Ajker Patrika

মন্ত্রীর ছেলে বলে জমির দাম কম?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৩৩
Thumbnail image

স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, এক সপ্তাহ আগে তিনি নিজের ছেলেকে জমি রেজিস্ট্রি করতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ঘুষের টাকা না দেওয়ায় কাজ হয়নি। লজ্জায় এ ঘটনা তিনি কাউকে বলেননি বলেও জানিয়েছেন। গত বুধবার সকালে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত জনসচেতনতা সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রীর সেই বক্তব্য ধরে খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল নানা তথ্য, তাতে বেশ গরমিলও আছে।

যেমন বিক্রেতার দাবি, দুই একর আয়তনের জমিটি তিনি ৫৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু ক্রেতা মন্ত্রীর ছেলের দাবি, তিনি জমি কিনেছেন ১৯ লাখ টাকায়। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ওই জমির বাজারমূল্য ৫৯ লাখ টাকার চেয়ে বেশি। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের সময় দেশের শতকরা ৭৮ ভাগ দলিলে জমির দাম কমিয়ে দেখানো হয় বলে তথ্য উঠে এসেছিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে। কথা হচ্ছে যে জমিটি নিয়ে, সে ক্ষেত্রেও এমন অনিয়ম হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার রোহিতা বাজার। বাজার ঘেঁষে চলে গেছে পিচঢালা রাস্তা। সেই রাস্তা লাগোয়া প্রতি শতাংশ জমির দাম বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। সে হিসাবে ওই এলাকায় দুই একর (২০০ শতাংশ) জমির দাম কয়েক কোটি টাকা। এমন মূল্যবান জমি কীভাবে ১৯ লাখ টাকায় বিক্রি হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আলোচিত এই জমির বিক্রেতা মিজানুর রহমান রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর কাছ থেকে জমি কিনেছেন সুপ্রিয় ভট্টাচার্য, যিনি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার মনিরামপুরের সাবরেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাসুদেবপুর মৌজার (৭৬, ৭৭, ৭৮ ও ৮৯ দাগে) ওই জমি সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের নামে দলিল করা হয়েছে। দাতার নাম মিজানুর রহমান। দলিলে জমির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে ওই দলিলের লেখক কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই এলাকায় জমির সরকারনির্ধারিত দাম সাড়ে ৯ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২ একর জমির দাম ধরা হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।

বিক্রেতা মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, ৫৯ লাখ টাকার বিনিময়ে জমিটি তিনি বিক্রি করেছেন। চাইলে তিনি জমিটি আরও ১০-২০ লাখ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন। সরকারি প্রকল্প হলে এলাকার মানুষের উপকার হবে এমন ভাবনা থেকে অল্প দামেই বিক্রি করেছেন। টাকার লেনদেন হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকে। দলিলে দাম কত দেখানো হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি মিজানের।

এদিকে মিজানের ভাগনে আলী হায়দার মুকুল বলছেন, জমিটি তাঁর মামা ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।

দাম নিয়ে এই লুকোচুরির কারণ জানতে যোগাযোগ করা হয় সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সরকারনির্ধারিত দামেই তিনি জমি কিনেছেন এবং দলিল করেছেন। মিজানুর রহমান কেন বেশি দামে জমি বিক্রির কথা বলছেন তা জানা নেই দাবি করে সুপ্রিয় বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে জমির দাম নিয়ে বিতর্ক তোলা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত