হলো, এটি সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনুপম পালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু জাতের মধ্যে রয়েছে—নোনা বোখরা, তালমুগুর বা কেরালার আল্টাপাতি।
মাঠপর্যায়ে এই জ্ঞান নারীরাই লালন করেন। তাঁরা বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করেন।
রূপান্তর ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে সুন্দরবনের শিশু ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকে সুন্দরবনের নারী কৃষকদের দেশীয় ধান চাষে সাহায্য করছে। তারা ব্যাপকভাবে দুধের সর ধানের বীজ বিতরণ করে। এই বীজ আবার নারীদের থেকেই সংগ্রহ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর সুন্দরবনে ত্রাণকাজ কলকাতাভিত্তিক সংস্থাটির জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্মিতা সেন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, ত্রাণের লাইনে খুব কম পুরুষ দাঁড়িয়েছেন। পুরুষেরা সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করতেন।’
স্মিতা বলেন, ‘আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করি, কিসে তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। নারীরা সাধারণ ত্রাণসামগ্রী, বেশি খাবার বা পোশাক চাননি। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমির লবণাক্ততা কমাতে চুন (চুনের গুঁড়ো) ও সরিষার খৈল চেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই জমিতে কাজ করতেন। যদিও তাঁরা নিজেদের কৃষক বলতে দ্বিধা করতেন!’
রূপান্তর নারীদের দিকেই মনোযোগ নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝেমধ্যে পুরুষদের ঔদাসীন্য তাদের কাজে বরং সাহায্য করে। স্মিতা বলেন, একটি গ্রামে সংস্থার একটি গোষ্ঠীর সদস্য জৈব কৃষি চেষ্টা করার কথা বলার সময় হাসেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মাটি এতটাই লবণাক্ত ছিল যে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছিল আর চাষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে দেশীয় বীজে ভালোভাবে সবজি ফললে এবং ২০২২ সালে দুধের সর ধান সফল হলে পরিবারটি জৈব কৃষি শুরু করে।
বর্তমানে রূপান্তরের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার নারী কৃষক। তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন ফসল হিসেবে দুধের সর চাষ করেন।
এই নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ৬১ বছর বয়সী মীরা খাটুয়া। এপ্রিলের এক গরম দিনে বেলা ১১টায় তাঁর দেড় বিঘা জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি এনজিও লোকদের তাঁর মাটির কুঁড়েঘরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন জাতের বীজ দেখান। তিনি ধান, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, শিম ও শাকসবজি চাষ করেন। তাঁর কুঁড়েঘর ও দরজার ওপর গৃহসজ্জার মতো পেঁয়াজ ঝুলছিল। নিজেই সেগুলো ফলিয়েছেন। আর এভাবেই পেঁয়াজগুলো দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে বলে জানান। ৫০ বছর বয়সী ফিরোজা বিবির বাড়িতেও একইভাবে কাণ্ডসহ টমেটো ঝুলতে দেখা যায়।
এভাবেই সুন্দরবনের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের চমৎকার অভিযোজন কৌশল উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
দ্য অয়্যারের সৌজন্যে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বছর পঞ্চাশের বর্ণালি ধারা যখন তাঁর স্বামীর রাসায়নিক সারের দোকানে পা রাখেন, তখন কেবল স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী তত দিনে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ভারতীয় সুন্দরবনের এক প্রান্তে ছোট্ট জনপদ নিচিন্তাপুর এখন জৈব কৃষিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণালির গ্রাম এটি।
বর্ণালিদের এলাকায় রাসায়নিক সারের দোকানগুলো একসময় কৃষকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল। আজ এসব স্থানেই তাঁরা আলোচনা করেন, কখনো একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন কোন বীজ কিনবেন, কোন সার ব্যবহার করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনে প্রধান ফসল ধান। জমিতে পুরুষদের মতোই, বরং তার চেয়ে বেশি কাজ করেন নারীরা। কিন্তু হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার কেনার সিদ্ধান্ত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে থাকেন।
উত্তীর্ণ ধরা বর্ণালির মতোই আরেক নারী। ২০০৫ সালে যখন দোকানটির দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই সমস্যাগুলো জানতেন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ধরা বলেন, ‘আমি সুন্দরবনের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি।’
তবে ধরা যা জানতেন না, তা হলো, দোকানে ১২ বছর কাটানোর পর তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেবে। তিনি বলেন, পুরুষেরা এসে খুব হতাশা নিয়ে অভিযোগ করতেন। নিচিন্তাপুর পশ্চিমবঙ্গের কুলপি প্রশাসনিক ব্লকে কৃষকেরা অভিযোগ করতেন, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পরের মৌসুমে আরও বেশি সার কিনতে হবে। সুন্দরবনে এটি কৃষকের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
এই অঞ্চলে মে হলো এক আতঙ্কের মাস। ২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ২০২৪ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে মাটিকেও লবণাক্ত করে তুলছে। এর ফলে কৃষিজমি বছরের পর বছর চাষের অনুপযোগী থাকছে।
২০০৯ সালের মে মাসে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কিছু জায়গায় চার থেকে পাঁচ বছর কৃষিকাজ বন্ধ ছিল। ধরা বলেন, ‘নিচিন্তাপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পাঁচ বছর পরেও কারও কারও জমি এখনো লবণাক্ত।’
কিন্তু লবণাক্ত মাটিতে যা বাড়তে বাধা পায়, তা হলো আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মতভাবে উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের জাত, যার জন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যা টিকে থাকে, তা হলো সুন্দরবনের দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী ধান, ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে এই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
তবু কৃষকেরা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সার কিনতে থাকেন। ধরা বলেন, কৃষকদের হতাশা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।
২০১৭ সালে ধরা নিচিন্তাপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে জৈব কৃষির ওপর এক বছরের কোর্সে ভর্তি হন। আজ তিনি তাঁর কোম্পানি, অ্যাগ্রি ফার্মার্স প্রোডিউসার কো-লিমিটেডের চেয়ারপারসন। কোম্পানিটি জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং নিচিন্তাপুর ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত। ধরা বলেন, ‘২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। কারণ, সুন্দরবনে প্রায় সব নারীই কৃষক।’ ২০২৩ সালে এই কোম্পানি গঠন করেন তিনি।
প্রশিক্ষণের পর এলাকার অশ্বত্থাতলা গ্রামের বাসিন্দা ধরা নিচিন্তাপুর ও নিকটবর্তী গ্রামগুলোর নারীদের একটি সমিতির কাছে যান। সমিতিটি তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রথমে স্বনির্ভর সমিতি গঠনের নজর ছিল। তবে ২০১৬ সালে বড় পরিসরে অশ্বত্থাতলা জনকল্যাণ মহিলা সমিতি গঠিত হয়। ধরা বলেন, জৈব কৃষিতে নারীরা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন।
২০১৮ সাল থেকে ধরা এলাকার নারী কৃষকদের নিমপীঠ ইনস্টিটিউটে জৈব কৃষি কোর্সে যোগদানের জন্য সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন মহিলা কৃষকের ১৫ থেকে ২০টি দল ইনস্টিটিউটে গিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে।
প্রশিক্ষণ নারী কৃষকদের জীবন বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। কেউ কেউ ভূমিহীন। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জৈব কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নেও বেশ ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ।
ধরার কোম্পানি কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করে। ধরা বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ২ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৫৮০ জন শেয়ারহোল্ডার এবং বাকিদের আমাদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বাকি কৃষকদের কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য জৈব উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়।’
এই উদ্যোগের জন্য চলতি বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ধরা।
ধরাকে অনুসরণ করে সুন্দরবনের অরুণনগর গ্রামে আরও অনেক নারী জৈব কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্পর্শ করেন না। তাঁরা ধান ও সবজি চাষে ব্যবহার করেন গোবর সার এবং নিমভিত্তিক কীটনাশক। এ ছাড়া কম্পোস্ট ও ভার্মিকম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছেন তাঁরা।
এর পাশাপাশি সুন্দরবনের নারীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন—তাঁরা দেশীয় জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কারণ, তখন লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ কৃষকেরা ব্যাপক হারে অন্যত্র চলে যান। মনে করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে বিশেষ করে পুরুষ ও ছেলেদের এটিই বৃহত্তম অভিবাসন। ফলে পরিবারে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কৃষিকাজের দায়িত্ব নেন এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে দেশীয় ধানের জলবায়ু-সহিষ্ণু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে এর চাষ শুরু হয়। তবে আধুনিক জাতের প্রবর্তনের পর কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ দেশীয় জাত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।
সাবেক কৃষি কর্মকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘একসময় পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের বেশি দেশীয় ধানের জাত ছিল, কিন্তু এখন আমরা ১৫০টির মতো জাত খুঁজে পাই, যা চাষ করা হচ্ছে।’ তিনি তাঁর কর্মজীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি দেশীয় ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।
অনুপম বলেন, সবুজ বিপ্লব ঐতিহ্যবাহী ফসলের পরিবর্তে রাসায়নিক সার-সহিষ্ণু আধুনিক ধান ও গমকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষির এই ধারণা কেবল উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রকল্প একফসলি চাষকেও উৎসাহিত করেছিল, মাটি ও ফসলের জন্য খারাপ এবং দেশীয় ফসলের পুষ্টি ও স্বল্প খরচের সুবিধাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কালাভাত একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ধানের জাত।
অনুপম বলেন, রাসায়নিক সার, বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফসল কীটপতঙ্গের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে সুন্দরবনে এই প্রভাব বোঝা যেতে শুরু করে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় প্রাণিবিদ্যা সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অমলেশ মিশ্রও সুন্দরবনের দেশীয় ধান সংরক্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
সুন্দরবনের সাগর ব্লকের বাসিন্দা মিশ্র সাগরে অমলগ্রাম পিপা নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর প্রাঙ্গণে তিনি দেশীয় ধানের জাতের একটি বীজ ভান্ডার তৈরি করছেন, যার জন্য তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি জাতের ধান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ১২০টির বেশি সুন্দরবনের।
মিশ্র বলেন, দাদসাল, দুধের সর, ট্যাংরাসাল, খেজুরছড়ি ও হ্যাংরা সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু দেশীয় জাত। অন্যান্য দেশীয় ধান অন্যান্য ধরনের সহিষ্ণুতা দেখায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ধানের খেতে পানির স্তর দুই ফুটের বেশি উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কয়েকটি জাত তখনো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। মিশ্র জানান, এর মধ্যে ছিল বিন্নি, ডোকরাপাটনাই, কালাভাত, মালাবতী, পাটনাই ও তালমুগুর।
যে জাতগুলো উচ্চগতির বাতাস সহ্য করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—ট্যাংরাসাল, হোগলা, সাদামোটা, পাটনাই ও ডোকরা।
সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেশীয় ধানের জাত রয়েছে। এর মধ্যে গুলিগতি নামে দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী জাত, ২৫-৩০ দিন এক ফুট বা তার বেশি স্থির পানি সহ্য করতে পারে। জাতটি চিরতরে হারিয়ে গেছে।
কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের (স্বায়ত্তশাসিত) জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা স্নাতকোত্তর ও গবেষণা বিভাগ অমলগ্রাম পিপার সহযোগিতায় সুন্দরবনের জলবায়ু-সহিষ্ণু দেশীয় ধানের জাত চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়ক গাঙ্গুলি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি জাত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুটমুড়ি, ট্যাংরাসাল, তালমুগুর, হ্যাংরা, হোগলা, কালাভাত, নোনা বোখরা, আমন বাঁশকথা, আমন দেরাদুন গন্ধেশ্বরী, তালাদি নোনা ও সাটিয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ফসলের জাতকে দেশীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি এটি ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তু অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে জন্মে থাকে। এর মানে হলো, এটি সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনুপম পালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু জাতের মধ্যে রয়েছে—নোনা বোখরা, তালমুগুর বা কেরালার আল্টাপাতি।
মাঠপর্যায়ে এই জ্ঞান নারীরাই লালন করেন। তাঁরা বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করেন।
রূপান্তর ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে সুন্দরবনের শিশু ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকে সুন্দরবনের নারী কৃষকদের দেশীয় ধান চাষে সাহায্য করছে। তারা ব্যাপকভাবে দুধের সর ধানের বীজ বিতরণ করে। এই বীজ আবার নারীদের থেকেই সংগ্রহ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর সুন্দরবনে ত্রাণকাজ কলকাতাভিত্তিক সংস্থাটির জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্মিতা সেন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, ত্রাণের লাইনে খুব কম পুরুষ দাঁড়িয়েছেন। পুরুষেরা সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করতেন।’
স্মিতা বলেন, ‘আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করি, কিসে তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। নারীরা সাধারণ ত্রাণসামগ্রী, বেশি খাবার বা পোশাক চাননি। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমির লবণাক্ততা কমাতে চুন (চুনের গুঁড়ো) ও সরিষার খৈল চেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই জমিতে কাজ করতেন। যদিও তাঁরা নিজেদের কৃষক বলতে দ্বিধা করতেন!’
রূপান্তর নারীদের দিকেই মনোযোগ নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝেমধ্যে পুরুষদের ঔদাসীন্য তাদের কাজে বরং সাহায্য করে। স্মিতা বলেন, একটি গ্রামে সংস্থার একটি গোষ্ঠীর সদস্য জৈব কৃষি চেষ্টা করার কথা বলার সময় হাসেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মাটি এতটাই লবণাক্ত ছিল যে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছিল আর চাষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে দেশীয় বীজে ভালোভাবে সবজি ফললে এবং ২০২২ সালে দুধের সর ধান সফল হলে পরিবারটি জৈব কৃষি শুরু করে।
বর্তমানে রূপান্তরের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার নারী কৃষক। তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন ফসল হিসেবে দুধের সর চাষ করেন।
এই নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ৬১ বছর বয়সী মীরা খাটুয়া। এপ্রিলের এক গরম দিনে বেলা ১১টায় তাঁর দেড় বিঘা জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি এনজিও লোকদের তাঁর মাটির কুঁড়েঘরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন জাতের বীজ দেখান। তিনি ধান, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, শিম ও শাকসবজি চাষ করেন। তাঁর কুঁড়েঘর ও দরজার ওপর গৃহসজ্জার মতো পেঁয়াজ ঝুলছিল। নিজেই সেগুলো ফলিয়েছেন। আর এভাবেই পেঁয়াজগুলো দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে বলে জানান। ৫০ বছর বয়সী ফিরোজা বিবির বাড়িতেও একইভাবে কাণ্ডসহ টমেটো ঝুলতে দেখা যায়।
এভাবেই সুন্দরবনের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের চমৎকার অভিযোজন কৌশল উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
দ্য অয়্যারের সৌজন্যে

বছর পঞ্চাশের বর্ণালি ধারা যখন তাঁর স্বামীর রাসায়নিক সারের দোকানে পা রাখেন, তখন কেবল স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী তত দিনে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ভারতীয় সুন্দরবনের এক প্রান্তে ছোট্ট জনপদ নিচিন্তাপুর এখন জৈব কৃষিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণালির গ্রাম এটি।
বর্ণালিদের এলাকায় রাসায়নিক সারের দোকানগুলো একসময় কৃষকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল। আজ এসব স্থানেই তাঁরা আলোচনা করেন, কখনো একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন কোন বীজ কিনবেন, কোন সার ব্যবহার করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনে প্রধান ফসল ধান। জমিতে পুরুষদের মতোই, বরং তার চেয়ে বেশি কাজ করেন নারীরা। কিন্তু হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার কেনার সিদ্ধান্ত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে থাকেন।
উত্তীর্ণ ধরা বর্ণালির মতোই আরেক নারী। ২০০৫ সালে যখন দোকানটির দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই সমস্যাগুলো জানতেন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ধরা বলেন, ‘আমি সুন্দরবনের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি।’
তবে ধরা যা জানতেন না, তা হলো, দোকানে ১২ বছর কাটানোর পর তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেবে। তিনি বলেন, পুরুষেরা এসে খুব হতাশা নিয়ে অভিযোগ করতেন। নিচিন্তাপুর পশ্চিমবঙ্গের কুলপি প্রশাসনিক ব্লকে কৃষকেরা অভিযোগ করতেন, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পরের মৌসুমে আরও বেশি সার কিনতে হবে। সুন্দরবনে এটি কৃষকের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
এই অঞ্চলে মে হলো এক আতঙ্কের মাস। ২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ২০২৪ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে মাটিকেও লবণাক্ত করে তুলছে। এর ফলে কৃষিজমি বছরের পর বছর চাষের অনুপযোগী থাকছে।
২০০৯ সালের মে মাসে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কিছু জায়গায় চার থেকে পাঁচ বছর কৃষিকাজ বন্ধ ছিল। ধরা বলেন, ‘নিচিন্তাপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পাঁচ বছর পরেও কারও কারও জমি এখনো লবণাক্ত।’
কিন্তু লবণাক্ত মাটিতে যা বাড়তে বাধা পায়, তা হলো আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মতভাবে উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের জাত, যার জন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যা টিকে থাকে, তা হলো সুন্দরবনের দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী ধান, ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে এই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
তবু কৃষকেরা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সার কিনতে থাকেন। ধরা বলেন, কৃষকদের হতাশা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।
২০১৭ সালে ধরা নিচিন্তাপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে জৈব কৃষির ওপর এক বছরের কোর্সে ভর্তি হন। আজ তিনি তাঁর কোম্পানি, অ্যাগ্রি ফার্মার্স প্রোডিউসার কো-লিমিটেডের চেয়ারপারসন। কোম্পানিটি জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং নিচিন্তাপুর ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত। ধরা বলেন, ‘২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। কারণ, সুন্দরবনে প্রায় সব নারীই কৃষক।’ ২০২৩ সালে এই কোম্পানি গঠন করেন তিনি।
প্রশিক্ষণের পর এলাকার অশ্বত্থাতলা গ্রামের বাসিন্দা ধরা নিচিন্তাপুর ও নিকটবর্তী গ্রামগুলোর নারীদের একটি সমিতির কাছে যান। সমিতিটি তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রথমে স্বনির্ভর সমিতি গঠনের নজর ছিল। তবে ২০১৬ সালে বড় পরিসরে অশ্বত্থাতলা জনকল্যাণ মহিলা সমিতি গঠিত হয়। ধরা বলেন, জৈব কৃষিতে নারীরা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন।
২০১৮ সাল থেকে ধরা এলাকার নারী কৃষকদের নিমপীঠ ইনস্টিটিউটে জৈব কৃষি কোর্সে যোগদানের জন্য সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন মহিলা কৃষকের ১৫ থেকে ২০টি দল ইনস্টিটিউটে গিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে।
প্রশিক্ষণ নারী কৃষকদের জীবন বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। কেউ কেউ ভূমিহীন। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জৈব কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নেও বেশ ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ।
ধরার কোম্পানি কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করে। ধরা বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ২ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৫৮০ জন শেয়ারহোল্ডার এবং বাকিদের আমাদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বাকি কৃষকদের কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য জৈব উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়।’
এই উদ্যোগের জন্য চলতি বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ধরা।
ধরাকে অনুসরণ করে সুন্দরবনের অরুণনগর গ্রামে আরও অনেক নারী জৈব কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্পর্শ করেন না। তাঁরা ধান ও সবজি চাষে ব্যবহার করেন গোবর সার এবং নিমভিত্তিক কীটনাশক। এ ছাড়া কম্পোস্ট ও ভার্মিকম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছেন তাঁরা।
এর পাশাপাশি সুন্দরবনের নারীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন—তাঁরা দেশীয় জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কারণ, তখন লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ কৃষকেরা ব্যাপক হারে অন্যত্র চলে যান। মনে করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে বিশেষ করে পুরুষ ও ছেলেদের এটিই বৃহত্তম অভিবাসন। ফলে পরিবারে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কৃষিকাজের দায়িত্ব নেন এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে দেশীয় ধানের জলবায়ু-সহিষ্ণু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে এর চাষ শুরু হয়। তবে আধুনিক জাতের প্রবর্তনের পর কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ দেশীয় জাত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।
সাবেক কৃষি কর্মকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘একসময় পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের বেশি দেশীয় ধানের জাত ছিল, কিন্তু এখন আমরা ১৫০টির মতো জাত খুঁজে পাই, যা চাষ করা হচ্ছে।’ তিনি তাঁর কর্মজীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি দেশীয় ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।
অনুপম বলেন, সবুজ বিপ্লব ঐতিহ্যবাহী ফসলের পরিবর্তে রাসায়নিক সার-সহিষ্ণু আধুনিক ধান ও গমকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষির এই ধারণা কেবল উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রকল্প একফসলি চাষকেও উৎসাহিত করেছিল, মাটি ও ফসলের জন্য খারাপ এবং দেশীয় ফসলের পুষ্টি ও স্বল্প খরচের সুবিধাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কালাভাত একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ধানের জাত।
অনুপম বলেন, রাসায়নিক সার, বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফসল কীটপতঙ্গের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে সুন্দরবনে এই প্রভাব বোঝা যেতে শুরু করে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় প্রাণিবিদ্যা সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অমলেশ মিশ্রও সুন্দরবনের দেশীয় ধান সংরক্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
সুন্দরবনের সাগর ব্লকের বাসিন্দা মিশ্র সাগরে অমলগ্রাম পিপা নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর প্রাঙ্গণে তিনি দেশীয় ধানের জাতের একটি বীজ ভান্ডার তৈরি করছেন, যার জন্য তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি জাতের ধান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ১২০টির বেশি সুন্দরবনের।
মিশ্র বলেন, দাদসাল, দুধের সর, ট্যাংরাসাল, খেজুরছড়ি ও হ্যাংরা সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু দেশীয় জাত। অন্যান্য দেশীয় ধান অন্যান্য ধরনের সহিষ্ণুতা দেখায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ধানের খেতে পানির স্তর দুই ফুটের বেশি উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কয়েকটি জাত তখনো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। মিশ্র জানান, এর মধ্যে ছিল বিন্নি, ডোকরাপাটনাই, কালাভাত, মালাবতী, পাটনাই ও তালমুগুর।
যে জাতগুলো উচ্চগতির বাতাস সহ্য করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—ট্যাংরাসাল, হোগলা, সাদামোটা, পাটনাই ও ডোকরা।
সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেশীয় ধানের জাত রয়েছে। এর মধ্যে গুলিগতি নামে দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী জাত, ২৫-৩০ দিন এক ফুট বা তার বেশি স্থির পানি সহ্য করতে পারে। জাতটি চিরতরে হারিয়ে গেছে।
কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের (স্বায়ত্তশাসিত) জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা স্নাতকোত্তর ও গবেষণা বিভাগ অমলগ্রাম পিপার সহযোগিতায় সুন্দরবনের জলবায়ু-সহিষ্ণু দেশীয় ধানের জাত চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়ক গাঙ্গুলি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি জাত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুটমুড়ি, ট্যাংরাসাল, তালমুগুর, হ্যাংরা, হোগলা, কালাভাত, নোনা বোখরা, আমন বাঁশকথা, আমন দেরাদুন গন্ধেশ্বরী, তালাদি নোনা ও সাটিয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ফসলের জাতকে দেশীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি এটি ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তু অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে জন্মে থাকে। এর মানে হলো, এটি সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনুপম পালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু জাতের মধ্যে রয়েছে—নোনা বোখরা, তালমুগুর বা কেরালার আল্টাপাতি।
মাঠপর্যায়ে এই জ্ঞান নারীরাই লালন করেন। তাঁরা বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করেন।
রূপান্তর ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে সুন্দরবনের শিশু ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকে সুন্দরবনের নারী কৃষকদের দেশীয় ধান চাষে সাহায্য করছে। তারা ব্যাপকভাবে দুধের সর ধানের বীজ বিতরণ করে। এই বীজ আবার নারীদের থেকেই সংগ্রহ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর সুন্দরবনে ত্রাণকাজ কলকাতাভিত্তিক সংস্থাটির জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্মিতা সেন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, ত্রাণের লাইনে খুব কম পুরুষ দাঁড়িয়েছেন। পুরুষেরা সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করতেন।’
স্মিতা বলেন, ‘আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করি, কিসে তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। নারীরা সাধারণ ত্রাণসামগ্রী, বেশি খাবার বা পোশাক চাননি। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমির লবণাক্ততা কমাতে চুন (চুনের গুঁড়ো) ও সরিষার খৈল চেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই জমিতে কাজ করতেন। যদিও তাঁরা নিজেদের কৃষক বলতে দ্বিধা করতেন!’
রূপান্তর নারীদের দিকেই মনোযোগ নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝেমধ্যে পুরুষদের ঔদাসীন্য তাদের কাজে বরং সাহায্য করে। স্মিতা বলেন, একটি গ্রামে সংস্থার একটি গোষ্ঠীর সদস্য জৈব কৃষি চেষ্টা করার কথা বলার সময় হাসেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মাটি এতটাই লবণাক্ত ছিল যে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছিল আর চাষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে দেশীয় বীজে ভালোভাবে সবজি ফললে এবং ২০২২ সালে দুধের সর ধান সফল হলে পরিবারটি জৈব কৃষি শুরু করে।
বর্তমানে রূপান্তরের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার নারী কৃষক। তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন ফসল হিসেবে দুধের সর চাষ করেন।
এই নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ৬১ বছর বয়সী মীরা খাটুয়া। এপ্রিলের এক গরম দিনে বেলা ১১টায় তাঁর দেড় বিঘা জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি এনজিও লোকদের তাঁর মাটির কুঁড়েঘরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন জাতের বীজ দেখান। তিনি ধান, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, শিম ও শাকসবজি চাষ করেন। তাঁর কুঁড়েঘর ও দরজার ওপর গৃহসজ্জার মতো পেঁয়াজ ঝুলছিল। নিজেই সেগুলো ফলিয়েছেন। আর এভাবেই পেঁয়াজগুলো দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে বলে জানান। ৫০ বছর বয়সী ফিরোজা বিবির বাড়িতেও একইভাবে কাণ্ডসহ টমেটো ঝুলতে দেখা যায়।
এভাবেই সুন্দরবনের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের চমৎকার অভিযোজন কৌশল উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
দ্য অয়্যারের সৌজন্যে

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
৩ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজকের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকতে পারে এবং আকাশ থাকবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে
রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী শহর ঢাকায় দূষণ কমছেই না। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এই স্কোর নিয়ে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ৩৮০ একিউআই স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো —
(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (২৯১, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৭৫, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা এবং পঞ্চম স্থানে পাকিস্তানের করাচি (১৬১,সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৬. কায়রো, মিসর (১৫৮)
৭. বাকু, আজারবাইজান (১৫৭)
৮. কাম্পালা, উগান্ডা (১৫২)
৯. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৪৯)
১০. কলকাতা, ভারত (১৪৩)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

রাজধানী শহর ঢাকায় দূষণ কমছেই না। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এই স্কোর নিয়ে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ৩৮০ একিউআই স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো —
(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (২৯১, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৭৫, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা এবং পঞ্চম স্থানে পাকিস্তানের করাচি (১৬১,সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৬. কায়রো, মিসর (১৫৮)
৭. বাকু, আজারবাইজান (১৫৭)
৮. কাম্পালা, উগান্ডা (১৫২)
৯. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৪৯)
১০. কলকাতা, ভারত (১৪৩)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
১৬ মে ২০২৫
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজকের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকতে পারে এবং আকাশ থাকবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে
রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আবহাওয়া শুষ্ক, বেড়েছে তাপমাত্রা। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপ। এটি গভীর নিম্নচাপ থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ২৮ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আজ রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সারা দেশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কাল সোমবার থেকে আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকবে। তবে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বৃষ্টির এই ধারা ২৯ অক্টোবরও অব্যাহত থাকতে পারে। ৩০ অক্টোবর থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও এটির বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আজ সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় যা-ই হোক না কেন, আপাতত এর গতিবিধিতে মনে হচ্ছে এটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আবহাওয়া শুষ্ক, বেড়েছে তাপমাত্রা। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপ। এটি গভীর নিম্নচাপ থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ২৮ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আজ রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সারা দেশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কাল সোমবার থেকে আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকবে। তবে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বৃষ্টির এই ধারা ২৯ অক্টোবরও অব্যাহত থাকতে পারে। ৩০ অক্টোবর থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও এটির বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আজ সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় যা-ই হোক না কেন, আপাতত এর গতিবিধিতে মনে হচ্ছে এটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
১৬ মে ২০২৫
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
৩ ঘণ্টা আগে
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজকের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকতে পারে এবং আকাশ থাকবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে
রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজকের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকতে পারে এবং আকাশ থাকবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানী এবং এর আশপাশ এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ।
আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে গতকালকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনো বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়নি, যার ফলে আবহাওয়া শুষ্ক থাকার প্রবণতা বজায় রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজকের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকতে পারে এবং আকাশ থাকবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানী এবং এর আশপাশ এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ।
আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে গতকালকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনো বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়নি, যার ফলে আবহাওয়া শুষ্ক থাকার প্রবণতা বজায় রয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
১৬ মে ২০২৫
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
৩ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’। এই স্কোর নিয়ে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, লাহোর (পাকিস্তান) ৩৬০ একিউআই স্কোর নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এরপরে রয়েছে ভারতের দিল্লি ও কলকাতা।
শীর্ষ দূষণের ১০ শহর:
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টার কাছাকাছি সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের তালিকা নিচে দেওয়া হলো (বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে) :
তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (৩৬০, বিপজ্জনক), এরপরে আছে ভারতের দুটি শহর—দিল্লি (২৭০, খুবই অস্বাস্থ্যকর) এবং কলকাতা (১৮৯, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। এরপর ১৭৮ নিয়ে চীনের রাজধানী বেইজিং রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৫. ঢাকা, বাংলাদেশ (১৬৯)
৬. তাশকেন্ত, উজবেকিস্তান (১৫৬)
৭. করাচি, পাকিস্তান ( ১৫৪)
৮. কাম্পালা, উগান্ডা (১৩৯)
৯. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত ( ১২৯)
১০. কুয়েত সিটি, কুয়েত (১১৭)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’। এই স্কোর নিয়ে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, লাহোর (পাকিস্তান) ৩৬০ একিউআই স্কোর নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এরপরে রয়েছে ভারতের দিল্লি ও কলকাতা।
শীর্ষ দূষণের ১০ শহর:
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টার কাছাকাছি সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের তালিকা নিচে দেওয়া হলো (বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে) :
তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (৩৬০, বিপজ্জনক), এরপরে আছে ভারতের দুটি শহর—দিল্লি (২৭০, খুবই অস্বাস্থ্যকর) এবং কলকাতা (১৮৯, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। এরপর ১৭৮ নিয়ে চীনের রাজধানী বেইজিং রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৫. ঢাকা, বাংলাদেশ (১৬৯)
৬. তাশকেন্ত, উজবেকিস্তান (১৫৬)
৭. করাচি, পাকিস্তান ( ১৫৪)
৮. কাম্পালা, উগান্ডা (১৩৯)
৯. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত ( ১২৯)
১০. কুয়েত সিটি, কুয়েত (১১৭)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
১৬ মে ২০২৫
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
৩ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজকের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকতে পারে এবং আকাশ থাকবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে