Ajker Patrika

ক্যাম্পাস আমার, গড়ার অধিকারও আমার

ক্যাম্পাস আমার, গড়ার অধিকারও আমার

উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক সংবাদ স্বাভাবিক বিষয় ছিল আমাদের দেশে। শিক্ষার্থীদের সফল আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসগুলোতে সংস্কারের আশা করছে সবাই। কেমন ক্যাম্পাস চান, সে বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিমত জেনেছেন 
মো. সৈয়দুর রহমান

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে
দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি এবং সার্বিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, সেগুলোর অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকাসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের মূল্যায়ন করে সেটি প্রকাশ করতে হবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

  • গতানুগতিক পড়াশোনার বাইরে সমসাময়িক চাকরির বাজার বিশ্লেষণ করে সিলেবাস নির্ধারণ করতে হবে এবং গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। 
  • কেউ যেন গবেষণার ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিতে না পারে, সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। 
  • দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। 
  • ক্যাম্পাসে দলীয় পরিচয়ে কোনো ছাত্ররাজনীতি থাকতে পারবে না। 
  • শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। 
  • হয়রানির শিকার বন্ধ করতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চলাচলকারী সব রিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে। 
  • হল ক্যানটিনগুলোতে খাবারের মান বাড়াতে হবে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান বন্ধ করতে হবে। 
  • পর্যাপ্ত লাইব্রেরি-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। 
  •  শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের সার্বিক অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। 

মায়সুরী ইসলাম প্রভা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মাহমুদুল হাসানশিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক করে তুলতে হবে
বুটেক্স একটি বিশেষায়িত পাবলিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো এখানেও ছিল রাজনীতিসহ অন্যান্য সমস্যা। ইতিমধ্যে ছাত্ররাজনীতি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা— 

  • বুটেক্স হোক আধুনিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। 
  • আধুনিক ল্যাব-সুবিধা তৈরি করতে হবে। 
  • পুরোনো মেশিনপত্র সংস্কার করে যুগোপযোগী করতে হবে। 
  • ক্যানটিনে খাবারের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনে তদারকি বাড়াতে হবে। 
  • প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার জন্য সংশ্লিষ্ট বড় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। 
  •  শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক করে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। 
  • শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো রাখতে হবে। 
  • সব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। 
  • পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

মাহমুদুল হাসান, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

রাফিউল ইসলাম রিফাতধর্ম, বর্ণ এবং ভিন্নমত সহনশীল মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হোক
১০ একরের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানে পড়াশোনা করছেন প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর যেসব আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেসবের অধিকাংশই পূরণে ব্যর্থ জবি। ছেলেদের হল না থাকা, খেলার মাঠের সংকট, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের নিম্নমানসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ ক্যাম্পাস। তবু শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে চলছেন। 

  • দখল হয়ে যাওয়া ক্যাম্পাসের জায়গা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। 
  • পরিবহনসংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত। 
  • ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
  • শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যেন স্থানীয় রাজনীতির নিপীড়নের শিকার না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে। 
  • নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। 
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে নির্মূল করতে হবে। 
  • ক্যাম্পাসগুলোকে ধর্ম, বর্ণ এবং ভিন্নমত সহনশীল মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র করে তুলতে হবে। 

রাফিউল ইসলাম রিফাত, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জাঈমুল হাসানক্যাম্পাসে আমার অধিকারকে প্রাধান্য দিতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ওপর নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ-জীবনের পথচলা। সে পরিবেশ সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব হবে, এটিই প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তাই পরিবর্তনের ধারায় এবার প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুশৃঙ্খল নিয়মের আওতায় এনে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। এ ক্ষেত্রে— 

  • ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।
  • হল প্রশাসনের সহায়তায় হলের সিট-বাণিজ্য বন্ধ করতে পারে এমন কমিটি গঠন করা হোক। 
  •  ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর কেউ যেন এক দিনও হলে অবস্থান করতে না পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। 
  •  কেউ র‍্যাগিংয়ের শিকার হলে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  •  নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে দলমত-নির্বিশেষে সবাই প্রার্থী হতে পারবে। 
  • ক্যানটিন এবং ডাইনিং নিয়মিত তদারক করে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে। 
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সঠিক খাতে এবং দুর্নীতিমুক্তভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তার জন্য জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। 
  • প্রক্টরিয়াল টিমকে বাহ্যিক প্রভাবমুক্ত থেকে ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে হবে। 
  • ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ কমাতে হবে। 
  • ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষকদের আরও দৃঢ় হতে হবে। 
  • ‘ক্যাম্পাস আমার, গড়ার অধিকারও আমার’ শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

জাঈমুল হাসান, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত