Ajker Patrika

‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী আর নেই

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১২: ৪৮
‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী আর নেই

ঢাকা: সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে চলেই গেলেন ‌মিষ্টি মেয়ে' কবরী। বাংলা সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী আজ শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে শাকের চিশতী।

করোনাভাইরাসের এই মহামারি কেড়ে নিল বাংলাদেশের আরেক তারকাকে। এই মহামারি আমাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক গুণি মানুষকে। মাত্র কয়েকদিন আগেই করোনার কাপছে লড়তে লড়তে চলে গেলেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। চলে গেলেন রবীন্দ্র সংগীতের গুণি শিল্পী মিতা হক। চলে গেলেন শামসুজ্জামান খানও। বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন শিল্পী ফরিদা পারভিন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইসিসি জয়ী দলের অধিনায়ক আকরাম খানসহ আরও অনেকে। এই তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। এবার এই তালিকায় যোগ হলেন প্রিয় অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী, যাকে কবরী নামেই সবাই চেনেন।

সাবেক সংসদ সদস্য কবরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো এ সম্পর্কিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী, নির্মাতা ও সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীর মৃত্যুতে গভীল শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের চলচ্চিত্রে কবরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশপাশি রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কবরী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনেমা জগতে সক্রিয় ছিলেন। ক্যামেরার সামনে থেকে চলে গিয়েছিলেন পেছনে, পরিচালকের আসনে। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। কিন্তু এ বয়সেও নতুন করে চ্যঅলেঞ্জ নিয়েছিলেন। নতুন একটি সিনেমার শুটিং মাত্রই শেষ করে এনেছিলেন। বাকি ছিল ডাবিং ও সম্পাদনার কাজগুলো। এতে অভীনয়ও করেছেন তিনি।

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। পরের বছর অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’ চলচ্চিত্রে। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো। শুধু সিনেমা নয় সক্রিয় ছিলেন সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক জগতেও। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় অবস্থানকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন তিনি।

নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে কবরীর জুটি ছিল অনবদ্য। অনেকের দৃষ্টিতেই বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা জুটি ধরা হয় তাঁদের। রাজ্জাক-কবরী অভিনীত ‌রংবাজ' বাংলা সিনেমার ইতিহাসেই মাইলফলক হয়ে আছে। জনপ্রিয় নায়ক ফারুক, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবালসহ তাঁর সময়ের সেরা নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন এই ‌ফুলের বালা'। হ্যাঁ, সুজন-সখী সিনেমার বিখ্যাত গান ‌সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা' গানে রুনা লায়লার প্লেব্যাকে নিজেকে তিনি এভাবেই বর্ণনা করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল এলে দেখা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ এপ্রিল রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরদিন দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।

আরো পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত