Ajker Patrika

জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ হলিউড নির্মাতার হাতে দিতেও রাজি নয় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ হলিউড নির্মাতার হাতে দিতেও রাজি নয় পরিবার

চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের স্বপ্নের সিনেমা ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। ১৯৭০ সালে আংশিক দৃশ্যধারণ করেছিলেন। সিনেমাটি শেষ করে যেতে পারেননি তিনি। সম্প্রতি সিনেমাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর প্রায় সাড়ে তিন দশক পর্যন্ত সিনেমাটির খোঁজ ছিল না। তবে দেড় দশক আগে গোডাউন থেকে সিনেমাটির ফুটেজ উদ্ধার করে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। এরপর সিনেমাটি নিয়ে অনেক জল্পনা চলে। মাঝে কয়েকবার ছবিটির কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হলেও, শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে সিনেমাটি সমাপ্তের ব্যাপারে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে জহির রায়হানপুত্র অনল রায় জানিয়েছেন, অন্য পরিচালককে দিয়ে সিনেমাটি সমাপ্ত করতে চায় তাঁর না পরিবার। অনল রায়হানের ভাষ্য, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ শেষ করতে হবে কেন? মার্টিন স্করসেসিও (অস্কারজয়ী হলিউড নির্মাতা) যদি জহির রায়হানের অসমাপ্ত এই ছবিটি শেষ করতে চান, আমি অনুমতি দেব না!
 
এ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন অনল রায়হান। তিনি লিখেছেন, সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটির মূল কথা—ছবিটি শেষ করা দরকার।

চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। ছবি: সংগৃহীতঅনল প্রশ্ন তুলেছেন, ছবিটি শেষ করা লাগবে কেন? এটি জহির রায়হানের সরাসরি রাজনৈতিক একটি ছবি। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের পরিষ্কার ও সোজাসাপটা শিল্প প্রকাশ হতো এটি। সুতরাং এখন যদি কেউ এই ছবি শেষ করতে চান, তিনি কি জহির রায়হানের মতাদর্শকে ধরতে পারবেন?

অনল লিখেছেন, স্টপ জেনোসাইড–এর বছরখানেক আগে তোলা হয়েছিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। ‘স্টপ জেনোসাইড’–এ তিনি একটি জনযুদ্ধের ছবি তুলেছেন। কিন্তু ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাধীন। রাজনীতি সচেতন শিল্পী হিসেবে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ তিনি তাঁর রাজনৈতিক মতকে সরাসরি উন্মোচন করতে চেয়েছিলেন, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এখন যিনি ছবিটি শেষ করবেন তার রাজনৈতিক মতাদর্শ কি জহির রায়হানীয়?

তিনি আরও লিখেছেন, জহির রায়হান আজ বেঁচে থাকলে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ কি একই চলচ্চিত্রভাষা ব্যবহার করতেন? নাকি ছবিটা বানাতেনই না! নাকি ছবিটা শেষ করা হবে সে সময়ের আলোকেই? ৫৫ বছর আগে নির্মিত একটি অসমাপ্ত রাজনৈতিক ছবি কি সে সময়ের আলোকে শেষ করা যায়? যখন বিশ্ব বদলে গেছে, ইতিহাসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে? যে পরিচালক আজকের বাংলাদেশ জানেন, আজকের আমেরিকা দেখেন তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ নিজের ভাবনা ঢোকাবেনই। এ ছবি কোনোভাবেই জহির রায়হানের ছবি তো হবেই না, উল্টো এমন একজন মেধাবী বাঙালি চলচ্চিত্রকারের অসামান্য কাজটির ঐতিহাসিক মূল্য বিনষ্ট হবে।
 
অনল রায়হানের মতে, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’, ‘কাচের দেয়াল’ বা ‘জীবন থেকে নেয়া’র মতো লিরিক্যাল ফর্মেটের গল্পবলা ছবি নয়। এর নিজস্ব আঙ্গিক আছে। এই আঙ্গিক বা চলচ্চিত্রভাষা সম্পূর্ণ একটি মস্তিষ্কেরই আয়োজন। ছবিটির যদি লিখিত চিত্রনাট্যও থাকত তবু এই অসমাপ্ত ছবিতে আমি আর কারও হাত দেওয়ার পক্ষে থাকতাম না।

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এই ছবির রাশ প্রিন্ট একবার লাইনআপ করেছিল এনজি শট ও ওকে শট দেখে। এটিরও প্রতিবাদ করেছেন অনল। তাঁর মতে, ‘লেট দেয়ার বি লাইট সম্পূর্ণ (বাতিল শটসহ) প্রদর্শন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, চলচ্চিত্রের আগামীর ছাত্র–ছাত্রীর কাছে এই রাশ প্রিন্টের মূল্য হবে অপরিসীম।’

অনল রায়হানের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ছবির প্রতি সুবিচার কেবল পরিচালক জহির রায়হানের নিজেরই করা সম্ভব। কারণ, তখনকার সময় এবং এখনকার সময়ের মধ্যে বিশাল ফারাক। পৃথিবী নানা পথ পেরিয়েছে। তা ছাড়া ছবিতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করেছেন। যা চলচ্চিত্রে কেবল তিনিই বলতে পারতেন। পোস্টটি শেষ করেছেন এভাবে, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ অন্য পরিচালকের হাতে? আমি মানব না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত