Ajker Patrika

চাকরি আর বিয়ের জন্য মালয়েশিয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গা তরুণীরা!

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ২০: ২০
Thumbnail image

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের একটি আশ্রয়শিবিরের তরুণী ফাতেমা খাতুন (১৬)। এই তরুণী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিয়ে করতে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। সেখানেই এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগে থেকেই ওই যুবক মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সেখানে পৌঁছালেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে।

তাঁর মতো আরও কয়েক তরুণী মালয়েশিয়ায় বিয়ে ও চাকরি করতে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে পাড়ি জমাচ্ছিল। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা তরুণী ও শিশুরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এমন তথ্য দিয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গত তিন-চার বছর ধরে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল দিয়ে প্রায় সময় মাছ ধরার ট্রলারে অবৈধ পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিক উদ্ধার হয়ে আসছে। অবৈধ পথে তাদের কাছে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় গিয়ে অনেকেই জেল খাটছে। এই সাগরপথে মাছ ধরার ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে দালালদের নির্যাতন ও সাগরে ডুবেও অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। সম্প্রতি সাগরপথে মানব পাচারের চক্রটি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

জানা যায়, গত ২২ মার্চ সাগরপথে পাচারকালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে ১৪৯ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ জন নারী, ২৩ জন শিশু ও ৪৮ জন পুরুষ রয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের দালাল চক্র উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে জড়ো করে পাচার করছিল। এই বাবদ দালালেরা তাদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছে। এরপর গত ২৪ মার্চ কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ বঙ্গোপসাগরের টেকনাফের শামলাপুর উপকূল থেকে আরও ৫৭ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে। এ সময় র‍্যাব দুজন দালালকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের মে মাসে আরও ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া সম্প্রতি ভারতে পাচারকালে সাতজন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে র‍্যাব। 

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালালেরা তাদের ১০-১২ দিন সাগরে ভাসিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে নামিয়ে দেয়। সেখানে নেমে এটি কী মালয়েশিয়া না বাংলাদেশ তাও জানে না তারা। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। 

মোহাম্মদ ইসলাম নামের এক রোহিঙ্গা শিশু বলেছে, তার বড় ভাই মালয়েশিয়ায় থাকে। সেখানে দালাল ধরে তার ভাই তাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। 

এদিকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ছাইরাখালী গ্রামের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার (৩০) বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আকবর সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যান। এখন তিনি ফেরত আসতে চান, কিন্তু পাসপোর্ট করাতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। 

ফাঁসিয়াখালীর চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে আকবরের মতো অনেক মানুষ বিপদে পড়েছেন। 

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি ও বিয়ের প্রলোভনে ফেলে দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের পাচার করছিল।’

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-এর অধিনায়ক মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, মানব পাচারকারী চক্র মিয়ানমারের বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিবিরের যুবক-যুবতীদের টার্গেট করে তাদের বিভিন্ন বিদেশে পাচার করছে। এই চক্রের মূল হোতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত