Ajker Patrika

বাবা বলতে এই ছবিকেই বোঝে রোজা

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ৪০
বাবা বলতে এই ছবিকেই বোঝে রোজা

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের সমান ৯ বছর বয়স রোজার। গতকাল ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল সাত খুনের ৯ বছর পূর্তি। বাবার মৃত্যুর তিন মাস পর রোজার জন্ম। বন্ধু-সহপাঠী সবার বাবা থাকলেও তার বাবা কেবল ফ্রেমের ছবিতে বন্দী। বাবা বলতে সে শুধু এই ছবিকেই বোঝে।

রোজা সাত খুনের ঘটনায় নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। জাহাঙ্গীর যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক ছিলেন। ঘটনার দিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে স্বপনের সঙ্গে অপহরণ করা হয় জাহাঙ্গীরকেও। পরে অন্যদের সঙ্গে তার লাশও ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যার কালো পানিতে। ক্ষতবিক্ষত সবার লাশ বেঁধে রাখা হয়েছিল ইট আর রশি দিয়ে।

বাবার আদর থেকে সে বঞ্চিত হলেও ছবির বাবাকে রোজা তার আদর থেকে বঞ্চিত করে না। সময় পেলেই চুমো দেয়, মুখে হাত বোলায় আর বুকে জড়িয়ে ছবির বাবাকে স্পর্শ করে। আধো আধো মুখে আজকের পত্রিকাকে রোজা বলে, ‘বাবার আদর কী, আমি জানি না। কখনো আমার বাবাকে দেখি নাই। শুধু ছবি দেখে বড় হইসি। আমার বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে।’

ছবির বাবাকে রোজার আদরবিয়ের মাত্র ১০ মাসের মাথায় স্বামী জাহাঙ্গীরকে হারান নূপুর। বছরের পর বছর একমাত্র কন্যাকে জড়িয়ে বেঁচে আছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নূপুর বলেন, ‘বিয়ের ১০ মাস পর স্বামীকে হারাইসি। তার তো কোনো দোষ ছিল না। সে চাকরি করত, আমাদের জন্য উপার্জন করত। কেন তাকে অকালে জীবন দিতে হলো? তার আশা ছিল আমাদের সংসারে মেয়েসন্তান আসবে। সেই মেয়েকে দেখে যেতে পারল না। তাকে হারিয়েছি আজ ৯ বছর। আমার মেয়েটারও আগামী মাসে ৯ বছর পূর্ণ হবে। হত্যার এত দিন পরও আসামিদের শাস্তি হচ্ছে না।’

কথার মাঝেই রোজাকে বুকে জড়িয়ে নূপুর বলেন, ‘আমার মেয়ে এখনো জিজ্ঞাসা করে, তার বাবা দেখতে কেমন? বাবা কেমন মানুষ ছিল? আমি বুকে কষ্ট চাপা দিয়ে সান্ত্বনা দেই। আমার বাচ্চা বাবার আদর পায় না। সরকার এত ভালো কাজ করে, তাহলে এই আসামিদের কেন ৯ বছরেও ফাঁসি হচ্ছে না? এত দিন তো লাগার কথা না!’

ছেলেকে হারানোর বেদনা জাহাঙ্গীরের মাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই ভেঙে পড়েছে তাঁর স্বাস্থ্য। মৃত্যুর আগে ইচ্ছা কেবল হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যাওয়ার। জাহাঙ্গীরের মা বলেন, ‘হুনলাম ফাঁসির অর্ডার অইসে। এখন পর্যন্ত হেই ফাঁসি অইতে দেখলাম না। আমার পুতের তো অপরাধ ছিল না, অয় ড্রাইবার আছিল। অপরাধ করলে নেতারা করছে, আমার পোলায় তো কিছু করে নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার নাতনিটা বাপের ছবি দেইখা কান্দে। বুঝ দিয়া দিয়া রাখি এত দিন। আসামি গো ফাঁসি হইসে এইটা যদি শুনতাম, তাইলেও মনরে বুঝ দিতে পারতাম। এই ফাঁসি দেইখা মরতে পারলে শান্তি পাইতাম। আমার পোলা যদি গুন্ডামি করত, মারামারি করত, তাইলেও কইতাম মারামারি করতে গিয়া মরছে। বিচার পাইলাম না আর আশা রাখি কই?’

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নাসিকের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে নিখোঁজ সাতজনের লাশ। 

নিহত ব্যক্তিরা হলেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিম হোসেন।

বাবা বলতে রোজা শুধু এই ছবিকেই বোঝেহত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‍্যাবের চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

একই সঙ্গে আরও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট উচ্চ আদালত ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন এবং ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

জন্মের পর প্রথম রোজাকে কোলে নিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। রমজান মাসে জন্ম নেওয়ায় মেয়র তার নাম রেখেছিলেন রোজা। নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুরকে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে চাকরি দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন আইভী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত