Ajker Patrika

বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়া ও শাজাহানপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯: ৩৭
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ধাওয়া করে প্রথমে হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করার পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সাগরের সহযোগীরা জড়িত বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ। 

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের মাথইল চাপড় গ্রামে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। 

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম শাহজালাল তালুকদার পারভেজ (৪৫)। তিনি আশেকপুর ইউনিয়নের শাবরুল তালুকদারপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মনসুর তালুকদার মন্টুর ছেলে। 

এ ছাড়া পারভেজ আশেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং বগুড়া সদরের কৈচড় বিএম টেকনিক্যাল কলেজের প্রভাষক ছিলেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে খুনের বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন। আজকের পত্রিকাকে তাঁরা বলেন, পারভেজ তাঁর মোটরসাইকেল চালিয়ে শাবরুল বাজার থেকে বগুড়া শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। শাবরুল বাজার পার হওয়ার পর মাথাইলচাপড় পূর্বপাড়া গ্রামের মাথায় সড়কের কালভার্টের ওপরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে পারভেজকে কোপ দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে পারভেজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সেখানেই তাঁকে কোপাতে থাকে সন্ত্রাসীরা। পারভেজ দৌড়ে মাথাইলচাপড় পশ্চিমপাড়া সড়ক দিয়ে সুমন নামের একজনের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকেই পারভেজকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে চলে যায়। এ সময় পারভেজের কবজির নিচ থেকে ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে সন্ত্রাসীরা। 

সুমনের স্ত্রী রেখা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ির প্রধান দরজা খোলাই ছিল। হঠাৎ বাইরে কিছু মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পাই। এ রকম সময় একজন লোক আমাদের বাড়ির বারান্দায় ঢুকে পড়ে। আমরা ভয় পেয়ে ঘরে চলে আসি। তখন আরও কয়েকজন লোক বাড়িতে ঢোকে এবং আমরা চিৎকার শুনতে পাই। মিনিটখানেক পর আমরা বাড়ি থেকে বের হয়ে রক্তাক্ত একজনকে পড়ে থাকতে দেখি। আমাদের চিৎকারে রাস্তা থেকে লোকজন ছুটে আসে। ততক্ষণে পড়ে থাকা লোকটি মারা যায়। পরে জানতে পারি নিহত লোকটা পারভেজ।’ 

খুনের ঘটনায় নিহতের আতঙ্কিত পরিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে পারভেজের বড় ভাই নুরুজ্জামান পান্নু তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনা বলে আর কী হবে? প্রশাসন, পুলিশ সব থাকার পরেও একের পর এক মানুষ হত্যা করে চলেছে সাগর বাহিনী। নিহতের কাতারে আমার ভাইও যোগ হয়েছে।’

নুরুজ্জামান পান্নু আজকের পত্রিকাকে জানান, শাবরুল বাজারে তাঁদের রড, সিমেন্টের ব্যবসা রয়েছে। এলাকার শীর্ষ ‘সন্ত্রাসী’ সাগর তাঁর কাছে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। গত ২৩ জুলাই মোটরসাইকেলে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাওয়ার সময় সাগরসহ কয়েকজন তাঁকে অপহরণ করে। পরে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে দেছমা গ্রামে নিয়ে সেখানে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। 

সাগরের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে এলাকায় জনমত তৈরির কাজ করে যাচ্ছিলেন পারভেজ। এ কারণে সাগর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে পারভেজের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন সাগর। এ কারণে তাঁরা থানায় মামলা করেননি বলে জানান। 

ঘটনাস্থলে পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভিড়নুরুজ্জামান পান্নু আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসী সাগর তাঁর ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করে নিজে দায় এড়ানোর জন্য গত ২৪ আগস্ট অন্য একটি মামলায় আদালতে হাজির হয়। আদালত সাগরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেদিন থেকেই সাগর কারাগারে অবস্থান করছে এবং সেখানে বসেই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে।’ 

এ বিষয়ে আশেকপুর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী সাগর আমাকে হত্যার জন্য ৩০ লাখ টাকা বাজেট দিয়ে তার সহযোগীদের মাঠে নামিয়েছে। তার সহযোগীরা কয়েক দিন ধরে আমাকে ফলো করছিল। সাগর নিজে মামলা থেকে রেহাই পেতে কৌশলে কারাগারে রয়েছে।’ 

সাগরের নির্দেশেই পারভেজ তালুকদারকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সাগর শাজাহানপুর ও কাহালু উপজেলা কমপক্ষে ২০টি গ্রামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১২-১৩টি মামলা রয়েছে।’

পারভেজ খুনের পেছনে পুলিশকে দায়ী করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত মাসে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় শাজাহানপুর উপজেলার ৯ জন ইউপি চেয়ারম্যান সাগরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ ছাড়া পারভেজের বড় ভাইকে অপহরণ করে ছুরিকাঘাত করার ঘটনার পরেও পুলিশ সাগরকে গ্রেপ্তার করেনি।’ 

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ অস্বীকার করে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহত পারভেজের বড় ভাইকে ছুরিকাঘাতের পর থানা-পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে মামলা করতে বলেছে। কিন্তু তারপরও তারা মামলা করেনি। এরপরও সাগরকে ধরতে ওই সময় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পারভেজ হত্যার পর জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত