Ajker Patrika

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বিষাক্ত রাসায়নিক নিক্ষেপ করায় স্বামী আটক

মাদারীপুর প্রতিনিধি
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বিষাক্ত রাসায়নিক নিক্ষেপ করায় স্বামী আটক

মাদারীপুরের ঝাউদীতে যৌতুকের টাকা না পেয়ে সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে বিষাক্ত রাসায়নিক তরল পদার্থ নিক্ষেপ করেছে তাঁর স্বামী। শনিবার রাত ১০টার দিকে ওই গৃহবধূকে আহত অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী ও শ্বশুরকে আটক করেছে সদর থানা-পুলিশ। 

ভুক্তভোগী মীম আক্তার ঝাউদী ইউনিয়নের কালাইমারা গ্রামের ইউনুস মীরের মেয়ে

এদিকে গৃহবধূর পরিবারের দাবি, যৌতুকের কারণে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে সদর হাসপাতালের মেডিকেল চিকিৎসক বলেছেন, বিষাক্ত রাসায়নিক কেমিক্যাল জাতীয় তরল পদার্থ নিক্ষেপ করায় শরীরের চামড়ায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে সে এখন আশঙ্কামুক্ত। 

এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানায়, এ বছরের জানুয়ারি মাসে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদী ইউনিয়নের মাদ্রা গ্রামের সোবাহান শেখের ছেলে সুমন শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের কালাইমারা গ্রামের ইউনুস মীরের মেয়ে মীম আক্তার। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময়ে যৌতুক দাবি করে আসছিল। বিয়ের দুই মাস পরে সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বাবার বাড়ি চলে আসেন মীম। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয়নি সুমন ও তাঁর পরিবার। কয়েকবার মীমের বাবার বাড়িতে এসেও শারীরিক নির্যাতন করে সুমন শেখ। বিষয়টি স্থানীয়রা কয়েকবার মীমাংসা করার চেষ্টাও করেন। 

ভুক্তভোগীর মা মাহিনুর বেগম জানান, শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে আসে সুমন ও তাঁর বাবা সোবাহান শেখ। পরে সুমন মীমকে ডেকে ঘরের পেছনে নিয়ে যায়। তখন বোতলে থাকা এডিস পানি মীমের উপর নিক্ষেপের চেষ্টা চালায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাঁর হাত ও মুখমণ্ডলে অ্যাসিড ছিটে যায়। পরে মীমের চিৎকারে আমরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। তখন পালিয়ে যাওয়ার সময় মীমের শ্বশুর সোবাহান শেখকে আটক করা হয়। পরে সদর থানা-পুলিশকে খবর দিলে তারা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সুমনকে আটক করে। 

এ দিকে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন মীমের স্বজন ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ। 

স্থানীয় মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ‘হতদরিদ্র বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান মীম সাড়ে ৭ মাসের গর্ভবর্তী। আর সুমন পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। বেশ কিছু দিন ধরে সুমন মীমের উপর অত্যাচার শুরু করে। পেটের সন্তান নষ্ট করারও পায়তারা করে সে। এ নিয়ে এলাকায় মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া উচিত।’ 

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মনিরুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা নিয়ে ভর্তি হওয়া মীমকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটা এডিস কেস না। বিষাক্ত রাসায়নিক কেমিক্যাল তরল জাতীয় কোন পদার্থ নিক্ষেপ করা হয়েছে। যে কারণে শরীরের কিছু অংশ হালকা দাগ হয়ে গেছে। আর এডিস হলে সেখানে কালচে দাগ হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হতো। তারপরেও ঊর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, তারা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবেন। আপাতত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।’ 

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিঞা জানান, ‘খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক ফোর্স নিয়ে হাসপাতালে যাই। তাদের মৌখিক কথায় সুমন ও তাঁর বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। যদি গৃহবধূর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর গৃহবধূকে এডিস নাকি অন্য কিছু নিক্ষেপ করেছে, তার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেটের উপর নির্ভর করতে হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত