Ajker Patrika

আ.লীগ নেতার নেওয়া ঘুষের টাকা ‘গোপনে’ ফেরত দিলেন ইউএনও

নাইমুর রহমান, নাটোর
আপডেট : ০৬ মে ২০২৩, ১৯: ৩১
আ.লীগ নেতার নেওয়া ঘুষের টাকা ‘গোপনে’ ফেরত দিলেন ইউএনও

গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের অনুসারী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২২ সালে দরিদ্র গৃহহীনদের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা ‘গোপনে’ ভুক্তভোগীদের ফেরত দিয়েছেন ইউএনও। যদিও ওই আওয়ামী লীগ নেতার দাবি, তিনি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। অভিযোগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার তো প্রশ্নই নেই! 

ভুক্তভোগী ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গুরুদাসপুরে গৃহহীনদের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই কক্ষবিশিষ্ট আধা পাকা টিনশেড ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন নজরুল ইসলাম। উপজেলার বৃন্দাবনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের স্ত্রী জয়নব বেগমের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন নজরুল। এ ছাড়া স্থানীয় অসহায় আরও সাত নারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেন তিনি।

ভুক্তভোগী সাত নারী হলেন নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী আসমা বেগম, ছাইফুল হোসেনের স্ত্রী ইঞ্জিরা বেগম, মৃত হাসমত আলীর স্ত্রী রাবিয়া বেগম, মৃত আবেদ আলীর স্ত্রী রিজিয়া বেগম, মৃত তারা মিয়ার স্ত্রী হাবিয়া বেগম, আব্দুল হামিদের স্ত্রী সাহারা বানু ও ইয়াছিন আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন। 

জয়নব বেগম গত বছর নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। এই মামলায় গত ২ এপ্রিল আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন নজরুল। এরপর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৬ দিন কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে নজরুল বলেন, জেল থেকে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন। এরপরই গুরুদাসপুর থানার ওসির বদলি হয়ে গেছেন। জেল থেকে বেরোনোর পর নজরুলকে দলে আগের পদে বহাল করা হয়।  

এদিকে গত বুধবার সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগম গুরুদাসপুর আমলি আদালতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ এনে মামলা করেন নজরুলের বিরুদ্ধে। এরপর গত বৃহস্পতিবার নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহাম্মদ ইউএনওর কার্যালয়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন। তখন ইউএনও শ্রাবণী রায় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। 

গতকাল শুক্রবার ওই সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের টাকা ফেরত দেন ইউএনও শ্রাবণী রায়। গতকাল সরকারি ছুটির দিনে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ভুক্তভোগী নারীদের ডেকে নিয়ে এসব টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তবে সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমের টাকা দেওয়া হয়নি। টাকা ফেরত পেতে তাঁদের শর্ত দেওয়া হয়েছে নজরুলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

ইউএনও যখন তাঁর বাসভবনে ভুক্তভোগীদের ডেকে টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন তখন স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাঁর বাড়ির ফটকে উপস্থিত হন। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবরে ভুক্তভোগীদের ইউএনওর বাসভবনের প্রাচীর টপকে বের করে দেওয়া হয়। 

ঘুষের টাকা ফেরত নেওয়া নারীরা জানান, ইউএনও শ্রাবণী রায় বৃহস্পতিবার রাতে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে কল করে তাঁদের গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবনে যেতে বলেন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযোগকারী আসমা বেগম, ইঞ্জিরা বেগম, রাবিয়া বেগম, রিজিয়া বেগম, হাবিয়া বেগম, সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমকে ইউএনও তাঁর বাসভবনে ডেকে নেন। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অভিযোগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে অভিযোগকারী সাতজনের মধ্যে চারজনকে ৫০ হাজার টাকা করে এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। 

প্রাচীর টপকে পার হওয়া নারীদের মধ্যে আসমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে ইউএনওর পরামর্শে তাঁর গাড়িচালক জয়নাল হোসেনের সহায়তায় মই বেয়ে প্রাচীর টপকে বেরিয়ে যান তিনি। 

ভুক্তভোগী নারীরা জানান, বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুম আহমেদ অভিযোগের বিষয়ে শুনানি গ্রহণের পর রাতে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আসেন এবং ইউএনওর মাধ্যমে তাঁরা সবাই টাকা ফেরত পাবেন বলেও আশ্বাস দেন। তাঁর কথা ও ইউএনওর ফোন কলে আশ্বস্ত হয়ে গতকাল ইউএনওর বাসভবনে এসে কথামতো ঘুষের টাকা ফেরত পেয়েছেন তাঁরা। 

এ ব্যাপারে গতকাল বিকেল থেকে নজরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার সকালে ফোনে তাঁকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমি পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার বিরুদ্ধে আমার প্রতিপক্ষ গৃহহীনদের দিয়ে মামলা করিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে।’ জেলা থেকে বেরিয়ে ফেসবুক লাইভে দেওয়া বক্তব্যও স্বীকার করেন তিনি। 

তবে, ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার ইউএনও আমার থেকে কোনো টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী কাউকে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তবে ইউএনও অত্যন্ত ভালো মানুষ।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুরুদাসপুরের ইউএনও শ্রাবণী রায় বলেন, ‘শুক্রবার যে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা নজরুল ইসলামের থেকেই আদায় করা। ভুক্তভোগীরা আমার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন প্রতিকার চেয়ে। এ বিষয়ে আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এলে আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আমি শুধু আমার সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো নেতার প্রতি দুর্বলতা থেকে আমি কিছু করিনি।’ 

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডিসি রাজশাহীতে একটি জরুরি মিটিংয়ে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত